Advertisement
E-Paper

প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে ওঁরা একে অন্যের ভাষা বোঝেন অনুভবের স্পর্শে

নবদ্বীপের পলি পাল আর হাবড়ার গোপাল সিকদারের প্রেমের গল্প অনেকটা সিনেমার মতো। গত ২৪ নভেম্বর নবদ্বীপে রাসের আড়ংয়ের দিন নিজের বাড়ির সামনে থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন ফাঁসিতলা ঘাটের বাসিন্দা বছর পঁচিশের তরুণী পলি

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:১৪
গোপাল ও পলি

গোপাল ও পলি

এক জন ভাল করে কথা বলতে পারেন না। অন্য জনের পৃথিবী বাঙ্ময় হলেও অর্থহীন। কেননা, তিনি মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন। তবু দু’জনের দেখা হল। তাঁরা পড়ে ফেললেন একে অন্যের চোখের ভাষা। গোছানো শব্দের কথামালার অভাব পূরণ করল অনুভবের জগৎ। পরস্পরকে বুঝে নিলেন। তার পর এক দিন বেড়িয়ে পড়লেন নিজেদের পৃথিবীর খোঁজে।

নবদ্বীপের পলি পাল আর হাবড়ার গোপাল সিকদারের প্রেমের গল্প অনেকটা সিনেমার মতো। গত ২৪ নভেম্বর নবদ্বীপে রাসের আড়ংয়ের দিন নিজের বাড়ির সামনে থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন ফাঁসিতলা ঘাটের বাসিন্দা বছর পঁচিশের তরুণী পলি। মানসিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মেয়ের খোঁজে থানা-পুলিশ করেওই পরিবার। তার প্রায় দশ দিন পর যখন খবর মিলল পলির, তত দিনে তিনি হাবড়ার নগরউখড়ার বাসিন্দা গোপাল সিকদারের বিবাহিত স্ত্রী। মানসিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মেয়েটির স্বামী গোপালও ভাল করে কথা বলতে পারেন না। হাবড়ার ইন্দ্রপল্লির বাসিন্দা ওই যুবক পেশায় ভ্যানচালক।

মেয়ের খবর পেয়ে পলির বাড়ির লোক এবং প্রতিবেশিরা হাবড়ায় গিয়ে হাজির হন। তাঁরা দেখেন, নবদম্পতি গুছিয়ে সংসার পেতেছে। প্রথমে মেয়ের বাবা-মা বিষয়টিতে অসন্তুষ্ট থাকলেও আপ্যায়ন করে সে রাগে জল ঢেলেছেন মেয়ে-জামাই।

গোটা ঘটনায় রীতিমতো অবাক এলাকায় লোক। পঞ্চাশ শতাংশ মানসিক প্রতিবন্ধকতা থাকা পলির সঙ্গে যাঁর বিয়ে হয়েছে, সেই গোপাল আবার ঠিকমতো কথাই বলতে পারেন না। এমন দু’জন মুখে কথা না ফোটা মানুষের মধ্যে কবে, কী ভাবে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠল, কী ভাবেই বা তাঁরা বিয়ে করে সংসার করার কথা ভাবলেন এবং তা করেও ফেললেন, তা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না খোদ পলির মা-বাবাই।

পলি নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁর বাবা বলরাম পাল পুলিশের কাছে করা ডায়েরিতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন— তাঁর অবোধ মেয়েকে কেউ ফুঁসলে নিয়ে গিয়েছে। যদিও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছিল, ওই দিন সকালে এলাকার অনেকেই পলিকে এক জন যুবকের সঙ্গে গঙ্গার ঘাটে ঘুরতে দেখেছিলেন। তার পরই এসে পৌঁছেছে এই বিয়ের খবর।

পলির খোঁজ কেমন করে পাওয়া গেল? জবাবে তাঁর মা অনিমা পাল জানান, “ক’দিন আগে আমাদের বাড়িতে এক জন ফোন করে জানান আমার মেয়ে হাবড়ায় আছে। সেখানে তার বিয়ে হয়েছে। তিনি নিজেকে পাত্রের দিদি বলে পরিচয় দেন।’’ পর দিন সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ওই ফোনের বয়ান সত্য।

তবে শুধু পলির পরিবারই নয়, গোপালের পরিবারও জানতে পারেনি এমন রোমহর্ষক আরেকটি প্রেমের গল্প। হঠাৎ এক দিন ছেলের সঙ্গে এক সুন্দরী মেয়েকে দেখে কিছুটা অবাকই হয়ে যান তাঁরা। পরে ছেলে আকারে-ইঙ্গিতে সব বুঝিয়ে বললে তাঁরাই স্থানীয় মন্দিরে বিয়ের ব্যবস্থা করেন।

পলির জেঠিমা ছবি পাল বলেন, “গোপাল কথা বলতেই পারে না। জড়িয়ে যা বলে, তা আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি। অথচ, দেখলাম আমাদের মেয়ে দিব্যি বুঝতে পারছে ওর কথা। মনে হল ভালই আছে।”

প্রতিবেশী সুদাম সাহা জানান, নবদ্বীপে এসে কোনও ভাবে গোপালের সঙ্গে পলির পরিচয় হয়। গোপনে ওঁরা এই সম্পর্ক গড়ে তোলেন, যার পরিণতি মধুরেণ সমাপয়েৎ।

Marriage Specially Abled person
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy