Advertisement
E-Paper

একলা চলোর হজ যেন মুক্তির যাত্রা সামসুন্নেহারের

সৌদি আরবে তিন বছর আগেই চালু হয়েছিল নিয়মটা। ভারতেও এ বার ‘মেহরাম’ অর্থাৎ পুরুষ অভিভাবক ছাড়াই হজযাত্রার অনুমতি পেয়েছেন মেয়েরা।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪৫
হজযাত্রী সামসুন্নেহার বেগম। ছবি: রণজিৎ নন্দী

হজযাত্রী সামসুন্নেহার বেগম। ছবি: রণজিৎ নন্দী

রাঁধার পরে খাওয়া, আবার খাওয়ার পরে রাঁধা। চক্রাকারে ঘোরে তাঁর রোজকার দিনগুলো। কিন্তু ইদানীং ভোর হলে ঘরের বাইরে এসে লম্বা শ্বাস নিয়ে ৬০ পেরোনো সামসুন্নেহার বেগম গুনছেন, আর ক’টা দিন বাকি! কাজের ফাঁকে তালিকা তৈরি করছেন, কোন কোন জরুরি জিনিস সঙ্গে নিতে হবে।

সৌদি আরবে তিন বছর আগেই চালু হয়েছিল নিয়মটা। ভারতেও এ বার ‘মেহরাম’ অর্থাৎ পুরুষ অভিভাবক ছাড়াই হজযাত্রার অনুমতি পেয়েছেন মেয়েরা। নতুন নিয়মে ৪৫ বছরের বেশি বয়সী মহিলারা চার জনের ছোট ছোট দল তৈরি করে হজে যেতে পারবেন।

প্রথম দফার এই যাত্রায় নিজের নাম লিখিয়েছেন সামসু্ন্নেহার। বাড়িতে ছেলেরা ‘একা’ যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করলে তাঁর একটাই উত্তর, ‘‘বয়স ছাড়া তোদের আর কী আছে যা আমার নেই? বিপদ যদি ঘটে তোরা থাকলেও আটকাবে না।’’ সত্যি ভয় করছে না? বজবজ সন্তোষপুরের বাসিন্দা সামসুন্নেহার হেসে বলেন, ‘‘একদমই না। আমি যে পারি সেটা প্রমাণ করার সুযোগই পাইনি এত দিন। ’’

আরও পড়ুন: বাবাকে খুন করতে অনলাইনে বিস্ফোরক অর্ডার, হাজতে ছেলে

রাজ্য হজ কমিটিতে ইতিমধ্যেই সামসুন্নেহারের মতো বহু আবেদন জমা পড়েছে। কলকাতা ও তার আশপাশে তো বটেই দূর-দূরান্তের জেলা থেকেও আবেদন আসছে। কমিটি সদস্যরা জানাচ্ছেন, এতটা যে সাড়া পড়বে তা তাঁরা ভাবেননি।

মুর্শিদাবাদের লালগোলার খাদিজা বিবির স্বামী মারা গিয়েছেন ২০০৫ সালে। এর আগে মেয়েদের দলে দিল্লি, অজমের বেড়াতে গিয়েছেন। কিন্তু দেশের বাইরে? ‘‘ভাবতেই পারতাম না। ধর্মের টানেই যাচ্ছি। কিন্তু বাড়ির বাইরে সব দায়িত্ব আমার নিজের, এটাও খুব বড় কথা।’’ একটাই আফশোস, ‘‘আমার বয়স ৬৫। সুযোগটা আরও আগে পেলে ভাল হতো।’’

নিজের মতো করে ভাবার অধিকার থাকবে ভেবে উত্তেজিত মুর্শিদাবাদের রাধাকান্তপুরের মর্জিনা বিবিও। তাঁর মনে পড়ে যাচ্ছে, ‘‘মেহরাম পাওয়া যায়নি বলে কত মহিলার হজে যাওয়ার ইচ্ছাটা পূরণ হয়নি। মারাও গিয়েছেন অনেকে।’’

তবে নয়া নিয়ম নিয়ে সকলেই যে খুশি, তা নয়। রাজ্য হজ কমিটির সদস্য এ কে এম ফারহাদ যেমন বলে দিলেন, ‘‘ব্যাপারটা ঠিক হল না।’’ কেন? তাঁর যুক্তি, ‘‘ধরুন আমার মা কিংবা স্ত্রী হজে যাবেন একা। সব ঠিকঠাক থাকলে অসুবিধা নেই। কিন্তু যদি তাঁরা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তা হলে কী হবে? মেহরাম না থাকলে কে দেখভাল করবে?’’ কিন্তু যদি মেহরামই অসুস্থ হয়ে পড়তেন কী হতো? জবাব মেলেনি।

মুর্শিদাবাদের গোকর্ণের নাজমা বিবি কিংবা মেটিয়াবুরুজের ফতেমা বিবিরও সেটাই জিজ্ঞাস্য! মেহরাম কি অসুস্থ হতে পারেন না? নাজমা-ফতেমারা নিজেদের পাড়া বা আত্মীয়স্বজনের মধ্যে থেকে তিন জন মহিলাকে সঙ্গী করে হজে যাচ্ছেন। ওঁদের প্রশ্ন, ‘‘কেন ৪৫ বছরের কমবয়সিরা এই সুযোগ পাবেন না?’’ মহিলাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের সম্পাদক রহিমা খাতুন মেয়েদের এই উৎসাহ দেখে উচ্ছ্বসিত। বললেন, ‘‘নিজের মতো করে বাঁচতে দেওয়ার পথে আর এক ধাপ এগোলাম আমরা।’’

Samsunnehar Begum Hajj 2018 Hajj Pilgrimage
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy