E-Paper

প্লাস্টিকমুক্ত মেলা হবে গঙ্গাসাগরে

নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহেই মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাগরে আসতে পারেন বলে প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। জোরকদমে চলছে মেলার প্রস্তুতি।

সমরেশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:২৭
An image of Gangasagar Mela

কপিলমুনি মন্দিরের সংলগ্ন ২ নম্বর স্নানঘাট নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।

মুড়িগঙ্গা নদীতে নতুন করে জেগে ওঠা চর গঙ্গাসাগর মেলার আগে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশাসনের। ওই চর কাটতে ফরাক্কা থেকে ড্রেজ়িং মেশিন আনছে জেলা প্রশাসন। দু’-এক দিনের মধ্যেই ওই চরের মাটি কাটার কাজ শুরু হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। বুধবার নবান্নে গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহেই মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাগরে আসতে পারেন বলে প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। জোরকদমে চলছে মেলার প্রস্তুতি। বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রীরা একাধিক বার মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেছেন। জেলা প্রশাসন আধিকারিকদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। জেলা প্রশাসনের দাবি, এ বছর প্রায় ৪০ লক্ষ পুণ্যার্থী মেলায় আসতে পারেন।

পরিবেশবান্ধব মেলা করার লক্ষ্যে আবারও প্লাস্টিক বর্জনের উপরে জোর দিচ্ছে গঙ্গাসাগর-বকখালি উন্নয়ন পর্ষদ। বৃহস্পতিবারই এই কর্মসূচির সূচনা করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণ থেকে প্লাস্টিক সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। মেলা চলাকালীন সব রকম প্লাস্টিকের ব্যাগ পুরোপুরি বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পর্ষদের আধিকারিক নীলাঞ্জনা তরফদার এ দিন বলেন, “এ বছরও সম্পূর্ণ প্লাস্টিকমুক্ত মেলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। মেলাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রচার এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। মেলা চত্বর পরিষ্কার করার জন্য তিন হাজার সাগর-প্রহরী থাকবেন। এ ছাড়া, পুণ্যার্থীদের বিনামূল্যে শালপাতার থালা-বাটি বিতরণ করা হবে। মেলার সমস্ত দোকানেও তা দেওয়া হবে।”

পূর্ণিমা ও অমাবস্যার কটালে কপিলমুনি মন্দিরের কাছেই সমুদ্রতটে ধস নেমেছিল। নতুন করে সমুদ্রতট বানানো হয়েছে। তীর্থযাত্রীদের থাকার জন্য ‘বাফার জ়োন’ তৈরির কাজ চলছে। মন্দিরে নতুন রঙের পোচ পড়েছে। কচুবেড়িয়া বাস স্ট্যান্ড ও গঙ্গাসাগর বাস স্ট্যান্ড থেকে মেলা চত্বরে ১ থেকে ৫ নম্বর রাস্তা আলোয় সেজে উঠেছে। ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি রাখা হয়েছে।

এ দিকে বুধবারের বৈঠকে মুড়িগঙ্গায় নতুন চরের বিষয়টি শুনে মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন। ডুবে যাওয়া জাহাজটি তোলার জন্য সেনাবাহিনীর সাহায্য নেওয়া যায় কি না, তা-ও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর দশেক আগে মুড়িগঙ্গা নদীতে একটি বাংলাদেশি জাহাজ ডুবে যায়। সেই ডুবে যাওয়া জাহাজটিকে কেন্দ্র করেই কচুবেড়িয়ার কাছে জেগে উঠেছে চর। গত বছর চরটি নজরে আসে। জাহাজটি তোলার চেষ্টাও হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।

মুখ্যমন্ত্রীকে বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, এই ধরনের কাজ করার জন্য ড্রেজ়িং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া-সহ বেশ কিছু সংস্থা রয়েছে। ড্রেজ়িং কর্পোরেশনকে চিঠি লিখে আবেদন করা যেতে পারে বলে মুখ্যমন্ত্রীকে জানান তাঁরা। সব শুনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, মেলা শেষ হলে জাহাজটি তোলা হবে। আপাতত চরের জন্য যাতে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে, তা দেখার নির্দেশ দেন তিনি। রাতে যাতে চরটি বোঝা যায়, তার ব্যবস্থা করতেও বলা হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, মেলার আগে আপাতত চরের পলি-বালি সরানোর ব্যবস্থা হবে। জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো ফরাক্কা থেকে বিশেষ ড্রেজ়ার নিয়ে আসা হচ্ছে। এই ড্রেজ়ার দিয়েই ওই চরের পলি-বালি সরানো হবে। মেলার সময়ে ভেসেল ও লঞ্চ চলাচলে সমস্যা হবে না। আগামী দু’-এক দিনের মধ্যে কাজ শুরু হয়ে যাবে। পাঁচ দিনেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।”

সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী তথা সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মেলায় সব ধরনের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। নতুন করে সমুদ্রতট তৈরি করা হয়েছে। প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Gangasagr Mela plastic free zone

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy