Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Toto

টোটো চালিয়ে সংসারের হাল ধরেছেন উত্তরা

চালকের আসনে: বাজারে সওয়ারির অপেক্ষায় উত্তরা মহুলি। নিজস্ব চিত্র

চালকের আসনে: বাজারে সওয়ারির অপেক্ষায় উত্তরা মহুলি। নিজস্ব চিত্র

অর্ঘ্য ঘোষ 
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:৫২
Share: Save:

মাস চারেক আগে স্বামীকে হারিয়ে আকাশ ভেঙে পড়েছিল উত্তরা মহুলির মাথায়। দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ দূরের কথা, কী করে তাদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত যোগাবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি। আত্মীয়স্বজনেরা মুখ ফিরিয়েছেন। স্বামীর চিকিৎসায় ঘটিবাটিটুকুও বিকিয়ে গিয়েছে। এক ছটাক জমিজমা বা অন্য আয়ের সংস্থান নেই। থাকার মধ্যে মাথা গোঁজার জন্য রয়েছে একটি ছিটেবেড়ার চালাঘর ও ঋণ নিয়ে কেনা স্বামীর টোটো। শেষ পর্যন্ত ছেলেদের মানুষ করতে টোটো নিয়ে পথে নামেন তিনি।

সাঁইথিয়ার ভগবতীপুর মহুলিপাড়ায় বছর তিরিশের উত্তরাদেবীর বাড়ি। স্বামী খোকন মহুলি ছিলেন টোটো চালক। বছর দু’য়েক আগে ব্যাঙ্কের ঋণ নিয়ে স্বামীকে টোটো কিনে দেন তিনি। মাস চারেক আগে লিভারের অসুখে মৃত্যু হয় খোকনের। তখন মাথার উপরে অভিভাবক বলতে কেউ নেই। তাই কী করে ছেলেদের মানুষ করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। নবম শ্রেণির ছাত্র বড় ছেলে অসীম মূক ও বধির। ছোটো অনিমেষ ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। অষ্টম শ্রেণি পাশ উত্তরাদেবীর অন্য কোনও কাজ জানা ছিল না। কেবল স্বামীর কাছে টোটো চালানো শিখেছিলেন। সেটাই কাজে লেগে যায়। সংসারের হাল ধরতে স্বামীর টোটো চালাতে শুরু করেন তিনি।

ভোর ৪টে নাগাদ উঠে সংসারের কাজ, রান্নাবান্না সেরে রেখে টোটো নিয়ে চলে যান আমোদপুর বাজার। সেখান থেকে ভাড়া নিয়ে সাঁইথিয়া, সিউড়ি, বোলপুর ছোটেন। দুপুরে বাড়ি ফিরে ছেলেদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করে ফের তিনটে নাগাদ আমোদপুরে হাজির হন। সন্ধ্যায় ফিরে আবার রান্নাবান্না, সংসারের কাজে মন দেন। দৈনিক গড়ে ২৫০-৩০০ টাকা আয় হয়। এখন আর অতটা দুশ্চিন্তা নেই।

শুরুটা অবশ্য এত সহজ ছিল না। তিনি জানিয়েছেন, বিপদের দিনে অধিকাংশ আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী মুখ ফিরিয়ে নেন। উত্তরাদেবীর কথায়, ‘‘কিন্তু পেটের দায়ে যখন আমি টোটো চালানো শুরু করি কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। তুচ্ছ তাচ্ছিল্য, টিকাটিপ্পনী করতে ছাড়েননি। ব্যাপারটা পুলিশ-প্রশাসন পর্যন্ত গড়ায়। শেষ পর্যন্ত শাসক দলের নেতাদের হস্তক্ষেপে টোটো নিয়ে পথে নামতে সমর্থ হই। প্রথম দিকে মহিলা বলে সাহস করে কেউ আমার টোটোতে চাপতে চাইতেন না। এখন সেই ধারণা বদলেছে।’’ আমোদপুর এলাকায় টোটো–অটোরিকশা রয়েছে প্রায় ৪ শতাধিক। চালকদের মধ্যে মহিলা একমাত্র উওরাদেবী। স্থানীয় কুচুইঘাটার জবা মুখোপাধ্যায়, দেবিকা দত্তরা বলছেন, ‘‘এখন কোথাও যেতে হলে আমরা আগে উওরার টোটোর খোঁজ করি। ওর লড়াই আমাদের অনুপ্রেরণা জাগায়।’’ উত্তরাদেবীর ছোট ছেলের কথায়, ‘‘কোনও কাজ ছোট নয়, তা আমরা বইয়ে পড়েছি। আমাদের মা সেটা করে দেখিয়েছে। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আমরা মায়ের দুঃখ দূর করতে চাই।’’

সংশ্লিষ্ট সাঁইথিয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি প্রশান্ত সাধু ও তৃণমূলের আমোদপুর অঞ্চল কমিটির সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘উত্তরাদেবীর টোটো চালানো নিয়ে প্রথমদিকে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সেটা আমরা সমাধান করে দিয়েছি। তাঁর লড়াইয়ে সব রকম ভাবে পাশে আছি। তার ছেলের পড়াশোনার ব্যাপারটাও দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Toto Sainthia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE