Advertisement
E-Paper

থাকেন পাকা বাড়িতে, পেলেন ঘর গড়ার টাকা

তালিকার একটি নাম সেন্টু সাহা। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে পরে তৃণমূলে যোগ দেন। সুতোর কারবার। পাকা দোতলা বাড়ি। মাল মজুত রাখার জন্য একাধিক গুদাম। তিনি পেয়েছেন টাকা। প্রতিক্রিয়া জানার জন্য বার বার ফোন করা হলেও সেন্টু ধরেননি।

মনিরুল শেখ

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩৮

গরিবের মাথার উপরে ছাউনি আর চার দেওয়াল তোলার যে প্রকল্প, নেতাদের কল্যাণে তার টাকাই কুক্ষিগত হয়েছে সম্পন্নদের। তাঁদের কারও আছে পাঁচিল ঘেরা বাহারি বাড়ি, কারও রমরমা কারবার।

নদিয়ার হরিণঘাটায় নগরউখড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে কারা বাড়ি করার টাকা পেয়েছেন, তা জানতে চেয়ে তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন জমা পড়েছিল ব্লক অফিসে। ক’মাস আগে হরিণঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেস সদস্য অনিল ঘোষ ওই আবেদন করেন। ব্লক থেকে ২০১৭ সালে টাকা পাওয়া ৩৬ জনের নামের তালিকা দেওয়া হয়। আর, তা দেখেই চোখ কপালে উঠেছে এলাকার লোকজনের।

তালিকার একটি নাম সেন্টু সাহা। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে পরে তৃণমূলে যোগ দেন। সুতোর কারবার। পাকা দোতলা বাড়ি। মাল মজুত রাখার জন্য একাধিক গুদাম। তিনি পেয়েছেন টাকা। প্রতিক্রিয়া জানার জন্য বার বার ফোন করা হলেও সেন্টু ধরেননি।

আর এক জন শম্পা সাহা। তাঁদের মালপত্র মজুতের ব্যবসা। চাল বাছাই করার যন্ত্রও রয়েছে। মেদেরমাঠ পশ্চিমপাড়ায় তাঁদের পাঁচিল ঘেরা দালানকোঠা। স্বামী শ্যাম সাহা অবশ্য প্রশ্ন শুনেই ফোন কেটে দেন।

আরও পড়ুন: সিন্ডিকেটে বিদ্ধ বার্নপুর

তালিকায় নাম রয়েছে দেবরাজ দেবনাথ, প্রিয়বালা পাল, শোভা আচার্যদেরও। এঁদের সকলেরই পাকা বাড়ি আছে। দেবরাজ কিছু দিন আগে পঞ্চায়েত দফতরে চাকরি পেয়েছেন। এলাকার এক তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। প্রিয়বালার স্বামী হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করেন।

গীতাঞ্জলি প্রকল্প

কারা পান

• মাসে ৬ হাজার টাকা বা তার চেয়ে কম আয়।

• বিপিএল তালিকাভুক্তদের অগ্রাধিকার।

কত পান

• সমতলে বাড়ি পিছু ৭০ হাজার।

• পাহাড়ি এলাকা, সুন্দরবনে বাড়ি পিছু ৭৫ হাজার টাকা।

এমন নয় যে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে টাকা পেতে হলে দারিদ্রসীমার নীচে থাকতে হবে বা বিপিএল তালিকায় নাম থাকতে হবে। কিন্তু গরিব মানুষের ঘর করে দেওয়াই যে লক্ষ্য, তাতে সন্দেহ নেই। কে ‘গরিব’ তা অবশ্য নির্ধারণ করেন এলাকার নেতারা। পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ও বিধায়ক-সাংসদেরা তালিকা চূড়ান্ত করেন। কিছু ক্ষেত্রে গ্রাম পঞ্চায়েতর সুপারিশও নেওয়া হয়। যাঁদের নাম তালিকায় ঢোকে, তাঁরা দুই কিস্তিতে ৭০ হাজার টাকা করে পান। গৃহনির্মাণে শ্রম দেওয়ার জন্য একশো দিনের কাজের প্রকল্পেও পান প্রায় ১৬ হাজার। সঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও এই টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সাত-আটটি পরিবারের বিরুদ্ধে। চালচুলোহীন লোকেদের বাদ দিয়ে তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি নির্বিচারে দলের লোকেদের নাম ঢুকিয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।

হরিণঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শঙ্কর দেবনাথের এখন আর মনে পড়ছে না, কী ভাবে ওই সব নাম ঢুকেছিল। তিনি বলেন, ‘‘বিডিও-র সঙ্গে কথা বলে দেখব।’’ তালিকা তৈরির সময়ে যিনি বিডিও ছিলেন, তিনি বদলি হয়ে গিয়েছেন। হরিণঘাটার তৃণমূল বিধায়ক নিলীমা নাগ মল্লিকের বক্তব্য, ‘‘স্থানীয় স্তর থেকে যাঁরা যেমন নাম পাঠিয়েছেন, সেগুলি সুপারিশ করে দিয়েছি। এর বেশি কিছু জানি না।’’

Gitanjali housing scheme TMC Leaders State Government গীতাঞ্জলি প্রকল্প Ruling Party
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy