Advertisement
E-Paper

এখনই দেশে ফিরতে নারাজ শুভমেরা

চার বছর ধরে শুভম চিনের বেজিং-এর বাসিন্দা। চিনের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল সিসিটিভিতে আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতা বিভাগে কর্মরত।

দয়াল সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২০ ০০:৪২
বোলপুরের ভুবনডাঙার বাড়িতে শুভম পালের বাবা-মা, (ইনসেটে) সস্ত্রীক শুভম। নিজস্ব চিত্র

বোলপুরের ভুবনডাঙার বাড়িতে শুভম পালের বাবা-মা, (ইনসেটে) সস্ত্রীক শুভম। নিজস্ব চিত্র

আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। নতুন এই ভাইরাসের হানায় ত্রস্ত গোটা দুনিয়া। চিনের উহান প্রদেশেই প্রথম আতঙ্কের সূত্রপাত। মৃত্যু হয়েছে ৮০ জনেরও বেশি মানুষের। আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। তবুও আতঙ্কিত হয়ে চিন ছেড়ে পালিয়ে দেশে ফেরার কোনও মানে নেই মনে করছেন সংবাদমাধ্যমের কর্মী তথা বোলপুরের ভুবনডাঙার বাসিন্দা শুভম পাল।

চার বছর ধরে শুভম চিনের বেজিং-এর বাসিন্দা। চিনের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল সিসিটিভিতে আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতা বিভাগে কর্মরত। তিনি শুধু নন, সঙ্গে রয়েছে ওঁর স্ত্রী ঋতুপর্ণা আইন। দেশে মা-বাবা পরিজনেরা চিন্তায় থাকলেও এই মুহূর্তে ভয়ে দেশে ফেরার কেন যুক্তি নেই বলে ফোনে আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন শুভম। শুভমের কথায়, ‘‘অহেতুক আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক ও সচেতন থাকাই এই রোগ থেকে দূরে থাকার সহজ উপায়। প্রথমত, করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে না এলে এই রোগ হবে না। হাওয়ায় এই রোগ ছড়ায় না। তাই মাস্ক পরে থাকলে বা ভাল করে হাত ধুয়ে মুখে হাত দিলে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা নেই। চিন সরকার যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেই চেষ্টা করে চলেছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘২০০৩, ২০০৪ সালের অভিজ্ঞতা থেকে চিনের চিকিৎসকরা এই রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে অধিক ওয়াকিবহাল। তাই এখানে থাকলেই উপযুক্ত চিকিৎসা সম্ভব।’’

বোলপুরের ভুবনডাঙায় বিবেকানন্দ পথের বাড়িতে শুভমের বাবা রণরঞ্জন পাল, মা অনিতা পাল, ভাই ঋতম পালেরা অবশ্য স্বস্তিতে নেই। বাবা, মা দু’জনেরই বয়স হয়েছে। ভালয় ভালয় ছেলে-বৌমা দেশে ফিরুক চাইছেন তাঁরা। ভাই ঋতম বলছেন, ‘‘বাবার শরীর অসুস্থ। দাদার ফেরার কথা ছিল ফেব্রুয়ারিতে। আসতে পারবে না বলেছে। ও দেশের যা পরিস্থিতি, তাতে চিন্তা স্বাভাবিক।’’ শুভমের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দিল্লির আইআইএমসলি থেকে সাংবাদিকতার পাঠ নেওয়ার আগে বিশ্বভারতীতে পড়াশোনা করেছেন। তার পরে দেশের বিভিন্ন জাতীয় নিউজ চ্যানেল ও পরে অফ্রিকার একটি চ্যানেলে কাজ করার পরে সস্ত্রীক চিন পাড়ি দেন শুভম। স্ত্রী ঋতুপর্না কলকাতার মেয়ে। ওখানেই কর্মরত। ওখানে বাঙালি কমিউনিটিদের নিয়ে গ্রুপ খোলা, বেজিং দুর্গাপুজো, সরস্বতী পুজোর আয়োজনের মতো একাধিক কাজে যুক্ত শুভমরা।

পরিচিত লোকজন ও সংবাদমাধ্যমে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানাচ্ছেন, উহান থেকে প্রায় ১০০০ কিলোমাটার দূরে রয়েছেন। আতঙ্কের জন্য রাস্তা-ঘাট ফাঁকা। তবে বাস, ট্রেন চলছে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে সকলের। বলছে, ‘‘তবে আমার মনে হয়। এখানে তেমন কোনও সমস্যা নেই। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না-যাওয়া, আর বাইরে যেতে হলে মাস্ক ব্যবহার করছি।’’ শুভম জানাচ্ছেন বটে, তবে চিনের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব বলছে, সোমবার পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২,৭৪৪ জন। কী ভাবে এই ভাইরাসের মোকাবিলা করা যায়, তা এখনও বুঝে উঠতে পারছে না চিনের সরকার। যে গতিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে চিনে, তা সামাল দিতে রীতি মতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে সরকারকে। চিন ছাড়িয়ে দ্রুত গতিতে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে তাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, নেপাল, মালয়েশিয়াতেও। সংক্রমণ ছড়িয়েছে ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকাতেও। সংক্রমণের ভয় গ্রাস করেছে ভারতেও। স্বাস্থ্য দফতরও সতর্কতা জারি করেছে। এ রাজ্যেও সতর্কতা জারি হয়েছে।

অরুণানন্দ মুখোপাধ্যায়ের পরিবার। নিজস্ব চিত্র

সেই ভয় শুভমদের শান্তিনিকেতনের বাড়িতেও। অন্য দিকে, নিজের ছেলে, বৌ-নাতি চিনে রয়েছেন বলে একই রকম দুশ্চিন্তায় বোলপুরে ভুবনডাঙার আরও একটি পরিবার। বৃদ্ধ দম্পতি জীবানন্দ মুখোপাধ্যায় ও আরতি মুখোপাধ্যায়দের ছেলে অরুণানন্দ তাঁর স্ত্রী রূপা, নাতি তথাগতরা এখন চিনের সাংহাই প্রদেশের চাংসু-র বাসিন্দা। আতঙ্কিত ওই দম্পতি জানিয়েছেন, চিনের ওই অঞ্চলের একটি কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক অরুণানন্দ। বাবা-মায়ের থেকে দূরে সপরিবার সেখানেই আছেন। ভাল আছেন। নিয়মিত মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

তাতে মোটেই দুঃশ্চিন্তা কাটছে না বাবা-মায়ের। বলছেন, ‘‘ছেলে যাই বলুক টিভি ও সংবাদমাধ্যমে দেখছি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ওদেশে কী ভাবে ছড়িয়েছে। ওরা সুস্থ ভাবে দেশে ফিরুক এটাই চাই।’’

China Novel Coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy