Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ব্যর্থতা ছুঁয়েই সাফল্য আসে, মত ইউসরাদের

শুক্রবার রাতে চন্দ্রযান-২-এর ‘ল্যান্ডার’ বিক্রমের সঙ্গে ইসরোর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হতাশ হয়েছিলেন সকলেই।

ইসরো-র ক্যাম্পাসে ইউসরা আলম (চিহ্নিত)। —ফাইল চিত্র।

ইসরো-র ক্যাম্পাসে ইউসরা আলম (চিহ্নিত)। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৩৪
Share: Save:

ওঁদেরও মন খারাপ হয়েছে। কিন্তু ওঁরা সকলেই মনে করছেন, ব্যর্থতার পথ বেয়েই সাফল্য ধরা দেবে।

শুক্রবার রাতে চন্দ্রযান-২-এর ‘ল্যান্ডার’ বিক্রমের সঙ্গে ইসরোর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হতাশ হয়েছিলেন সকলেই। সে দলে যেমন বর্ধমানের পীরবাহামের কিশোরী ইউসরা আলম রয়েছে, তেমনই রয়েছেন ওই অভিযানের বিজ্ঞানী চন্দ্রকান্ত কুমারের বাবা, হুগলির গুড়াপের বাসিন্দা মধুসূদন কুমার এবং সায়েন্টিস্ট ইঞ্জিনিয়ার তুষারকান্তি দাসের মা, বেলডাঙার সবিতা দাসও। তবে তিন জনেরই বিশ্বাস, এ বার না-হলেও পরে সাফল্য ধরা দেবেই।

বিক্রমের চন্দ্রপৃষ্ঠে নামার দৃশ্য দেখতে গলসির বেলগ্রামের একটি সর্বভারতীয় ইংরেজিমাধ্যম স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী ইউসরা শুক্রবার পৌঁছেছিল ইসরোর অডিটোরিয়ামে। ইসরোই তাকে নিয়ে গিয়েছিল। ছোটবেলা থেকে যে মহাকাশ অভিযান পড়ে বড় হয়েছে ইউসরা, তার সাফল্যের মুহূর্ত দেখার সুযোগ এ ভাবে মিলবে ভাবেনি ওই ছাত্রী। ইসরো-র অডিটোরিয়ামের দু’ধারের দেওয়াল জোড়া প্রজেক্টরে ভেসে উঠছিল চন্দ্রযানের নানা খুঁটিনাটি, ছবি। নির্দিষ্ট জায়গায় বসার পরেও তাই দেখা শেষ হচ্ছিল না ইউসরার।

তাল কাটল রাত ১টা ৫৫ মিনিটে। ইসরো জানাল— বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। শনিবার সকালে ফোনে ইউসরা বলে, “সবাই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলেন। কারও মুখে হাসি ছিল না।’’ তবু, মহাকাশ-বিজ্ঞানী হতে চাওয়া মেয়েটি প্রত্যয়ের সুরে বলে, ‘‘সাফল্যের পথ ব্যর্থতা ছুঁয়েই।’’

একই সুর হুগলির গুড়াপের শিবপুর গ্রামের বৃদ্ধ মধুসূদন কুমারের গলাতেও। বিক্রম ‘নিখোঁজ’ হতেই মন খারাপ হয় কুমারবাড়ির। অত রাতেও টিভি থেকে এক মুহূর্তের জন্যেও চোখ সরাননি মধুসূদন এবং তাঁর স্ত্রী অসীমাদেবী। তাঁদের বড় ছেলে চন্দ্রকান্ত কুমারের হাতেই তৈরি হয়েছে চন্দ্রযানের অ্যান্টেনা। তাঁদের চোখমুখে উত্তেজনার ভাষাটা তাই পড়া যাচ্ছিল সহজেই। ইসরোর চেয়ারম্যানের ঘোষণা শুনেই চেয়ারে বসা বৃদ্ধ মধুসূদনবাবুর মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে এল একটাই শব্দ— ‘আফসোস’। অসীমাদেবী তখনও ‘মিরাক্‌ল’ ঘটার আশায় বসে।

‘মিরাক্‌ল’ ঘটেনি। কিছু ক্ষণের মধ্যে মন খারাপ কাটিয়ে মধুসূদনবাবু বলেন, ‘‘ব্যর্থতা তো সাফল্যের সিঁড়ি। এত পরিশ্রম বৃথা যাবে না।’’ মা-বাবা জানান, শনিবার ফোনে চন্দ্রকান্তকে তাঁরা উৎসাহ দিয়েছেন।

মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বডুয়া কলোনির বাসিন্দা তুষারকান্তি দাস সায়েন্টিস্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চন্দ্রযান প্রকল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। তাঁর মা সবিতাদেবী রাত জাগতে পারেন না। শনিবার ছেলের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। এ দিন দাদা কুমারকান্তিকে ফোন করেন তুষার। শুক্রবার রাতে ইসরোর কন্ট্রোল রুমের অবস্থার কথা জানান। সবিতাদেবী বলেন, ‘‘আজ না-হলেও কাল সফল হবেই। এটাই আমার বিশ্বাস।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chandrayaan 2 ISRO Vikram Lander Yusra Alam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE