Advertisement
E-Paper

বিবাদের মূলে ‘মক্ষিরানি’, মত্ত বন্ধুকে জলে ফেলে খুন

পোস্টমর্টেম রিপোর্টে জলে ডুবে মৃত্যুর উল্লেখ থাকলেও, সন্দেহ হয় তুষারের বাবার। কারণ ছেলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল স্কুটার চড়ে। অথচ সেই স্কুটার ছিল না ঝিলের ধারে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৮ ১৪:৫৪
ধৃত দুই যুবক ও তরুণী।— নিজস্ব চিত্র।

ধৃত দুই যুবক ও তরুণী।— নিজস্ব চিত্র।

মত্ত অবস্থায় এক যুবককে তাঁর তিন বন্ধু এবং এক বান্ধবী মিলে ঝিলের জলে ঠেলে ফেলে দিল। রাতের অন্ধকারে জলে হাবুডুবু খাচ্ছে বছর উনত্রিশের এক যুবক। সে সাঁতার জানে না। সেই অবস্থাতেই পাড়ে দাঁড়িয়ে ওই যুবককে ধীরে ধীরে তলিয়ে যেতে দেখল বন্ধুরা। তার পর যে যার বাড়ি চলে গেল।

মে মাসের ৬ তারিখ বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ হাওড়া জগাছা থানা এলাকার অধিবাসী ক্লাবের কাছে প্রেস কোয়ার্টার্স ঝিলে ভেসে ওঠে এক যুবকের দেহ। পরের দিন দেহটি ছেলে তুষারের বলে শনাক্ত করেন তাঁর বাবা তারকনাথ ঘোষ। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে জলে ডুবে মৃত্যুর উল্লেখ থাকলেও, সন্দেহ হয় তুষারের বাবার। কারণ ছেলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল স্কুটার চড়ে। অথচ সেই স্কুটার ছিল না ঝিলের ধারে।

জগাছা থানায় ছেলের কয়েক জন বন্ধু ও এক বান্ধবীর নাম করে অভিযোগ জানান রেলের কর্মী তারকনাথ। তাঁর অভিযোগ, খুন হওয়ার দিন বাড়ি থেকে বেরনোর সময় তুষার বেশ কিছু টাকা ও গয়না নিয়ে যায় ওই মেয়েটিকে দেওয়ার জন্য। সেই টাকা ও গয়না তুষারের বন্ধুরা নিয়ে নিয়েছে বলে তাঁর বাবার অভিযোগ। সোমবার অভিযুক্ত চার জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তুষারের বন্ধুদের জেরা করতে গিয়েই বেরিয়ে আসে আসল রহস্য।

তুষারের বাড়ি গড়িয়াতে। কিন্তু হাওড়ার জগাছা এলাকার শুভম অধিকারী, শিবম সাউ ও সৌরভ মাকালের সঙ্গে সম্প্রতি তুষারের বন্ধুত্ব হয়। আর এদের সূ্ত্রেই পরিচয় হয় জগাছার তরুণী রিয়া ভট্টাচার্যের সঙ্গে। সেই থেকে ঘনিষ্ঠতা।

জেরায় জানা গিয়েছে, প্রায়শই তারা সবাই ওই ঝিলের পাড়ে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা মারত। সেখানেই মদ্যপান করত। সঙ্গে থাকত রিয়াও। মে মাসের ৫ তারিখ বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতেই গড়িয়ার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল তুষার। ছেলের মৃত্যুর পর বন্ধুদের ব্যাপারে জানতে পারেন তারকনাথ। তদন্তেও পাওয়া যায়, ওই রাতে তুষার এবং তাঁর বাকি বন্ধুদের মোবাইল টাওয়ার লোকেশন দীর্ঘ ক্ষণ একই জায়গায় একসঙ্গে ছিল। ওই দিন বা তার আগে তুষারের সঙ্গে এই বন্ধুদের কথাও হয় ফোনে। সব সূ্ত্রই মিলছিল।

আরও পড়ুন: ইদের ছুটির বিজ্ঞপ্তিও ভুয়ো! কর্মচারিদের মধ্যে তুমুল বিভ্রান্তি

সেই সূত্র ধরেই শুরু হয় বন্ধুদের জেরা। আর সেই জেরাতেই শেষ পর্যন্ত এই বন্ধুরা স্বীকার করে খুনের কথা। স্বীকার করে, কী ভাবে তুষার তলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করে। তারপর তুষারের স্কুটার নিয়ে পালিয়ে যায় বাকিরা।

আরও পড়ুন: ফেসবুক লাইভ করে আত্মঘাতী ছাত্রী, সোনারপুরে

কিন্তু কী কারণে খুন?

পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, তুষারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল। তাই রিয়াকে সামনে রেখে তুষারের পয়সায় নিয়মিত মদ খাওয়া বা বেড়াত বাকিরা। বাকিরা ছোটখাট কাজ করত। খুনের দিন রাতেও সলপের একটি পানশালায় মদ্যপান করে সবাই। তারপর যায় ঝিলের ধারে। সেখানে ফের মদ্যপান। এর মধ্যেই রিয়াকে নিয়ে বাকিদের সঙ্গে বচসা শুরু হয় তুষারের। আর সেই বচসার জেরেই এই খুন। এক তদন্তকারী বলেন, “আসলে এই রিয়া ছিল মক্ষিরানির মতো। ওকে ব্যবহার করে বাকিরা তুষারের পয়সায় ফুর্তি করত। রিয়াকে নিয়েই সে দিন ঝগড়া হয়।”

ধৃতদের সোমবার আদালতে পেশ করা হয়। তাদের নিজেদের হেফাজতে চেয়েছে জগাছা থানার পুলিশ।

Girl Youth
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy