নারদ নিউজের গোপন ক্যামেরায় তোলা ঘুষ-বিতর্কের জেরে বুধবার তিনটি পৃথক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল কলকাতা হাইকোর্টে। তাতে আবেদন করা হয়েছে, হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে ওই ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি। যাঁদের ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি নিরোধক আইনে ব্যবস্থা নেওয়া। ঘুষ নিয়েছেন ও আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থীও হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের প্রার্থী পদ বাতিল করা।
মামলাগুলি দায়ের হয়েছে হাইকোর্টের এক আইনজীবী এবং কংগ্রেস ও বিজেপি-র পক্ষ থেকে। নিয়ম অনুযায়ী কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হলে, সেই সব মামলার শুনানি হয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। এই তিনটি মামলার শুনানিও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চেই হবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। তবে, কবে শুনানি হবে এ দিন রাত পর্যন্ত তা নিশ্চিত জানা যায়নি। আইনজীবীদের একাংশ আশা করছেন, শুক্রবার প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থে দায়ের হওয়া মামলাগুলির শুনানি হয়ে থাকে। মামলাগুলি বৃহস্পতিবার তালিকাভূক্ত হলে, শুক্রবার সেগুলির শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
এ দিন সকালে প্রথম মামলাটি দায়ের করেন অক্ষয়কুমার সারেঙ্গি নামে হাইকোর্টের এক আইনজীবী। তাঁর আইনজীবী অনিন্দ্যসুন্দর দাস জানান, মামলার আবেদনে হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে সিবিআই তদন্তের দাবি জানানো ছাড়াও আদালতকে অনুরোধ করা হয়েছে, ঘুষ নেওয়ার পুরো ভিডিও ফুটেজ সিবিআই-এর হাতে তুলে দিতে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, ঘুষ নেওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে, তৃণমূলের যে সব বিধায়ক ও সাংসদ ওই ঘটনায় জড়িত, তাঁরা শপথবাক্য পাঠ করার পরে নৈতিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব ভুলে ভ্রষ্টাচারের প্রতি ঝুঁকেছেন। ওই বিধায়ক ও সাংসদেরা তাঁদের সাংবিধানিক পদকে অসম্মান করেছেন। এই ঘটনা দেশের সংবিধানের মর্যাদাকেও ক্ষুণ্ণ করেছে। অনিন্দ্যসুন্দর আরও জানান, মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, সিবিআই-কে দিয়ে ওই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করিয়ে আদালত তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কেও নিয়মিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠাক।
এ দিন দুপুরে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী ও আইনজীবী আবু আব্বাসউদ্দিন এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করেন। তাঁদের আইনজীবী রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় জানান, মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, রাজ্যের যে সব বিধায়ক বা মন্ত্রীকে গোপন ক্যামেরায় ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তাঁদের প্রার্থীপদ বাতিল করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিক আদালত। এ ছাড়া, আদালত সিবিআই-কেও নির্দেশ দিক, গোপন ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলির সত্যতা যাচাই করে আদালতকে জানাতে। গোপন ক্যামেরায় যাঁদের ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি নিরোধক আইনে মামলা দায়ের করে প্রয়োজনে তাঁদের গ্রেফতার করার আবেদনও করা হয়েছে মামলার আবেদনে।
এ দিন বিকেলে তৃতীয় জনস্বার্থ মামলাটি দায়ের করা হয় রাজ্য বিজেপি-র পক্ষ থেকে। মামলা দায়ের করেন ব্রজেশ ঝা নামে দলের এক নেতা। ওই মামলার আবেদনে সিবিআই-কে দিয়ে তদন্ত করানোর পাশাপাশি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট-কে (ইডি) দিয়েও তদন্ত করানোর নির্দেশ দিতে অনুরোধ করা হয়েছে আদালতকে।
অন্য দিকে তৃণমূল সূত্রের খবর, দু’-এক দিনের মধ্যেই নারদ নিউজকে আইনি নোটিস পাঠানো হবে দলের পক্ষ থেকে। একইসঙ্গে ভোটের মুখে ছড়িয়ে পড়া ‘বিপজ্জনক’ ভিডিও-র প্রচার বন্ধ রাখতে আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছে ত়ৃণমূল। ভিডিওটির সত্যাসত্য প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত এই সংক্রান্ত খবর বা ছবির প্রচার নিষিদ্ধ করুক আদালত— এমন আর্জি জানানো হতে পারে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর।
অন্য দিকে ইডি সূত্রে খবর, নারদ নিউজের সোরগোল তোলা ভিডিও তারা চেয়ে পাঠাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy