Advertisement
E-Paper

জ্বরের ত্রিফলায় কাবু উত্তর ও দক্ষিণ

তিনের মোক্ষম মার চলছে বাংলায়! সেই তিনের এক জন আবার ‘মারি’র ভূমিকা নিয়েছে। তিনটিই জ্বর। এবং তিনটিই কমবেশি মারণ-জ্বর। তিনটিরই বাহক মশা। তিন রকম মশা। তিন জ্বর হল ডেঙ্গি, ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া আর জাপানি এনসেফ্যালাইটিস।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৬ ০৪:০৮

তিনের মোক্ষম মার চলছে বাংলায়! সেই তিনের এক জন আবার ‘মারি’র ভূমিকা নিয়েছে।

তিনটিই জ্বর। এবং তিনটিই কমবেশি মারণ-জ্বর। তিনটিরই বাহক মশা। তিন রকম মশা। তিন জ্বর হল ডেঙ্গি, ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া আর জাপানি এনসেফ্যালাইটিস। বঙ্গের দক্ষিণে-উত্তরে রীতিমতো কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে এই ত্রয়ী। ডেঙ্গির প্রচণ্ড প্রকোপে দক্ষিণ যখন বিপর্যস্ত, উত্তরবঙ্গে হাজির জোড়া জ্বর! ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া আর জাপানি এনসেফ্যালাইটিস। বাংলার দক্ষিণ-উত্তরে এই ত্রিমুখী সংক্রমণের খবরে স্বাস্থ্য দফতর ঘোর অস্বস্তিতে।

দক্ষিণবঙ্গের কোথাও কোথাও তো মহামারির আকার নিয়েছে ডেঙ্গি। সেই সময়ে রেহাই পাচ্ছে না উত্তরও। নিছক হাজিরা নয়, রীতিমতো মৃত্যুদূত হিসেবেই সেখানে দাপট শুরু হয়েছে রোগব্যাধির। আলিপুরদুয়ার আর মালদহে হানা দিয়েছে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া। এবং এক বছর ক্ষান্তি দিয়ে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস ফের হাজির হয়েছে জলপাইগুড়িতে।

সোমবার পর্যন্ত মালদহ ও আলিপুরদুয়ার থেকে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ায় দু’জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। তবে স্বাস্থ্য ভবন থেকে এখনও পর্যন্ত এক জনের মৃত্যুর খবর স্বীকার করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানান, আলিপুরদুয়ারের চা-বাগান এলাকায় ম্যালেরিয়ায় এক মহিলার মৃত্যুর খবর এসেছে। তাঁর মৃত্যুর কারণ ঠিক কী, অনুসন্ধানে নেমেছে স্বাস্থ্য দফতর। তিনি বলেন, ‘‘আমরাও ঠিকঠাক কারণটা জানতে চাই। তা হলে সেই অনুযায়ী মোকাবিলা করা যাবে।’’

এর পাশাপাশি জলপাইগুড়িতে মিলেছে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান৷ ওই জেলার রাজাডাঙা উত্তর মাঝগ্রাম এলাকায় ধীরেন রায় নামে এক বৃদ্ধ ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন৷ জেলা স্বাস্থ্য দফতরও তা স্বীকার করে নিয়েছে৷ ২০১৪ সালের জুলাই-অগস্টে এনসেফ্যালাইটিস ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল উত্তরবঙ্গে। এ বার পরিস্থিতি তেমন ঘোরালো হয়ে ওঠার আগেই প্রয়োজনীয় সতর্কতা জারি করে রাশ ধরতে চাইছে স্বাস্থ্য ভবন।

দক্ষিণবঙ্গে ডেঙ্গির প্রকোপও অব্যাহত। এ দিন নতুন করে ৮৯ জনের ওই রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে স্বাস্থ্য ভবনে। এই নিয়ে রাজ্যে ওই জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল এক হাজার ৫৮৪। ডেঙ্গি পরিস্থিতির পর্যালোচনায় এ দিন বৈঠক বসে নবান্নে। দফায় দফায় আলোচনা হয় স্বাস্থ্য ভবনেও। আজ, মঙ্গলবার থেকে চিকিৎসক ও নার্সদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে।

বাঁকুড়া জেলায় এ-পর্যন্ত ১২ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। সেখানে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া নিয়েও আতঙ্ক রয়েছে। চলতি বছরে ওই জেলায় এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন দু’‌শোরও বেশি মানুষ।

শ্রীরামপুরে ডেঙ্গি মহামারির রূপ নিয়েছে বলে শুক্রবারেই ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য দফতর। তার পরে আতঙ্কে অনেকেই এলাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের ফিভার ক্লিনিকে এ দিনও জ্বরে আক্রান্তদের ভিড় ছিল। প্লেটলেট অনেক কমে যাওয়ায় রবিবার ওয়ালশ হাসপাতাল থেকে অন্তত তিন জনকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কারণ, মহকুমা বা জেলা হাসপাতালে প্লেটলেট দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। সোমবার সকালে মহকুমাশাসক রজত নন্দ ওয়ালশ হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। অন্তর্বিভাগে গিয়ে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। হাসপাতালের আনাচেকানাচে যাতে জল জমে না-থাকে, সেই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে হুঁশিয়ার করে দেন মহকুমাশাসক।

হুগলির উত্তরপাড়া জেনারেল হাসপাতালেও জ্বর নিয়ে গত সাত দিনে ভর্তি হয়েছেন ৪০ জন। তাঁদের মধ্যে ২৪ জনের রক্তের নমুনা জেলা সদরে পাঠানো হয়েছিল। পরীক্ষায় তিন জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে।

দক্ষিণে ডেঙ্গির দাপটের মধ্যেই উত্তরে মশাবাহিত দুই জ্বর সংক্রমণের খবর আসে। শুক্রবার আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে ছাবিনা বিবি নামে সঙ্কোশ চা-বাগান এলাকার এক বাসিন্দার মৃত্যু হয়। ২ অগস্ট ছাবিনার জ্বর শুরু হয়েছিল। পরের দিন তাঁকে পাঠানো হয় আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে। সেখান থেকে ওই মহিলাকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হয়েছিল। বাড়ির লোকেরা তাঁকে কোচবিহার জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর রক্তে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার জীবাণু মিলেছে। তাঁর মেয়ে আলিজাও একই রোগে আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালেই ভর্তি।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার মালদহে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। ওই হাসপাতাল সূত্রের খবর, মৃতের নাম ক্ষিতীশ দাস (৩০)। তাঁর বাড়ি পুরাতন মালদহ ব্লকের কোর্ট স্টেশন এলাকায়। ‘‘ওই যুবক সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে প্রয়োজনীয় সমস্ত চিকিৎসাই করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে বাঁচানো যায়নি,’’ বলেছেন মালদহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রতীপকুমার কুণ্ডু।

২০১৪ সালে উত্তরবঙ্গ কাঁপিয়ে ২০১৫-য় জাপানি এনসেফ্যালাইটিস মোটামুটি চুপচাপই ছিল৷ এ বার জলপাইগুড়িতে সে ফিরে আসায় প্রশাসনিক কর্তাদের কপালে ভাঁজ বেড়েছে। জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা বলেন, ‘‘জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ধীরেন রায় নামে এক বৃদ্ধ কয়েক দিন আগে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন৷ কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না-করিয়েই তিনি ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যান৷’’ এ দিন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা ধীরেনবাবুর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে মালবাজার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক৷

South Bengal fever
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy