Advertisement
E-Paper

২০২৩: চাকরি বাতিল! ২০২৩: রায় স্থগিত! ২০২৫: রায় বাতিল! ২০১৬ সালের নিয়োগ মামলার সালতামামি

কলকাতা হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে মামলার শুনানি শুরু হয়। প্রথম দফায় ৪২,৫০০ জনের নিয়োগ হয়। সেই নিয়োগেই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:১২
Timeline of 32,000 job cancellation cases in Primary

—ফাইল চিত্র।

ঘটনার সূত্রপাত ২০১৪ সালে। সে বছর প্রাথমিকে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। সেই ভিত্তিতে ২০১৫ সালে প্রাথমিক নিয়োগ পরীক্ষা (টেট) নেওয়া হয়। টেটের ফলপ্রকাশের পর ২০১৬ সালে শুরু হয় নিয়োগপ্রক্রিয়া। ইন্টারভিউ, প্যানেল প্রকাশের পর দুই ধাপে নিয়োগ হয় প্রাথমিকে। সেই নিয়োগ নিয়েই বিতর্ক। অভিযোগ ওঠে, নিয়োগপ্রক্রিয়ায় বেনিয়মের।

নিয়োগপ্রক্রিয়ায় ‘গরমিলের’ অভিযোগ তোলেন কিছু ‘বঞ্চিত’ চাকরিপ্রার্থী। প্রিয়াঙ্কা নস্কর-সহ ১৪০ জন হাই কোর্টে ২০১৬ সালে প্রাথমিকে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, তাঁরা টেট উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণও করেছিলেন। তাঁদের ইন্টারভিউয়ে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা চাকরি পাননি। নিয়ম মেনে নিয়োগ হয়নি। টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ারও অভিযোগ। এই সব অভিযোগ নিয়ে শোরগোল শুরু হতেই এই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে সিবিআই।

কলকাতা হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে মামলার শুনানি শুরু হয়। প্রথম দফায় ৪২,৫০০ জনের নিয়োগ হয়। সেই নিয়োগেই দুর্নীতির অভিযোগ। শুনানি চলাকালীন মামলাকারীদের আইনজীবী আদালতে দাবি করেছিলেন, মামলাকারীদের থেকে কম নম্বর পেয়ে অনেকেই চাকরিতে ঢুকেছেন এবং তাঁরা প্রশিক্ষণহীন।

মামলাতে উঠে আসে নিয়োগের ইন্টারভিউ বিতর্ক। পর্ষদের নিয়ম অনুযায়ী, ইন্টারভিউয়ের সময় পরীক্ষার্থীদের ‘অ্যাপটিটিউড টেস্ট’ নেওয়া হয়। অভিযোগ, অনেকেই অনৈতিক ভাবে চাকরিতে ঢুকেছেন। তাঁদের বেশ কয়েক জনের ক্ষেত্রে সেই ‘অ্যাপটিটিউড টেস্ট’ নেওয়া হয়নি! পরীক্ষা না-নিয়েই নম্বর বসিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। শুনানি চলাকালীন তৎকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বেশ কয়েক জন চাকরিপ্রার্থীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। শুধু তাঁরা নন, বিভিন্ন জেলায় যাঁরা পরীক্ষার্থীদের ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন, তাঁদের তলব করে গোপন জবানবন্দি নথিবদ্ধ করেন তিনি। সিবিআই এবং আর এক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডিরও বক্তব্য শোনেন তৎকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তার পরেই চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন তিনি।

২০২৩ সালের মে মাসে এক ধাক্কায় ৩৬ হাজার প্রশিক্ষণহীন প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের রায় দিয়েছিলেন তৎকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। রায় দেওয়ার সেই সময় তিনি জানিয়েছিলেন, চার মাসের মধ্যে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে। পাশাপাশি, এ-ও জানান, চাকরিচ্যুতরা আপাতত চার মাস স্কুলে গিয়ে শিক্ষকতা করতে পারবেন। তবে তাঁদের বেতন দেওয়া হবে পার্শ্বশিক্ষকদের বেতনকাঠামো অনুযায়ী। সেই রায় দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই নিজের নির্দেশের কিছুটা বদল করেন তৎকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বদল হয় চাকরি বাতিলের সংখ্যায়।

মামলাকারীদের আইনজীবী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান, প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের আসল সংখ্যা ৩৬ হাজার নয়, ৩০ হাজার ১৮৫। ছাপার (টাইপোগ্রাফিক্যাল এরর) ভুলের কারণে এই বিভ্রান্তি হয়েছে! পরে রায় বদলের আর্জি জানানো হয় প্রাক্তন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। তিনিও ‘ভুল’ মেনে জানিয়ে দেন, ৩৬ হাজার নয়, ৩২ হাজার প্রশিক্ষণহীন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে।

এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যায় পর্ষদ এবং রাজ্য সরকার। ২০২৩ সালেই বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ চাকরি বাতিলের রায়ে অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ দেয়। তবে নতুন করে চাকরির পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে প্রাক্তন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা বহাল রেখে দেয়।

ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় পর্যদ এবং চাকরিহারাদের একাংশ। চলতি বছরে শীর্ষ আদালত চাকরি বাতিলের নির্দেশের উপর দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল রেখে মামলা পাঠিয়ে দেয় হাই কোর্টে। সুপ্রিম কোর্টে মামলাকারীদের বক্তব্য ছিল, আদালত সব পক্ষের বক্তব্য না-শুনেই চাকরি বাতিল করেছে। হাই কোর্টে মামলা পাঠিয়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, সব পক্ষের বক্তব্য শুনতে হবে।

তার পরে এই মামলার শুনানি শুরু হয় বিচারপতি চক্রবর্তী এবং বিচারপতি মিত্রের বেঞ্চে। মাস কয়েকের শুনানি শেষ হয় গত মাসে। শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন বিচারপতিরা। বুধবার সেই মামলায় রায় দিল হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। প্রাক্তন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় খারিজ করে দেয় বিচারপতি চক্রবর্তী এবং বিচারপতি মিত্রের বেঞ্চ।

TET Primary Recruitment Case Calcutta High Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy