মমতার সঙ্গে কথা জিগ্নেশ মেবাণীর।
সাধারণত জনসভায় লক্ষ লক্ষ বাঙালির সামনে বাংলায় ভাষণ দেওয়াই তাঁর রেওয়াজ। কিন্তু শনিবারের ব্রিগেড সমাবেশে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতার অনেকটাই ছিল হিন্দিতে। আর ভিন রাজ্যের নেতারা অনেকেই বক্তৃতা শুরু করলেন বাংলায়।
মমতার হিন্দি বক্তৃতার পিছনে কিছু কারণ আছে। তাঁর অতিথি হয়ে দেশের নানা প্রান্ত থেকে যাঁরা এ দিন এসেছিলেন, তাঁরা সকলেই অবাঙালি। আর জাতীয় রাজনীতিতে সংযোগের প্রধান মাধ্যমও হিন্দিই।
উপস্থিত জনতা অবশ্য ‘দিদি’র হিন্দি ভাষণ শোনার আগে শান্ত ভাবে ভিন্ রাজ্যের অন্য দলের ২২ জন নেতার বক্তৃতা শুনে উত্তীর্ণ হল ধৈর্যের পরীক্ষায়।
ব্রিগেড ময়দানে কাশ্মীর থেকে তামিলনাড়ু, মিজোরাম থেকে গুজরাত— ভারতের বৈচিত্র্য ঐক্যবদ্ধ হল বিজেপি বিরোধিতায়। বিচিত্র হৃদয়ে হৃদয়ে সেতুবন্ধন করল বিজেপিহীন ‘আচ্ছে দিনের’ স্বপ্ন। হাতে হাত গাঁথা হল পরিবর্তনের শপথে।
ফি বছর ২১ জুলাই ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে তৃণমূলের শহিদ দিবসের বিপুল সমাবেশ দেখতে অভ্যস্ত পশ্চিমবঙ্গ। মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এ দিনের আগে দু’বার ব্রিগেড সমাবেশ করেছেন। এক বার ২০১১ সালের ২১ জুলাই। পরেরটা ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে। কিন্তু এ দিনের ভিড়ের চরিত্র ছিল ওই সব বড় সমাবেশের থেকেই কিছুটা আলাদা। কাকভোর থেকে একটু একটু করে মানুষ এসেছিলেন ব্রিগেড ময়দানে। কিন্তু বিকেল প্রায় চারটেয় সভা শেষ হওয়া পর্যন্ত তাঁরা থেকেছেন। এই পর্বে জনতার হুড়োহুড়ি, ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে ‘দিদি’র কাছে যাওয়ার চেষ্টা ইত্যাদি বিশৃঙ্খলা বিশেষ নজরে পড়েনি। ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে মমতাকে প্রায়ই শ্রোতাদের শাসন করতে দেখা যায়। কিন্তু এ দিন সে ঘটনা খুব বেশি ঘটেনি। এ দিন শুধু তিনি বলেন, ‘‘আজ কিন্তু আমি শেষে বলব। আমাদের অতিথিরা এসেছেন। তাঁদের কথা মন দিয়ে শুনতে হবে। পুলিশকে বলছি, বিকেল চারটের আগে ফেরার বাস যেন ছাড়া না হয়।’’
জেলা এবং কলকাতা পুরসভা এলাকায় ওয়ার্ড পিছু বাসে করে লোক আনা হয়েছিল সভায়। মূল মঞ্চের ডান দিকে এবং বাম দিকে দু’টি করে মঞ্চ ছিল। মূল মঞ্চে ছিলেন মমতা এবং ভিন্ রাজ্যের অতিথিরা, মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ডান দিকের দু’টি মঞ্চের একটিতে ছিলেন টলিউডের তারকা, বিদ্বজ্জন, শিল্পী, খেলোয়াড়রা, অন্যটিতে পুরসভা এবং জেলা পরিষদের প্রতিনিধিরা। বাম দিকের প্রথম মঞ্চে ছিলেন তৃণমূলের সাংসদ এবং মন্ত্রীরা, দ্বিতীয়টিতে দলের বিধায়করা।
মমতা এ দিন প্রথমে গৃহকর্ত্রীর মতো অন্য দলের সব নেতাকে গাড়ি থেকে মঞ্চ পর্যন্ত অভ্যর্থনা করে নিয়ে আসেন। তাঁদের ডাব এবং চা দিয়ে আপ্যায়ন করেন। তাঁদের গলায় পরিয়ে দেওয়া হয় তৃণমূলের প্রতীক ঘাসফুল আঁকা উত্তরীয়। একটি করে ব্যাগ উপহার দেওয়া হয় তাঁদের। এর পরে মমতাকে দেখা যায় সঞ্চালকের ভূমিকায়। হার্দিক পটেল থেকে শুরু করে তেজস্বী যাদব পর্যন্ত ভিন্ রাজ্যের সব বক্তার নাম এ দিন ঘোষণা করেন মমতাই। প্রত্যেকের বক্তৃতার পরে তার নির্যাসটুকুও বলে দেন সংক্ষেপে। তেজস্বীকে মমতা পরিচয় করিয়ে দেন ‘বিহারীবাবু’ বলে।
২২ জন অতিথি নেতার অনেকেই এ দিন ভাষণ শুরু করেন বাংলায়। যেমন হার্দিক শুরুতেই বলেন, ‘‘ধন্যবাদ দিদি।’’ জবাবে মমতা গুজরাতিতে বলেন, ‘‘কেমছো?’’ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বক্তৃতার শুরুতে বলেন, ‘‘নমস্কার পশ্চিমবঙ্গ। আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা নিও।’’ শেষে তিনি বলেন, ‘‘ভাল থেকো।’’ গেগং আপাং ভাষণ শুরু করেন, ‘‘নমস্কার মমতাজি’’ বলে।
কুমারস্বামী বলেন, ‘‘শুভ অপরাহ্ন। আজ এই সমাবেশের শরিক হয়ে এত মানুষের মধ্যে থাকতে পেরে আমি খুব খুশি।’’ চন্দ্রবাবু নায়ডু ‘সকলকে অন্তরের শুভেচ্ছা’ জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy