বীরভূমে দলের জেলা সভাপতি আর পদে নেই অনুব্রত মণ্ডল (ডাকনাম কেষ্ট)। উল্টে ওই পদই তুলে দিয়েছে তৃণমূল। স্পষ্ট নির্দেশ, জেলায় দলের সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখবে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড়ে দেওয়া কোর কমিটিই। শুক্রবারের সেই নির্দেশের পরেই রবিবার কোর কমিটির বৈঠক ডাকলেন জেলায় দলের চেয়ারপার্সন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত দেড় মাস ধরে বীরভূমে তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠক হয়নি। তা নিয়ে কোর কমিটির সদস্যদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধছিল। প্রকাশ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ উগরেও দিয়েছিলেন জেলায় ‘অনুব্রত-বিরোধী’ বলে পরিচিত কাজল শেখ (কাজল অবশ্য প্রকাশ্যে অনুব্রত-বিরোধী হওয়ার কথা অস্বীকারই করেন)। সেই আবহেই অনুব্রতের সভাপতিত্ব গিয়েছে। শনিবার দলের জেলা সভাপতি এবং জেলার চেয়ারপার্সনদের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে বীরভূমের জেলা সভাপতি পদের কোনও উল্লেখ নেই, অন্য জেলার ক্ষেত্রে যেমন রয়েছে। বীরভূমে তার পরিবর্তে লেখা কোর কমিটি। আলাদা করে জেলার চেয়ারপার্সন হিসাবে বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিসের নাম রয়েছে।
শীর্ষ নেতৃত্ব সেই তালিকা প্রকাশ করার পরেই রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় কোর কমিটির বৈঠক ডেকেছেন আশিস। তিনি বলেন, ‘‘কোর কমিটির সিদ্ধান্ত মেনেই দল পরিচালিত হবে বীরভূমে। এমনই নির্দেশ দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।’’
বীরভূম জেলা তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, মমতার গড়ে দেওয়া কোর কমিটিকে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ করে দিয়ে ‘অপারেশন বোলপুর’ চালাচ্ছিলেন অনুব্রত। তার ফলেই দেড় মাস কোর কমিটির কোনও বৈঠক হয়নি। সমান্তরাল ভাবে কেষ্ট তাঁর পারিষদদের নিয়ে ব্লকে ব্লকে কর্মসূচি করে ২০২৬ সালের ভোটের নান্দীমুখ সেরে রাখছিলেন। কিন্তু যে ভাবে তাঁর সভাপতিত্বই চলে গেল, তার পরে কি রবিবারের কোর কমিটির বৈঠকে যোগ দেবেন কেষ্ট? এ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে দলের অন্দরে।
গরুপাচার মামলায় ২০২২ সালে অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পরেই বীরভূমে কোর কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা। কমিটিতে রেখেছিলেন কাজলকে, যাঁর সঙ্গে কেষ্টর ‘মধুর’ সম্পর্ক সর্বজনবিদিত। কিন্তু অনুব্রতের গ্রেফতারির পরেও জেলায় দলের জেলা সভাপতি পদ ছিল। ওই পদে বহালও ছিলেন অনুব্রত। পরে যখন তিনি জেল থেকে ছাড়া পান, আলাদা করে তাঁকে ওই পদে বসানোরও কোনও বিষয় ছিল না। জেলা সভাপতি হওয়ার সুবাদে কোর কমিটিতেও তাঁর অন্তর্ভুক্তি ঘটে। তবে দলনেত্রী মমতা বার বার কড়া নির্দেশ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন, কোর কমিটির সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কেষ্টকে দল চালাতে হবে। কিন্তু তার পরেও অনুব্রত যে ভাবে কোর কমিটিকে এড়িয়ে কাজ করছিলেন, তাতে জেলার নেতাদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ে। দলীয় সূত্রে দাবি, সেই সব খবরাখবর শীর্ষ নেতৃত্বের কানে গিয়েছিল। এ বার জেলা সভাপতি পদটাই তুলে দিয়ে আসলে অনুব্রতকে কড়া বার্তা দিল দল।
দলের একটি অংশের দাবি, অনুব্রত জেলে থাকাকালীন লোকসভা ভোটে বীরভূমে ভালই সাফল্য পেয়েছে দল। কোর কমিটিই সংগঠন পরিচালনা করে দলকে জেলার দু’টি আসনে জিতিয়েছে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে যে দুবরাজপুরে বিজেপি জিতেছিল, সেখানেও দল লিড পেয়েছে। ফলে কেষ্ট ছাড়াও যে জেলায় দলের পক্ষে জেতা সম্ভব, তা দল জানে।
যদিও কেষ্ট-ঘনিষ্ঠদের দাবি, কেষ্টর সাজানো সংগঠনের উপরে দাঁড়িয়েই লোকসভায় ভাল ফল করেছিল দল।