Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

দেওয়ালে তৃণমূল, ঘুরে প্রচারে জোর বামের

এক দেওয়ালে প্রার্থীর নাম, পাশের আরও চারটে দেওয়ালে সরকারের নানা কাজ, প্রকল্পের খতিয়ান— কালনা মহকুমার চার ব্লকই কার্যত ভরে গিয়েছে তৃণমূলের এ ধরনের দেওয়াল লিখনে।

কালনায় দু’দলের প্রচার। নিজস্ব চিত্র।

কালনায় দু’দলের প্রচার। নিজস্ব চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৬ ০১:২০
Share: Save:

এক দেওয়ালে প্রার্থীর নাম, পাশের আরও চারটে দেওয়ালে সরকারের নানা কাজ, প্রকল্পের খতিয়ান— কালনা মহকুমার চার ব্লকই কার্যত ভরে গিয়েছে তৃণমূলের এ ধরনের দেওয়াল লিখনে। উল্টো দিকে, সিপিএমের দু’একটা দেওয়াল চোখে পড়লেও জোটসঙ্গী কংগ্রেসের কার্যত চিহ্নই নেই দেওয়ালে।

প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কী ভোটের আগেই ময়দান ছেড়ে দিচ্ছে বিরোধীরা, নাকি প্রার্থী তালিকা নিয়ে আলোচনা এখনও মেটেনি। বামেদের যদিও দাবি, প্রচারের প্রাথমিক পর্যায়ে দেওয়ালে নয়, বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রচারেই জোর দিয়েছেন তাঁরা। ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগটাও ঝালিয়ে নেওয়া যাচ্ছে এই সুযোগে। দ্রুত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের দাবি করছে কংগ্রেসও।

দিন দশেক আগে নাম ঘোষণার পর থেকেই কালনা, মন্তেশ্বর, পূর্বস্থলী উত্তর ও দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে প্রচার শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। দলীয় সূত্রের খবর, প্রথম দফায় দেওয়াল দখলেই জোর দিয়েছেন তারা। কর্মীরা নিজেরা তো বটেই পেশাদার শিল্পীদের দিয়েও দেওয়াল লেখানো হচ্ছে। পরিস্থিতি এমনই যে বামেদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগেই বেশিরভাগ দেওয়াল ছেয়েছে তৃণমূলের ভোট প্রচারে। তার উপর জোটের বোঝাপড়ায় পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্র ছাড়া হয় কংগ্রেসকে। এখনও সেখানে প্রার্থীর নাম না ঘোষণা হওয়ায় তৃণমূলই সব দেওয়ালে একচেটিয়া। তবে শুধু প্রার্থীর নাম নয়, বরং সরকারের কাজের খতিয়ান এ বার গুরুত্ব পেয়েছে দেওয়ালে। কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, শিক্ষাশ্রী, সবুজসাথী, ন্যায্য মূল্যে ওষুধের দোকান চালু, খাদ্যসাথী, ডিগ্রি কলেজ চালুর মতো বিষয় কোথাও এঁকে, কোথাও লিখে দেখানো হয়েছে। বিরোধীকে ব্যঙ্গ করে রয়েছে দেদার ছড়াও।

কয়েকটা দেওয়ালে অবশ্য লালের ছোঁয়া রয়েছে। বিশেষত কালনা শহর ও তার আশপাশের এলাকায়। সেখানে সিপিএমের তরফে সাধারণ মানুষকে ভোট দিতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। লেখা রয়েছে ‘নিজের ভোট নিজে দিন’ বা ‘ভোট লুঠ রুখে দিন’-এর মতো কথা। পূর্বস্থলী ,মন্তেশ্বরেও বামেদের দেওয়াল লিখন বেশ কম। পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রে এসটিকেকে রোডের গা ঘেঁসে বেশ কিছু দেওয়ালে সিপিএম প্রার্থীর স্বপক্ষে ভোট প্রচারের ছবি চোখে পড়লেও গ্রামীণ এলাকায় তুলনায় কম প্রচার চোখে পড়েছে। মন্তেশ্বরেও ছবিটা কার্যত একই।

কালনা ২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি প্রণব রায় বলেন, ‘‘বেশির ভাগ দেওয়াল নেতা-কর্মীরা দলীয় প্রার্থীর স্বপক্ষে প্রচার সেরে ফেলেছেন। দেওয়াল লিখন এখনও চলছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘দেওয়াল লিখন নিয়ে উন্মাদনাই প্রমাণ করে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল এগিয়ে।’’ মন্তেশ্বরের তৃণমূল প্রার্থী সজল পাঁজার বক্তব্য, ‘‘চোখ মেললেই চারপাশে দেখতে পাবেন জোড়াফুল। কর্মীরা দেওয়াল লিখন শেষ করে এখন গ্রামে গ্রামে প্রচার শুরু করেছেন।’’

তবে দেওয়াল লিখন বেশি হলে ভোটে সুবিধা, এমন যুক্তি মানতে নারাজ সিপিএম নেতারা, তাঁদের দাবি, আগে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ায় তৃণমূল বেশি দেওয়াল লেখার সুযোগ পেয়েছে। বহু জায়গায় ভোটের আগে থেকেই তৃণমূল দেওয়াল দখল করে বসে রয়েছে বলেও তাঁদের দাবি। সিপিএমের কালনা জোনাল কমিটির সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, এ বার ভোট হবে অন্যরকম। শাসক দলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানুষই রায় দেবেন। তাই বাড়ি বাড়ি প্রচারেই জোর দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, ‘‘গত পুরসভা ভোটে দলের তরফে শহরের এক নম্বর ওয়ার্ডে তেমন দেওয়াল লিখন হয়নি। অথচ বামেরাই জিতেছিল। ফলে দেওয়ালে প্রচার পার্থক্য গড়ে দেবে, এটা ভাবা ভুল।’’ সিপিএমের পূর্বস্থলী জোনাল কমিটির সদস্য সুব্রত ভাওয়ালেরও দাবি, ‘‘শাসকদলের টাকার অভাব নেই। পেশাদার শিল্পীদের মোটা মজুরি দিয়ে দেওয়াল লেখাচ্ছে। আমরাও সাধ্যমতো করছি। বেশি জোর দিচ্ছি বাড়ি বাড়ি প্রচারে।’’ কোন কোন নেতা-কর্মী কোন এলাকায় প্রচার চালাবেন তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর দাবি। জেলা কংগ্রেসের সভাপতি আভাস ভট্টাচার্যের দাবি, প্রার্থিতালিকা দিল্লিতে পাঠানো হচ্ছে। নাম ঘোষণা হয়ে গেলেই প্রচার শুরু হয়ে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC CPM LEFT Campaign
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE