E-Paper

পরিযায়ী-‘হেনস্থা’য় বিজেপিকে নিশানা, পাল্টা তোপ রাজ্যকেও

জনগণনার ফর্মে কেউ মাতৃভাষা হিসেবে বাংলার কথা লিখলে, ‘বিদেশি’ (বাংলাদেশি) চিহ্নিত করার কাজ সহজ হবে, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার এমন মন্তব্যকে হাতিয়ার করে সরব হল তৃণমূল কংগ্রেস।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫ ০৫:৪৬
ভিন রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিকদের  হেনস্থার প্রতিবাদ কংগ্রেসের। কলকাতায়।

ভিন রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিকদের হেনস্থার প্রতিবাদ কংগ্রেসের। কলকাতায়। —নিজস্ব চিত্র।

কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসীকে অসম ফরেনার্স ট্রাইবুনাল আইনে নোটিস ধরানো নিয়ে বিতর্ক চলছিলই। এ বার জনগণনার ফর্মে কেউ মাতৃভাষা হিসেবে বাংলার কথা লিখলে, ‘বিদেশি’ (বাংলাদেশি) চিহ্নিত করার কাজ সহজ হবে, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার এমন মন্তব্যকে হাতিয়ার করে সরব হল তৃণমূল কংগ্রেস। পাশাপাশি, বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে কর্মরত পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য বার বার ‘হেনস্থা’ করার অভিযোগকে সামনে রেখে সরব হয়েছে কংগ্রেস ও সিপিএম-ও। বিজেপিকে ‘বাঙালি বিরোধী’ বলেও সরব হয়েছে সব পক্ষ। পক্ষান্তরে, বিজেপির দাবি, পুরোটাই ভুল ব্যাখ্যা এবং এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী রাজ্য সরকার।

ওড়িশা, গুজরাত, রাজস্থান, দিল্লি-সহ বিজেপি-শাসিত বিভিন্ন রাজ্য সরকার কেউ বাংলায় কথা বললেই তাঁকে বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দিচ্ছে বলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ তুলেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার অসমের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে হাতিয়ার করে সরব হয়েছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ শনিবার বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা ভারতীয় নন? গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারের মুখ্যমন্ত্রী (হিমন্ত) কী ভাবে এই কথা বলছেন?” যদিও, বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য পাল্টা বলেছেন, “তৃণমূল নোংরা রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। হিমন্তের মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে।” তাঁর আরও দাবি, বাংলায় কেউ কথা বললে বা লিখলে, সেটা তাঁর অধিকার এবং বাঙালি পরিচয় গর্বের।

বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক-সহ অন্যদের হেনস্থা করার অভিযোগকে সামনে রেখে এ দিন কলেজ স্কোয়ারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে কংগ্রেসও। ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার, দলের নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য, অভিতাভ চক্রবর্তী-সহ অন্যেরা। শুভঙ্কর বলেছেন, “বিজেপি দেশ চালাতে পারছে না, চাল-চিনি-কেরোসিন-চাকরি দিতে পারছে না। তাই এখন গৃহযুদ্ধ তৈরি করতে বিভিন্ন ভাষা নিয়ে আগুন লাগাতে চাইছে!” বিষয়টির মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে সর্বদল বৈঠক ডাকার দাবি জানিয়েছেন শুভঙ্করেরা। এর সঙ্গেই কংগ্রেসের প্রশ্ন, বিজেপি যখন রাজ্যে হিন্দু ভোট এক জোট করার পক্ষে লাগাতার বার্তা দিচ্ছে, তখন দিনহাটার বাসিন্দাকে ‘বাংলাদেশি’ বলা হলেও, তারা চুপ কেন? পাশাপাশি, কংগ্রেস জানিয়েছে, ২০১১-এর জনগণনার তথ্য অনুযায়ী ২০০১ থেকে ২০১১ পর্যন্ত রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৫ লক্ষ ৮০ হাজার জন। রাজ্য সরকারের ‘কর্মসাথী’ পোর্টাল অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এই সংখ্যাটা ২১ লক্ষ ৫০ হাজার। এই প্রেক্ষিতে তৃণমূল রাজনীতি করলেও, রাজ্যে কর্মসংস্থান না-হওয়া নিয়ে কেন কিছু বলছে না, সেই প্রশ্নও তুলেছে কংগ্রেস।

একই সুরে সরব হয়েছে সিপিএম-ও। দলের বহরমপুরে জেলা দফতরে বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা তথা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু পরিযায়ী শ্রমিকদের অন্য রাজ্যে হেনস্থার বিষয়ে বলেছেন, “খুবই অন্যায় হচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ পশ্চিমবঙ্গে এলে তাঁরা বহিরাগত হন না। তেমনই ভিন্‌-রাজ্যে কাজ করা বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকেরাও বাংলাদেশি নন।”

এই প্রেক্ষিতে বিরোধীদের পাল্টা নিশানা করেছে বিজেপি। গোটা পরিস্থিতির দায় রাজ্য সরকারের উপরে চাপিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক বলেছেন, “বাংলার সরকারের বিভিন্ন মন্তব্যের জন্য এই রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের অন্য রাজ্যে অসুবিধা হচ্ছে। গুজরাতকে অপমান করবেন, আবার সেখানে গিয়েই এখানকার মানুষ কাজ করবেন, এটা হতে পারে না! পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এটা বুঝতে হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC Bengali Migrant Labours

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy