ফাইল চিত্র।
দলনেত্রীর ধমক খেলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিরস্কৃত হলেন নদিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতিও। জেলায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে তৃণমূলনেত্রী তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে খবর।
নদিয়া জেলার সব তৃণমূল বিধায়ককে শুক্রবার বৈঠকে ডেকেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকেই মমতা অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কড়া বার্তা দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। নবদ্বীপের বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহার গুরুত্ব বাড়িয়েছেন নেত্রী। কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে সামিল হওয়া বিধায়কদের সঙ্গে নিয়েই কাজ করতে হবে নদিয়ায়— এ বার্তাও অত্যন্ত স্পষ্ট করেই দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
বিধানসভার অধিবেশনের ফাঁকেই এ দিন নদিয়ার নেতাদের নিয়ে তৃণমূলনেত্রী বৈঠক করেন। মুখ্যমন্ত্রীর চেম্বারেই বৈঠকটি হয়। পঞ্চায়েত নির্বাচনে নদিয়ায় তৃণমূলের ফলাফল নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে খুব একটা খুশি নন, তা আগেই জানা গিয়েছিল। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই আশানুরূপ ফল না হওয়ার কারণ বলে তিনি মনে করেছিলেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত ভোট মেটার পরেই নদিয়ার পরিস্থিতি আলাদা করে পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দলনেত্রী। কিন্তু, বিভিন্ন ব্যস্ততায় সেই বৈঠক এত দিন আটকে ছিল। শুক্রবার বৈঠকটি হল। জেলা নেতৃত্ব দলনেত্রীর তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়ল সেই বৈঠকে।
আরও পড়ুন: নদিয়ার নেতাদের নিয়ে বসছেন মমতা
নদিয়া নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে বসলে যে পর্যবেক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ধমকের মুখে পড়তে হবে, সে জল্পনা তৃণমূলের অন্দরে ছিলই। পঞ্চায়েত নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই অভ্যন্তরীণ কোন্দলের খবর আসছিল। দলের মহাসচিব তথা নদিয়ার পর্যবেক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায় সে কোন্দল সামলাতে পারেননি। স্বাভাবিক কারণেই অসন্তুষ্ট ছিলেন মমতা। শুক্রবার নদিয়ার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে সেই অসন্তোষেরই প্রকাশ ঘটে।
তবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের চেয়েও অনেক বেশি ভর্ৎসনার মুখে পড়েছেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত। খবর তেমনই। নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে কৃষ্ণনগরে তৃণমূলের অবস্থা এত খারাপ যে, লোকসভা নির্বাচনে সে আসনে দলের জয় নিয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে এবং সে কথা তাঁকে বিরোধীদের মুখ থেকে শুনতে হয়েছে— বৈঠকে মমতা এমনই বলেন বলে জানা গিয়েছে। এই কোন্দলের জন্য মমতার তির মূলত গৌরীশঙ্করের দিকেই ছিল বলে খবর। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জেলা নেতৃত্বের অতিরিক্ত মাখামাখি নিয়েও দলনেত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গিয়েছে। গৌরীশঙ্করের ছেলে অয়ন দত্ত জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি পদে ছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন অয়নকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
শুধু গৌরীশঙ্কর দত্ত নন, নেত্রীর রোষানল পড়েছে নদিয়া জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের উপরেও। নদিয়ায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলে উজ্জ্বল বিশ্বাসেরও ভূমিকা রয়েছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করছেন বলে সূত্রের খবর। মন্ত্রী হিসেবে উজ্জ্বল বিশ্বাসের পারফরম্যান্সেও মমতা খুশি নন। মন্ত্রিত্ব সংক্রান্ত দায়দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করার বিষয়ে উজ্জ্বলকে এ দিন মমতা সতর্ক করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
শান্তিপুরে দলের পরিস্থিতি নিয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুশি নন। শান্তিপুরের দীর্ঘ দিনের বিধায়ক অজয় দে-কে হারিয়ে গত বিধানসভা নির্বাচনে সেখানে জয়ী হন কংগ্রেসের অরিন্দম ভট্টাচার্য। পরে অরিন্দম তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু, প্রাক্তন বিধায়ক তথা শান্তিপুর পুরসভার চেয়ারম্যান অজয় দে-র অনুগামীরা অরিন্দমের তৃণমূলভূক্তিতে খুব খুশি হননি। ফলে শান্তিপুরে অজয়-অরিন্দম কোন্দলের খবর রয়েছে। অজয় দে-কে এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ বার্তা দেন, অরিন্দমকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করতে হবে। শান্তিপুর পুর এলাকার উন্নয়ন সংক্রান্ত সিদ্ধান্তও অরিন্দমের সঙ্গে আলোচনা করেই নিতে হবে, বার্তা দিয়েছেন দলনেত্রী।
গৌরীশঙ্কর দত্তকে সভাপতি পদ থেকে না সরালেও, তাঁর উপরে খুব বেশি ভরসা যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাখছেন না, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এ দিনের বৈঠকে। নদিয়া জেলার জন্য কোর কমিটি গড়ে দিয়েছেন তিনি। ২০০১ সাল থেকে টানা তৃণমূলের টিকিটে নবদ্বীপের বিধায়ক থাকা পুণ্ডরীকাক্ষ সাহাকে কোর কমিটির প্রধান করা হয়েছে। গৌরীশঙ্কর দত্ত, উজ্জ্বল বিশ্বাস এবং নাকাশিপাড়ার বিধায়ক কল্লোল খানকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। এ বার থেকে জেলার সব বৈঠক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা ডাকবেন বলেও দলনেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।
কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া শঙ্কর সিংহকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ককে সব বিষয়ে সঙ্গে রাখতে হবে— কোর কমিটিকে এ দিন এমন বার্তাও দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।
আরও পড়ুন: দিলীপকে গরু-খোঁচা মমতার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy