সংসদীয় প্রতিনিধি হিসেবে বিদেশে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকাকে প্রচারে রাখতে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, রাজ্যে ভোটের আগে জাতীয়বাদের নিরিখে দলের প্রস্তুতি সেরে রাখতে চাইছেন দলীয় নেতৃত্ব। পাঁচ দেশে অভিষেকের প্রতিনিধিত্ব এবং বক্তব্যকে সেই লক্ষ্যেই ব্যাপক ভাবে তুলে ধরছেন দলীয় নেতারা।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বিজেপির জাতীয়তাবাদী প্রচার ও তার মুখ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজ্যে বাঙালিয়ানার আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদকে ঢাল করে সেই লড়াই উতরে গিয়েছে তৃণমূল। পহেলগামের হামলা ও ভারত- পাকিস্তান সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক তরজায় ঢুকে পড়েছে। আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা ভোটে তা প্রচারের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হতে চলেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। এই অবস্থায় বিজেপির প্রচারের সামনে সন্ত্রাস দমনে দেশের অবস্থান প্রচারে অভিষেকের বিদেশ সফর তৃণমূলের অন্যতম অস্ত্র হতে চলেছে। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কথায়, ‘‘বিজেপির ভন্ড দেশপ্রেমের সঙ্গে এর তুলনা হয় না। দেশের স্বার্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান স্পষ্ট। অভিষেক যে ভাবে দেশের কথা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য।’’ রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য খোঁচা দিয়েই বলেছেন, ‘‘অভিষেক দেশের সাফল্যের কথা বলছেন। কিন্তু তাঁর দলেরই সাংসদ সৌগত রায় ভারতের অভিযান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তবু বিদেশের মাটিতে তৃণমূল সাংসদের ভূমিকাকে স্বাগত জানাই।’’ শমীক নিজেও আর একটি দলের সদস্য হিসেবে ফ্রান্স সহ একাধিক দেশে রওনা হবেন।
পহেলগামের জবাব হিসেবে গোড়াতেই সমাজমাধ্যমে ‘পাক অধিকৃত কাশ্মীর’ পুনর্দখলের দাবি জানিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত মতো পাঁচটি দেশে সংসদীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে জাপানে পা রাখতেই প্রচারে নেমে পড়েছে তৃণমূল। দলের মন্ত্রী, নেতা, সাংসদ, বিধায়কেরা তাঁর সফরের ছবি, কর্মসূচি নিয়ে সমাজমাধ্যমে ব্যাপক ভাবে প্রচারে নেমে পড়েছেন। শুধু তাই নয়, জাপানে গত দু’দিনে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মারক- ফলক সংস্কার নিয়ে অভিষেকের তৎপরতার বিষয় নিয়েও প্রচারে নেমে পড়েছেন তাঁরা। একই সঙ্গে আইনজ্ঞ রাধাবিনোদ পালের প্রতি শ্রদ্ধা অভিষেকের শ্রদ্ধা নিবেদনকেও বাঙালি স্বাভিমানের উল্লেখ করেছে তৃণমূল। শুধু তাই নয়, অভিষেকের এই ভূমিকায় রাধাবিনোদের পরিবারের আগ্রহে উত্তর কলকাতার বিডন স্ট্রিটের নামকরণ নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। এক্ষেত্রেও সমাজমাধ্যমে দলের নেতাকর্মীরা লিখতে শুরু করেছেন ‘আজ বাংলা যা ভাবে, কাল দেশ তাই ভাবে।’
প্রতিনিধি দল বাছাই নিয়ে গোড়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট ছিল তৃণমূল। দলের তরফে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত বদলে সাংসদ ইউসুফ পাঠানের বদলে বিদেশে প্রতিনিধিদলের জন্য অভিষেককে মনোনীত করেন মমতা স্বয়ং। সেই মতোই সফরের প্রথম দেশ জাপানে পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসের কথা তুলে ধরে অভিষেক দলের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করছেন বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করছে। তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র সমীর চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘‘অভিষেক দেশের প্রতিনিধি করছেন। এর সঙ্গে দলীয় রাজনীতির সম্পর্ক নেই।’’ প্রসঙ্গত, অভিষেক যে প্রতিনিধিদল রয়েছেন, তার অন্য সদস্যদের সফর নিয়ে এমন প্রচার কিন্তু নজরে আসেনি।
যদিও বাঙালি বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর প্রতি অভিষেকের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের বিষয়টিকে সামনে রেখে অন্যদের কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। দলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এক্স হ্যান্ডেলে বলেছেন, ‘আগে অনেকেই জাপানে গিয়েছেন। কিন্তু কেউ-ই এই বিপ্লবী বাঙালি সম্পর্কে এই রকম আগ্রহ দেখাননি।’’ দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিষেকের আর্জির পরই জাপানে ভারতীয় দূতাবাসের তরফে স্মৃতিফলক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)