Advertisement
০৬ মে ২০২৪

মমতা-তালুকে কুমারের আগমনে বিতর্ক তৃণমূলে

কু-এ আবার কুডাক তৃণমূলে! দলে এসে এক সময় অতি প্রভাবশালী হয়ে ওঠা, রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষ এখন জেলে। দলেও সাসপেন্ডেড। এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাস তালুক দক্ষিণ কলকাতায় গোল বেঁধেছে কুমার সাহার তৃণমূলে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে!

কুমার সাহা

কুমার সাহা

অত্রি মিত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২০
Share: Save:

কু-এ আবার কুডাক তৃণমূলে!

দলে এসে এক সময় অতি প্রভাবশালী হয়ে ওঠা, রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষ এখন জেলে। দলেও সাসপেন্ডেড। এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাস তালুক দক্ষিণ কলকাতায় গোল বেঁধেছে কুমার সাহার তৃণমূলে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে!

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের হাত ধরে সম্প্রতি শাসক দলে যোগ দিয়েছেন কুমার ওরফে ভাই। সঙ্গে কয়েকশো অনুগামী। তাতেই অশনি সঙ্কেত দেখছেন মমতা-ঘনিষ্ঠ সুব্রত বক্সী, অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র-সহ দক্ষিণ কলকাতার তাবড় তৃণমূল নেতারা। এমনকী, এই দলে রয়েছেন দলনেত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কুমারের মতো বিতর্কিত অতীতের লোকজনকে দলে টেনে তৃণমূল নেত্রীর নিজের এলাকায় লড়াই চালাতে গেলে দলের ভাবমূর্তি আরও বিপন্ন হবে বলে এই নেতারা মনে করছেন। যার জেরে কুমারকে দলে নিয়েও স্বস্তিতে নেই তৃণমূল।

সারদা কেলেঙ্কারিতে একের পর এক দলীয় নেতার নাম উঠে আসায় এমনিতেই বিব্রত তৃণমূল নেতৃত্ব। তার মধ্যে কুমারকে কেন্দ্র করে শাসক দলের অন্দরে বিরোধ নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। পরিস্থিতি এমনই যে, কুমার যে দিন দলবল নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিতে আসেন, সে দিন তৃণমূল ভবনে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ তথা তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রতবাবু। ঘটনাচক্রে, কুমারের বাড়ি সুব্রত বক্সীর বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “ঘনিষ্ঠ মহলে বক্সীদা পরে বলেছেন, অস্বচ্ছ ভাবমূর্তির কারও দলে ঢোকার দায়িত্ব তিনি নিতে পারবেন না। সে কারণে তিনি ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন না।”

কুমারের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে দলের অন্দরে অবশ্য মুকুল শিবিরের যুক্তি, গত লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে জয় পেলেও খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে হার স্বীকার করতে হয়েছিল দলকে। তাই কুমারের মতো ‘ডাকাবুকো’ সংগঠকের অন্তর্ভুক্তি ওই কেন্দ্রে দলকে শক্তি জোগাবে। পাশাপাশি, কুমারকে দলে নেওয়ার সময়ে তাঁর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রবীণ নেতা অনুপ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন গুরুতর অসুস্থ। সদ্যপ্রয়াত অনুপবাবুর অনুপস্থিতিতে কুমার সংগঠনকে শক্তিশালী করবেন। এমনিতে ওই এলাকায় কংগ্রেসের মালা রায়ের সংগঠন যথেষ্ট শক্তিশালী। মালা এখন কলকাতা পুরসভার ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। গত পুরভোটে ৮৩ নম্বর ওয়ার্ডে জোড়া পাতা চিহ্নে লড়েছিলেন তখন কংগ্রেসের কিছু নেতার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কুমার।

মমতার সঙ্গে মালার ঠান্ডা লড়াই ভবানীপুর এলাকার রাজনৈতিক মহলে সুবিদিত। তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, কুমারকে দলে ঢোকাতে ওই লড়াই-ই অস্ত্র করেছেন মুকুল। মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি জানিয়েছেন, আগামী বছর কলকাতা পুরভোট। সেখানে মালাকে হারাতে কুমারকে কাজে লাগবে। মুকুলবাবু বা সুব্রতবাবু কেউ অবশ্য এই নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। কুমার নিজে এ সব বিতর্ক উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, “তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে তো সবার সঙ্গেই কথা হয়েছে। এ রকম খবর আমার অন্তত জানা নেই।”

কুমার যতই উড়িয়ে দিন না কেন, ঘনিষ্ঠমহলে তাঁকে নিয়ে অস্বস্তির কথা তাবড় তৃণমূলের নেতাও অস্বীকার করতে পারছেন না। তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার বক্তব্য, “মালা রায়ের মোকাবিলা করার জন্য কুমারকে নেওয়া হয়েছে ঠিকই। তবে অনেক সমস্যা আছে বলে আপাতত তাঁকে বিশেষ সামনে আনা হচ্ছে না।”

কালীঘাট মন্দিরের কাছে কালীঘাট পার্কের ঠিক পিছনে সাহেববাগান বস্তি এলাকা বা মসজিদপাড়া। সরকারি জমি দখল করে সেখানে কয়েকশো পরিবারের বসবাস। ওখানেই বড় হয়েছেন কুমার। ওখানকার সংগঠনই কুমারের বড় অস্ত্র। তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রথম জীবনে তৃণমূল নেতা অনুপবাবুর ছত্রচ্ছায়ায় ছিলেন কুমার। সে সময়ে তাঁর সঙ্গী ছিল মোটাবাবু, নোনো, পাম্পিরা। এখনও তারাই কুমারের সঙ্গী। পরে অবশ্য কংগ্রেসের কিছু নেতার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন কুমার। তৃণমূলের এক নেতার দাবি, “৫০টা মোটরবাইকের কনভয় ছাড়া রাস্তায় বেরোয় না। রাসবিহারী এবং ভবানীপুর এলাকার সমাজবিরোধী শ্রীধর ও মুন্না পাণ্ডের সঙ্গে এক সময়ে লড়াই ছিল কুমারের। কয়েক বছর ধরে নিজেরা সন্ধি করে চলছে। কুমারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, এখন শ্রীধর-মুন্নারা আর কুমারের এলাকায় ঢোকে না।” এ হেন কুমারকে দলে ঢোকানোয় তৃণমূল নেত্রীর ভাবমূর্তিই নষ্ট হবে বলে মনে করছে দলের একাংশ। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “এক সময়ে সিপিএমের গুণ্ডামির বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের দল গড়ে উঠেছে। ভোটে জিততে এখন যাকে তাকে দলে নিলে সেই ভাবমূর্তিই নষ্ট হবে।”

দলের মধ্যে এমন ব্যাখ্যাও শোনা যাচ্ছে, রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের সংগঠন কার্যত মুকুলবাবুর হাতের মুঠোয়। বাকি ছিল মুখ্যমন্ত্রীর নিজের এলাকা। সেখানে দলের স্বার্থের কথা বলেই তিনি কুমারকে হাতিয়ার করায় বেঁকে বসেছে তৃণমূলের অন্য একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE