জেলায় জেলায় সাংগঠনিক রদবদলের প্রথম প্রক্রিয়া হয়ে গিয়েছে। বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত না করার বার্তা দেওয়া হচ্ছে সর্বস্তরে। এই প্রক্রিয়ারই পরবর্তী পর্যায়ে রাজ্য মন্ত্রিসভায় কিছু রদবদলের ভাবনা চলছে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষস্তরে। সূত্রের খবর, কিছু গুরুত্বপূর্ণ দফতরে মুখ বদল হতে পারে। কয়েক জন পুরনো মন্ত্রীর ডানা ছাঁটা হতে পারে, কয়েকটি নতুন মুখের অন্তর্ভুক্তিও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংগঠন ও মন্ত্রিসভায় প্রয়োজনীয় রদবদল সেরে নিয়েই আগামী ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে রাজ্যে বিধানসভা ভোটের চূড়ান্ত প্রস্তুতির বার্তা দিতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শাসক শিবির ও প্রশাসনিক সূত্রের ইঙ্গিত, মন্ত্রিসভায় রদবদলের যাবতীয় সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত নয়। কাদের গুরুত্ব কমানো হবে, সেই বিষয়ে প্রাথমিক পরিকল্পনা হলেও বিকল্প এখনও সব ক্ষেত্রে স্পষ্ট হয়নি। একটি সূত্রের দাবি, এরই মধ্যে আবার বাংলায় রাজ্যপাল বদলের জল্পনা শুরু হয়েছে। শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সি ভি আনন্দ বোসশেষ পর্যন্ত অব্যাহতি নিলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আগামী বিধানসভা ভোট বিবেচনায় রেখে কাকে রাজভবনে পাঠায়, তা-ও দেখে নিতে চায় নবান্ন। তবে শাসক শিবিরের অভ্যন্তরে ভোটের আগে শেষ বার মন্ত্রিসভা পুনর্বিন্যাসের প্রস্তুতি চলছে।
সূত্রের খবর, শিক্ষা, শিল্প ও বাণিজ্য-সহ কিছু দফতর নিয়ে নতুন করে ভাবনা-চিন্তা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। শিক্ষা ক্ষেত্রে এখন তুলকালাম চলছে। শিল্পে পুরনো উৎসাহ ভাতা (ইনসেনটিভ)-র প্রথা তুলে দিয়ে নতুন নীতি প্রণয়নের ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। ওই দফতরগুলির সাম্প্রতিক কাজকর্মে মুখ্যমন্ত্রী সন্তুষ্ট নন। তবে অদল-বদল করে মন্ত্রিসভার মধ্যেই অন্য কারও হাতে দফতরের ভার দেওয়া হবে, না কি বাইরে থেকে কাউকে নিয়ে আসা হবে, তা এখনও চূড়ান্ত নয়। আবার একাধিক দফতর হাতে রয়েছে, এমন কয়েক জন মন্ত্রীর ভার কমানোর ভাবনাও রয়েছে। বিশেষত, শহরাঞ্চলে মানুষের মনোভাব যে শাসক দলের প্রতি খুব সদয় নয়, গত লোকসভা নির্বাচনেই পুর-এলাকার ফলে তার প্রভাব দেখা গিয়েছে। সেই সমীকরণ মাথায় রেখে মন্ত্রিসভায় মুখ বদলের অঙ্কও উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউ কেউ। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, গোটা পরিকল্পনাই হচ্ছে কালীঘাট ও ক্যামাক স্ট্রিটের সমন্বয়ে।
নতুন অন্তর্ভুক্তির দৌড়ে নদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুরের মতো জেলা থেকে কয়েকটি নাম বিবেচনায় রয়েছে। উত্তর কলকাতার এক বিধায়ককে মন্ত্রিসভায় এনে মমতা চমক দিতে পারেন বলেও একটি সূত্রের ইঙ্গিত। প্রয়োজন পড়লে বড় কোনও দফতর কাজের সুবিধার্থে ভেঙে আলাদাও করা হতে পারে। পাশাপাশি, সংখ্যালঘু কমিশনের জন্য নতুন বিল আসতে পারে বিধানসভার অধিবেশনে। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী নিয়মিত প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক করেন। কে কোথায় কেমন কাজ করছেন, সেই বিষয়ে তাঁর নিজের সম্যক ধারণা আছে। কোথায় কী পরিবর্তন দরকার, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন।”
আগামী বিধানসভা ভোটে তৃণমূল যখন ময়দানে নামবে, তখন ১৫ বছরে তৈরি হওয়া প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার হাওয়া তাদের মোকাবিলা করতে হবে। সেই সম্ভাবনা মাথায় রেখে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সংগঠন ও মন্ত্রিসভায় প্রয়োজনীয় মুখ বদল সেই ভাবনার সঙ্গেই সম্পর্কিত। ভোটের আগের কয়েক মাসে সরকারি পরিষেবা তথা কাজের গতি বাড়িয়ে ভোটের সময়ে বেশ কিছু পুরনো বিধায়ককে প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে বলেও শাসক শিবিরের একটি মহলের দাবি। এই সূত্রই এক সময়ে সফল ভাবে প্রয়োগ করেছিলেন তৎকালীন শাসক দল সিপিএমের প্রয়াত রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাস!
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)