কলকাতা হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে কেন্দ্রীয় সরকারকে ১০০ দিনের কাজে পশ্চিমবঙ্গের বকেয়া অর্থ মেটাতে হবে বলে দাবি করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ সোমবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রসঙ্গ তুলে জানিয়েছেন, পাওনা না মেটালে আবার দিল্লিতে প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করবেন তাঁরা।
সেই সঙ্গে সমাজমাধ্যমে কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডির পাশাপাশি ‘তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে’ নির্বাচন কমিশনকেও নিশানা করেছেন তিনি। ঘটনাচক্রে, কমিশন বাংলা-সহ ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা করার কয়েক ঘণ্টা পরেই। সমাজমাধ্যমে অভিষেক লিখেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও যদি আমাদের পাওনা পরিশোধ না করা হয়, বাংলা আবার জেগে উঠবে এবং দিল্লির রাজপথে লড়াই করবে। জমিদারেরা ভোটে এবং আদালতে হেরে গিয়েছে, তবুও তারা ইডি এবং ইসির সমর্থন নিয়ে তাদের খেলা খেলছে।’’
এর পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দলকে নিশানা করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘জনতার চেয়ে বড় কোনও শক্তি নেই। বিজেপি এখনই শেখো, না হলে ২০২৬ সালে চিরতরে আরও কঠিন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে।’’ প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ ১ অগস্ট থেকে রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিল। উচ্চ আদালতের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই শীর্ষ আদালতে গিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু সোমবার সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রের আবেদন খারিজ করে দেয়। কেন্দ্রের উদ্দেশে বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চের মন্তব্য, “আপনারা মামলা তুলে নেবেন, না কি আমরা খারিজ করব?” তার পরেই শীর্ষ আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়।
আরও পড়ুন:
সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রের আবেদন খারিজ করে দেওয়ায় হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে ১০০ দিনের কাজের টাকা মঞ্জুর করতে হবে কেন্দ্রকে। তা ছাড়া এর ফলে ১০০ দিনের কাজ নিয়েও বাধা কাটল। চার বছর পরে ফের ১০০ দিনের কাজ শুরু হবে রাজ্যে। রায় ঘোষণার পরেই অভিষেক সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করেন। তিনি লেখেন, “যাঁরা মনে করে বাংলাকে হেনস্থা করা যায়, চুপ করিয়ে দেওয়া যায়, আজকের রায় তাঁদের গালে গণতান্ত্রিক উপায়ে থাপ্পড় মেরেছে। তাঁরা মানুষের ভোটেও হেরেছে, সুপ্রিম কোর্টেও হারল।”
প্রসঙ্গত, এর আগে ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে দিল্লি গিয়েছিলেন অভিষেক। ‘বঞ্চিত’দের নিয়ে পুজোর আগে রাজধানীতে যান তিনি। তবে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়নি। সেখান থেকে ফিরে কলকাতায় রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসেছিলেন তৃণমূলের সাংসদ। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস তখন কলকাতায় ছিলেন না। পাঁচ দিন ধরে অভিষেকের ধর্না চলেছিল। তার পর রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলেন তিনি। অভিষেক সেই সময় জানিয়েছিলেন, রাজ্যপাল পদক্ষেপ না করলে আগামী দিনে আরও বড় আন্দোলনের পথে হাঁটবেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় এর পর ধর্না তুলে নিয়েছিলেন তিনি। সোমবার জানালেন, আদালতের রায় কার্যকর করা না হলে দেশের রাজধানীতে আন্দোলনে নামবে তৃণমূল।