রাজ্যে কেন ফিরছে রাজনৈতিক হানাহানি? কেন প্রতিদিন খুন হচ্ছেন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা? গত দেড় মাসে পর পর তিন জন তৃণমূল নেতা খুন হওয়ায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী পুলিশের কাছে এই সব প্রশ্ন তুলে জবাবদিহি চেয়েছেন। তাঁর সাফ কথা, যে ভাবেই হোক, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই তিন খুনের মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতেই হবে।
এই পর্বে সর্বশেষ খুনের ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাতে বিষ্ণপুর থানা এলাকার রসপুঞ্জের অমরজ্যোতিতে। মৃতের নাম ইসমাইল পৈলান (৪৪)। বাড়ি বাখরাহাটে। তিনি বিষ্ণুপুরের রসপুঞ্জে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি। ইট-বালি-সিমেন্ট সরবরাহ এবং ঠিকাদারি কাজে শ্রমিক দেওয়ার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ও এলাকা দখলের লড়াইয়ের জেরেই খুন বলে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে জেনেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে রসপুঞ্জের দলীয় কার্যালয় থেকে মোটরবাইক চালিয়ে একাই বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। রাত দশটা নাগাদ অমরজ্যোতি এলাকার কাছে চার জন দুষ্কৃতী তাঁর মোটরবাইক ঘিরে ফেলে। শুরু হয় হাতাহাতি। সেই সময় এক যুবক পিছন থেকে ইসমাইলকে গুলি করে। আহত ইসমাইল কোনও মতে পালিয়ে এক জনের বাড়িতে ঢুকে পড়েন। গুলির শব্দ পেয়ে বেরিয়ে আসেন স্থানীয়রা। দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়। স্থানীয়রা ইসমাইলকে প্রথমে ঠাকুরপুকুরের ও পরে একবালপুরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করান। সেখানেই শনিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।
চার অভিযুক্ত— আনোয়ার শেখ, সানোয়ার শেখ, মহিম ও রাজেশকে এ দিনই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে মূল অভিযুক্ত এখনও অধরা বলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে খবর এসেছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ দিনই ঘটনাস্থলে যান কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনিও মুখ্যমন্ত্রীকে আলাদা ভাবে রিপোর্ট দেন। তাতে ইসমাইলকে দলের দক্ষ সংগঠক এবং এলাকার উন্নয়নে সক্রিয় ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে বিষ্ণুপুরের ঘটনাই শুধু নয়, এর আগে গত মাসে খুন হয়েছেন নদিয়ার হাঁসখালির তৃণমূল ব্লক সভাপতি দুলাল বিশ্বাস এবং বর্ধমানের কেতুগ্রামের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূল নেতা জাহির শেখ। দু’টি ক্ষেত্রেই দলীয় কোন্দলের কিছু অভিযোগ পাওয়া গেলেও তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, এ সবের পিছনে রয়েছে বিজেপি-সিপিএমের মতো দল।
বিষ্ণুপুরের ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে আর রেয়াত করতে রাজি নন। তিনি নদিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে গিয়েও দুলালের খুনিদের গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে পুলিশের টালবাহানা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। হাওড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ পারে না, এমন কোনও কাজ নেই।’’ সেই বক্তব্যের লক্ষ্য অবশ্য ছিল ধুলাগড়ের গোলমাল। কিন্তু পুলিশের ভূমিকা যে আশানুরূপ নয়, ডিজি’কে মঞ্চে বসিয়ে রেখে রীতিমতো ভর্ৎসনার সুরে মুখ্যমন্ত্রী তা জানিয়ে দিয়েছিলেন।
শনিবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে খবর আসে, বিষ্ণুপুরের ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। দলীয় সূত্রে তাঁকে এও জানানো হয় যে, মূল অভিযুক্তের দাদা এখন জেলে এবং সেখান থেকেই ছক কষে এই খুন করা হয়েছে। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার এবং পরে রাজ্য পুলিশের প্রধানকে ফোন করেন।
পুলিশ প্রধানের কাছে ক্ষোভ উগরে দিয়ে মু্খ্যমন্ত্রী আরও বলেন, একের পর এক রাজনৈতিক খুন হচ্ছে। অথচ, সব ক্ষেত্রেই মুল অভিযুক্তদের ধরতে বিলম্ব করছে পুলিশ। তিনি জানতে চান, কেন অপরাধীদের ধরতে এত সময় লাগবে? পুলিশের কাজ কি বসে বসে আরাম করা? আর তা যদি না হয়, তা হলে খুনিদের ধরে দেখাক। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ— পর পর তিনটি খুনের ঘটনার মূল অভিযুক্তদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে। রাজনৈতিক খুনোখুনি তিনি বরদাস্ত করবেন না।