নিয়োগ পদ্ধতি না-মেনে চাকরি পান সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী? গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী কোন পরীক্ষা দিয়ে কলেজে চাকরি পেয়েছিলেন? বৃহস্পতিবার এই প্রশ্ন তুলল তৃণমূল। একটি চিঠির প্রতিলিপি দেখিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এই প্রশ্ন তোলেন। পাশাপাশিই তৃণমূলের টুইটারেও একই চিঠি দিয়ে ওই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রত্যাশিত ভাবেই তৃণমূলের তোলা সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছেন সিপিএম নেতা সুজন। তাঁর পাল্টা দাবি, বামফ্রন্ট আমলে নিয়োগে কোনও দুর্নীতি হয়নি!
নিয়োগে রাজনীতির ‘প্রভাব’ ছিল কি না, তা নিয়ে ডামাডোল শুরু হয়েছিল রাজ্যে। তৃণমূলের আমলে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যখন নিত্যনতুন অভিযোগে জেরবার শাসকদল, তাদের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী কারাবাসে, জেলবন্দি এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা দলীয় বিধায়ক, তখন চিরকুট দিয়ে চাকরি পাওয়ার দাবি তুলে সেই অভিযোগের অভিমুখ পূর্বতন বাম সরকারের দিকে ঘোরাতে শুরু করেছে তৃণমূল। গত শুক্রবার দলীয় বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৯০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বামফ্রন্ট আমলে কারা কারা শিক্ষক হিসাবে নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে সেই তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। মমতার অভিযোগ, বাম আমলে স্রেফ চিরকুট দেখিয়ে অনেকের চাকরি হয়েছে। তার পরেই মুজফফর আহমেদের (কাকাবাবু) লেখা একটি কয়েক লাইনের চিরকুট সমাজ মাধ্যমে ছড়াতে শুরু করেছিলেন বামপন্থীরা। যেখানে তিনি ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, পশ্চিমবঙ্গ কমিটি’র লেটারহেডে ১৯৫৮ সালের ১২ জুন কবি নজরুলের গৃহভৃত্যের এক্স রে প্লেট এবং রিপোর্ট পাঠিয়ে লিখেছেন, ‘‘আশা করি এই নিরাশ্রয় গরিব লোকটির ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’’ বলা বাহুল্য, মমতার ‘চিরকুটে চাকরি’র পাল্টা হিসাবে ‘কাকাবাবু’র চিরকুটটি উপস্থাপিত করা হয়েছে।
JOB SCAM exposed!
— All India Trinamool Congress (@AITCofficial) March 23, 2023
Mili Chakraborty, wife of former CPI(M) MLA @Sujan_Speak, never cleared any exam but:
Worked at Dinabandhu Andrews College for 34yrs
Retired in 2021 with basic pay of ₹55,000 & enjoys pension
Stories of @CPIM_WESTBENGAL's gross misuse of power never end! pic.twitter.com/4MqkYmznkW
ঘটনাচক্রে, মমতার অভিযোগের এক সপ্তাহের মাথায় এক ‘চিরকুট’-এর ছবি দিয়ে সুজনের বিরুদ্ধে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলল রাজ্যের শাসকদল। তা-ও তাঁর স্ত্রীকে চাকরি দেওয়ার অভিযোগে।
সিপিএম নেতা সুজনকে তৃণমূলের কুণালের প্রশ্ন, তাঁর স্ত্রী গড়িয়ার দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজে কোন পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন? তিনি কি আদৌ কোনও পরীক্ষা দিয়েছিলেন? কী ছিল নিয়োগ প্রক্রিয়া? কুণালের বক্তব্য, তৃণমূল ‘ব্যক্তি আক্রমণ’ সমর্থন করে না। কিন্তু যে ভাবে কয়েক জন বিরোধী নেতা টানা ব্যক্তি আক্রমণ করে যাচ্ছেন, তাতে রুচির বাইরে গিয়ে চিরকুট এ সব প্রশ্ন আনতে হচ্ছে। কুণালের কথায়, ‘‘যাঁরা কাদা ছুড়ছেন, তাঁরা কাচের ঘরে বসে ঢিল ছুড়ছেন।’’ তিনি জানিয়েছেন, সুজনের স্ত্রীর চাকরিতে নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগ দলীয় ভাবে তাঁরা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যের কাছে পাঠানো হয়েছে। ব্রাত্য এ ব্যাপারে তদন্ত করবেন জানিয়েছেন বলেও দাবি কুণালের।
এর পরেই সরাসরি সুজনের নাম নিয়ে কুণালের চ্যালেঞ্জ, ‘‘আমাদের নিয়ে কুৎসা করার আগে আপনার পরিবারে আর কে কে আছেন, যাঁরা সরকারের বিভিন্ন পদে চাকরি করেন, তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন! না করলে তৃণমূল তা প্রকাশের দিকে যাবে।’’ তদন্তকারী সংস্থার কাছে কুণালের আর্জি, নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে যেন বামফ্রন্ট জমানায় হওয়া চাকরিরও তদন্ত করে দেখা হয়।
কুণালের অভিযোগের জবাব দিয়েছেন সুজন। তিনি বলেছেন, ‘‘পদ্ধতি মেনে পরীক্ষা দিয়েই আমার স্ত্রী চাকরি পেয়েছিলেন। তৃণমূল যে চিঠি দেখাচ্ছে, সেটা জয়েনিং লেটার। ১৯৮৭ সালের। মিলি (সুজনের স্ত্রী) যে পদে চাকরি পেয়েছিলেন, সেই পদেই অবসর নিয়েছেন। বামফ্রন্ট আমলে যে কোনও দুর্নীতি হয়নি, এটাই তার প্রমাণ।’’
(ভ্রম সংশোধন: এই খবরটি প্রথম প্রকাশের সময় শিরোনাম এবং খবরে লেখা হয়েছিল, কুণাল ঘোষ বলেছেন, সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রীর চাকরি হয়েছে চিরকুট দিয়ে। সুজনও সেই মর্মে প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে আমাদের গোচরে আসে, কুণাল অভিযোগ করেছেন, সুজনের স্ত্রীর চাকরিতে নিয়োগপদ্ধতি নিয়ে। সুজন তারও জবাব দিয়েছেন। যা খবরে উল্লিখিত রয়েছে। প্রথম প্রকাশের সময় শিরোনাম এবং খবরে অনিচ্ছাকৃত যে ত্রুটি হয়েছিল, তার জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy