Advertisement
E-Paper

দলের অন্য গোষ্ঠীকে ভয় দেখাতেই কার্বাইন হাতে ঘুরতেন এই তৃণমূল নেতা

একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতেই ‘কার্বাইন’ হাতে ঘুরে বেড়াতেন তৃণমূল নেতা নরেশ দেবনাথ। ওই নেতাকে গ্রেফতারের পরে তদন্তে এমন তথ্যই উঠে এসেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব যখন মাথাচাড়া দিয়ে হয়ে উঠেছিল দিনহাটায়, সেই সময় ‘ত্রাস’ তৈরি করতেই ছবি তুলে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৪৫
বিতর্কে: এই ছবিই নরেশ দেন ফেসবুকে। নিজস্ব চিত্র

বিতর্কে: এই ছবিই নরেশ দেন ফেসবুকে। নিজস্ব চিত্র

একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতেই ‘কার্বাইন’ হাতে ঘুরে বেড়াতেন তৃণমূল নেতা নরেশ দেবনাথ। ওই নেতাকে গ্রেফতারের পরে তদন্তে এমন তথ্যই উঠে এসেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব যখন মাথাচাড়া দিয়ে হয়ে উঠেছিল দিনহাটায়, সেই সময় ‘ত্রাস’ তৈরি করতেই ছবি তুলে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

সোমবার দিনহাটার বড় আটিয়াবাড়ির ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে কার্বাইনটি উদ্ধার করা হয়। কিন্তু সেই কার্বাইন কোথা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে তা নিয়ে এখনও অন্ধকারে রয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার কোচবিহারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, ধৃতকে ৯ দিনের পুলিশ হেফাজত দিয়েছে আদালত। তিনি বলেন, “এই সময়ের মধ্যে ধৃতকে জেরা করে সব তথ্য বের করা হবে।”

ধৃতের কাছে গুলি রয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। পুলিশ জানিয়েছে, দীর্ঘদিন আগে ওই অস্ত্র বিএসএফ এবং পুলিশ ব্যবহার করত। এখন তা ব্যবহার হয়। পুলিশের বাইরে অসমের জঙ্গি সংগঠন উলফা এবং বিহারের মাফিয়ারা কার্বাইন ব্যবহার করে। এই দুই জায়গার কোথা থেকে ওই অস্ত্র কেনা হয়েছে বলে ধারণা। গীতালদহের আরেক তৃণমূল নেতার হাতে ওই একই অস্ত্র রয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। পুলিশের এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “ভয় দেখানো প্রধান লক্ষ্য ছিল অভিযুক্তদের। সে জন্যেই তাদের হাতে যে কার্বাইন আছে তা বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে দেখাত তারা।” তবে ভয় দেখাতে গিয়ে ওই আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি চলে গেলে বড় বিপদ ঘটে যেতে পারত বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা।

তৃণমূল সূত্রে খবর, বড় আটিয়াবাড়ির ওই নেতা তৃণমূলের সিতাই কেন্দ্রের বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়ার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এ ছাড়া তার স্ত্রী মধুমিতা দেবনাথ বড় আটিয়াবাড়ি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন। পঞ্চায়েত ভোটে দিনহাটা ও সিতাইয়ে দলের যুব সংগঠনের সঙ্গে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছিল। সেই সময় দুই পক্ষের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষ হয়। সেখানে প্রচুর গুলি-বোমা ব্যবহার হয়। একজন খুনের পাশাপাশি তৃণমূলের একাধিক কর্মী গুলিবিদ্ধ হন। সেই সঙ্গে বোমার আঘাতে অনেকের হাত উড়ে যায়। বিরোধীদের অভিযোগ, ওইসব এলাকায় পঞ্চায়েত নির্বাচন বলে কিছু হয়নি। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়া ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল প্রার্থীরা। সেই সময় বাইরের রাজ্য থেকে ব্যাপক হারে আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকতে শুরু করে দিনহাটায়। সেই সময় তৃণমূলের ওই নেতা আগ্নেয়াস্ত্র কিনে নেয় বলে পুলিশের ধারণা।

ওই নেতার গ্রেফতারি ও কার্বাইন উদ্ধারের ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের কোচবিহার জেলার সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ওই ব্যক্তি তৃণমূলের নেতা নন। ওই এলাকায় একজন তফসিলি জাতির প্রার্থী প্রয়োজন ছিল। তখন তাঁর স্ত্রীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এই ঘটনায় আইন আইনের পথে চলবে।” সিতাইয়ের বিধায়ক জগদীশবাবু বলেন, “ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের আসন তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত ছিল। সে জন্যেই মধুমিতাদেবী ওই পদ পান। নরেশবাবু দলের নেতা কখনও ছিলেন না। তিনি কর্মী ছিলেন। কিন্তু কেউ যদি অপরাধমূলক কাজ করেন তিনি যেই হোন না কেন আইন মোতাবেক শাস্তি পাবেন।” সেই সঙ্গে তিনি জানান, ইতিমধ্যেই তাঁরা দিনহাটা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন।

Naresh Debnath Carbine Facebook TMC Arrested নরেশ দেবনাথ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy