ফাইল ছবি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাতেই এখন কেন্দ্রের সমবায় মন্ত্রকের দায়িত্ব। সরাসরি তাই শাহের কাছে এক প্রশংসাসূচক চিঠি পাঠিয়েছেন মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান প্রদীপ পাত্র। কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত সমবায় চালুর কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক’ উল্লেখ করে পাঠানো ওই চিঠির ছত্রে ছত্রে রয়েছে প্রশংসা। শাহের সঙ্গে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও।
আগে এই ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। গত বছর অনাস্থায় তাঁকে অপসারিত করে চেয়ারম্যান হন তৃণমূল নেতা প্রদীপ। তিনি তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক। দীর্ঘ দিন দলের মোহনপুর ব্লক সভাপতিও ছিলেন। অথচ চিঠির ব্যাপারে তৃণমূল অন্ধকারে। শাহি-চিঠির কথা জানেন না ব্যাঙ্কের অন্য কেউও। ব্যাঙ্কের ভাইস চেয়ারম্যান সন্দীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না।’’ তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরার বিস্ময়, ‘‘কেন এমন চিঠি পাঠানো হয়েছে, বুঝছি না।’’
প্রদীপ অবশ্য এতে বিতর্কের বা বিস্ময়ের কিছু দেখছেন না। তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রীও তো প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছেন রাজ্যের বকেয়া আদায়ের জন্য। এখানে আপত্তির কী রয়েছে!’’ তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্রের ওই পদক্ষেপ অবশ্যই ভাল। ভালকে তো ভাল বলতেই হবে। তাই ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান হিসেবে চিঠি পাঠিয়েছি।’’
কেন্দ্রের সমবায় মন্ত্রক ঠিক করেছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সব সমবায় ব্যাঙ্ক, সমবায় সমিতিকে সম্পূর্ণ কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত করা হবে। এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েই শাহকে পাঠানো চিঠিতে তিনি লিখেছেন: এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সমবায় ব্যাঙ্ক, সমবায় সমিতিগুলি শুধু শক্তিশালী হবে না, কাজেও স্বচ্ছতা আসবে। প্রদীপ বলছেনও, ‘‘এই পদক্ষেপ সমবায় আন্দোলনকে পুনরুজ্জীবিত করবে।’’
জেলা তৃণমূল নেতারা মনে করাচ্ছেন, ‘‘সমবায় সমিতির মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে কোর ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দেওয়ার উদ্যোগ তৃণমূল সরকারের। কেন্দ্র এমন কোনও নতুন পদক্ষেপ করেনি যে, প্রশংসায় ভরিয়ে দিতে হবে।’’
গত বছর শুভেন্দুকে সরিয়ে ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান হলেও এক সময় তৃণমূলে শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন প্রদীপ। শুভেন্দু এখনও এই ব্যাঙ্কের পরিচালন কমিটির অন্যতম সদস্য। শুভেন্দু চেয়ারম্যান থাকাকালীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক অনিয়মের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে তা থিতিয়ে যায়। তবে বিরোধীদের নালিশ, কর্মী নিয়োগ থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক পরিচালন কমিটির সদস্যদের ‘ট্রাভেল অ্যালাউন্স’, ‘সিটিং অ্যালাউন্স’-সহ নানা খরচ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রশ্ন রয়েছে ‘প্রধানমন্ত্রী এমপ্লয়েমেন্ট লোন জেনারেশন প্রোগ্রাম’ এবং ‘স্টুডেন্টস্ ক্রেডিট কার্ডে’র উপভোক্তা বাছাই নিয়েও। এই আবহেই ব্যাঙ্ক চেয়ারম্যানের এমন চিঠি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক জেলা নেতা বলছেন, ‘‘হতে পারে, উনি বাঁচার চেষ্টা করছেন!’’ বিজেপির রাজ্য নেতা তুষার মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কেন্দ্র সমবায়কে শক্তিশালী করে তোলার ক্ষেত্রে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে। এটা তৃণমূলের লোকেরাও এখন বুঝতে পারছেন।’’ তবে প্রদীপের দাবি, ‘‘চিঠি দিয়েছি সৌজন্য থেকেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy