Advertisement
০২ মে ২০২৪
Saket Gokhale

পশ্চিমবঙ্গে তথ্য কমিশনের ‘ত্রুটি’ মানেন না সাকেত

রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস সাকেতকে মনোনয়ন দেওয়ার পরেই রাজ্যে তথ্য কমিশনের হাঁড়ির হাল নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন দেশের তথ্য অধিকার কর্মীদের একাংশ।

saket gokhale

সাকেত গোখলে। —ফাইল চিত্র।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৩ ০৬:৩৯
Share: Save:

চার মাস আগেও খোদ তথ্য কমিশনারের পদটি ফাঁকা ছিল এ রাজ্যে। আরটিআই বা তথ্য জানার অধিকারের ভিত্তিতে আবেদনের শুনানি তখন কার্যত বন্ধ। তথ্য অধিকার কর্মী সাকেত গোখলে সেই পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি হয়েই রাজ্যসভায় যাচ্ছেন। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার পরেই রাজ্যে তথ্য কমিশনের হাঁড়ির হাল নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন দেশের তথ্য অধিকার কর্মীদের একাংশ।

কেন্দ্র এবং বিভিন্ন রাজ্যের তথ্য কমিশনের রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত ‘সতর্ক নাগরিক সংগঠন’ বলে একটি মঞ্চের রিপোর্টেই বিষয়টি পরিষ্কার। ঝাড়খণ্ড, ত্রিপুরার মতো ক’টি মাত্র রাজ্য (যাদের তথ্য কমিশনই নেই) পশ্চিমবঙ্গের থেকে পিছিয়ে। মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, গুজরাত বছরে সাত-আট থেকে ৩৯-৪০ হাজারের মতো আরটিআই আবেদন মিটিয়ে ফেলছে। আরটিআই প্রয়োগে বিহার পর্যন্ত ইদানীং বছরে ১০ হাজারের বেশি আর্জির নিষ্পত্তি করছে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ ১৬৬২টি আবেদনের মধ্যে ৪২৬টির নিষ্পত্তি করতে পেরেছে। জমে থাকা ১০ বছরের পুরনো আবেদনসুদ্ধ হাজার দশেক আর্জির নিষ্পত্তি হয়নি। কমিশনে লোকাভাব এবং গাফিলতিতে তথ্য জানার মৌলিক অধিকার খর্ব হচ্ছে বলে সুপ্রিম কোর্টও রাজ্যকে ভর্ৎসনা করেছে। তবে তৃণমূলভুক্ত তথ্য অধিকার কর্মী সাকেত গোখলে রাজ্য তথ্য কমিশনের ত্রুটি মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, “কেন্দ্র এবং রাজ্যের তথ্য কমিশন হল কেন্দ্র ও রাজ্যে চূড়ান্ত আবেদন জমা নেওয়ার কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন সরকারি দফতরে পাবলিক ইনফর্মেশন অফিসারদের কাজের নথি ছাড়া কোনও সমীক্ষাতেই তথ্য জানাতে রাজ্য কত তৎপর, তা বোঝা যাবে না।”

সমীক্ষক সংগঠনটির তরফে অঞ্জলি ভরদ্বাজের পাল্টা যুক্তি, “সাড়া মেলে না বলেই মহারাষ্ট্র, কর্নাটকের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে আরটিআই আবেদনও অনেক কম। লোকে পেনশনের মতো বিষয় মেটাতে আরটিআই করে। এত সময় লাগলে আবেদন অর্থহীন।” অঞ্জলির কথায়, “পশ্চিমবঙ্গে আবেদন মেটানোর যা গতি তাতে ১০ হাজার আবেদনের নিষ্পত্তি ঘটতে ২৪ বছর লেগে যাবে।”

এ রাজ্যের প্রবীণ তথ্য অধিকার কর্মী অমিতাভ চৌধুরী বলছেন, “তথ্য আধিকারিকদের দায়বদ্ধ এবং সজাগ করতেও রাজ্য তথ্য কমিশন নিস্পৃহ। বিভিন্ন দফতরের তথ্য আধিকারিকেরা তথ্য না দিলে বা দেরি করলে কমিশন তাদের জরিমানাও করতে পারে। বিহারে, কর্নাটক বা কেন্দ্র কয়েক কোটি টাকার জরিমানা করেছে। এ রাজ্যে সেই অঙ্ক সামান্য।” তা ছাড়া অমিতাভ, অঞ্জলিদের মতে, “অবসরপ্রাপ্ত আইএএস, আইপিএস আমলারাই বরাবর পশ্চিমবঙ্গ তথ্য কমিশনে রয়েছেন। সরকারের ত্রুটি গোপন করাই তাঁদের ধ্যানজ্ঞান।” তবে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনও কিছু অস্বস্তির প্রশ্ন এড়াতে চায় বলে অভিমত দিল্লি আইআইটি-র অর্থনীতির অধ্যাপক রীতিকা খেরার। “তথ্য অধিকার কর্মীরা সংসদে গিয়ে তথ্য অধিকার মজবুত করতে পারলে তো ভালই”, বলছেন রীতিকা।

দেশে জনগণনা কবে শুরু হবে কেউ জানে না। এই অবস্থায় আরটিআই তথ্য গবেষকদের ভরসা দিতে পারত বলে মনে করেন প্রতীচী ট্রাস্টের গবেষক সাবির আহমেদ। “কলকাতা পুলিশ বা পুরসভায় সুবিধা বঞ্চিত শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব নিয়ে তথ্য চেয়ে বিফল হয়েছি,” বলছেন তিনি। বাস্তবিক তথ্য কমিশনের ১১টি সদস্যপদের মধ্যে রাজ্যে বরাবরই ছ’-সাতটি পদ শূন্য থেকেছে। রাজ্যের তথ্য কমিশনার বীরেন্দ্র বলছেন, “গত বছর জুনে আগের কমিশনার অবসর নেন। আমি এপ্রিলে দায়িত্ব নিয়েছি। ফের শুনানি শুরু হয়েছে। ১২ হাজার মতো আর্জি জমে। উন্নতি হতে একটু সময় লাগবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Saket Gokhale TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE