Advertisement
E-Paper

স্কুটি থামিয়ে গুলি, বহরমপুরে প্রকাশ্যে খুন তৃণমূল নেতা

ঠিক সেই সময় ফেরিঘাট পেরিয়ে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে দুষ্কৃতীর গুলিতে খুন হলেন নিয়াল্লিশপাড়া-গোয়ালজান অঞ্চল যুব তৃণমূলের সভাপতি নাজিমুল শেখ ওরফে নাজু (৩৫)। তাঁর বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে মসুরিডাঙায়। সোমবার সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ নিয়াল্লিশপাড়া ফেরিঘাট লাগোয়া বকুলতলা শিবমন্দির এলাকার ঘটনা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৬
নাজিমুল শেখ। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

নাজিমুল শেখ। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

নিয়াল্লিশপাড়া ফেরিঘাট থেকে পিচ রাস্তাটা চলে গিয়েছে সটান নিয়াল্লিশপাড়া হল্টে। বহরমপুর থেকে ভাগীরথী পেরিয়ে বহু লোক এই পথেই নিয়াল্লিশপাড়ায় যান। ফেরিঘাট লাগোয়া বাজারের ব্যবসায়ীরা সবে দোকান খুলে বসেছেন।

ঠিক সেই সময় ফেরিঘাট পেরিয়ে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে দুষ্কৃতীর গুলিতে খুন হলেন নিয়াল্লিশপাড়া-গোয়ালজান অঞ্চল যুব তৃণমূলের সভাপতি নাজিমুল শেখ ওরফে নাজু (৩৫)। তাঁর বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে মসুরিডাঙায়। সোমবার সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ নিয়াল্লিশপাড়া ফেরিঘাট লাগোয়া বকুলতলা শিবমন্দির এলাকার ঘটনা।

নাজিমুলের পরিবারের অভিযোগ, দিন কুড়ি আগেও নাজিমুল জেলা পরিষদের পূর্ত দফতরের কর্মাধ্যক্ষ রাজীব হোসেনের অনুগামী ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি ডোমকলের পুরপ্রধান সৌমিক হোসেনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। আর সেই কারণেই তাঁকে খুন হতে হল। নাজিমুলের দুই স্ত্রী গোলচেহারা বিবি, নাসরিন বিবি, মা রোজিফা বিবি, বাবা আমির আলির অভিযোগ, ‘‘কে খুন করেছে আমরা দেখিনি। তবে রাজীব হোসেন যে খুন করিয়েছে তা আমাদের কাছে স্পষ্ট।’’

পুলিশের দাবি, নাজিমুলের অতীত ভাল নয়। খুনের চেষ্টা থেকে মারধর, লোকজনকে হুমকির মতো প্রায় ৬টি মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন তিনি। মাস ছয়েক আগেও খুনের চেষ্টার অভিযোগে বহরমপুর থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। মাস তিনেক জেলে থাকার পরে তিনি জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে নাজিমুলের বুকে দু’রাউন্ড গুলি ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘নিয়াল্লিশপাড়ায় এক যুবক খুন হয়েছেন। ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে।’’ তবে নিহতের পরিবারের তরফে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। ধরা পড়েনি দুষ্কৃতীরাও।

জেলার যুব তৃণমূলের সভাপতি তথা শমসেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলামের দাবি, ‘‘গোষ্ঠী কোন্দলের অভিযোগ ঠিক নয়। খুনের রাজনীতি যারা করে সেই কংগ্রেস ও বিজেপিই এই খুন করেছে।’’

বিজেপির মুর্শিদাবাদ দক্ষিণ জেলার সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘এই অভিযোগ ঠিক নয়। সংবাদমাধ্যমেই দেখলাম, নিহতের পরিবার দাবি করছে, তৃণমূলের লোক এ কাজ করছে।’’

জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘এই নৃশংস ঘটনা কংগ্রেস সমর্থন করে না। এটা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল। এটা নিহতের পরিবারও দাবি করছে।’’

জেলা পরিষদের পূর্ত দফতরের কর্মাধ্যক্ষ রাজীব হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘এই ঘটনায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ ঠিক নয়। নাজিমুল আমাদের দলের কর্মী। বিজেপির লোকজন এই ঘটনা ঘটিয়েছে। নাজুর পরিবারকে ভুল বোঝানো হয়েছে। আমরা তার পরিবারের পাশে আছি। পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।’’

ডোমকলের পুরপ্রধান তৃণমূলের সৌমিক হোসেন বলেন, ‘‘রাজীব হোসেনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা ঠিক নয়। নাজিমুল খুব ভাল কর্মী ছিল। আমি মঙ্গলবার জেলায় ফিরে ওঁর বাড়ি যাব।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নাজিমুলের দুই স্ত্রী। তাঁর প্রথম স্ত্রী গোলচেহারা বিবি নিয়াল্লিশপাড়া-গোয়ালজান পঞ্চায়েতের সদস্য। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে মসুরিডাঙায় নাজিমুলের গ্রামের বাড়িতে থাকেন। নাজিমুলের দ্বিতীয় স্ত্রী নাসরিন বিবি ওরফে মৌটুসি বহরমপুরের খাগড়ায় বাবার বাড়িতে থাকেন। নাজিমুল দ্বিতীয় স্ত্রীর
কাছে থাকতেন।

নাজিমুলের বাবা আমির আলি বলেন, ‘‘ছেলে প্রতিদিন সকালে বহরমপুর থেকে গ্রামের বাড়িতে আসত। এ দিন গ্রামের বাড়িতে আসার পথে খুন হয়ে গেল।’’

গোলচেহারা বিবির অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েতে দুর্নীতির প্রতিবাদ করেছিল আমার স্বামী। তা ছাড়া রাজীব হোসেনকে ছেড়ে সৌমিক হোসেনের সঙ্গ নিয়েছিল বলেই ওকে খুন হতে হল।’’ মাস দেড়েক আগে নাজিমুল অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি হয়েছিলেন। রবিবার দিনভর ডোমকলে সৌমিক হোসেনের সঙ্গেই ছিলেন নাজিমুল।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, নাজিমুল প্রতিদিন সকালে ভাগীরথী পেরিয়ে বহরমপুর থেকে নিয়াল্লিশপাড়ায় যাতায়াত করতেন। এ দিনও সাড়ে ৯টা নাগাদ খাগড়ার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। ভাগীরথী পেরিয়ে নিয়াল্লিশপাড়া বকুলতলার গলিপথ ধরে স্কুটিতে যাচ্ছিলেন।

সেই সময় বকুলতলা মন্দিরের কাছে একটি মোটরবাইকে দু’জন দুষ্কৃতী এসে তাঁর পথ আটকায়। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে তাঁর বুকের ডান দিকে দু’টি গুলি চালাতেই স্কুটি নিয়ে লুটিয়ে পড়েন নাজিমুল। এর পরে দুষ্কৃতীরা তিন রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়।

গুলির শব্দে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে জানিয়ে দেন। বকুলতলার বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা ঘোষ বলেন, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম পটকা ফাটছে। পরে হইচই শুনে বেরিয়ে দেখি, স্কুটি নিয়ে এক জন লোক পড়ে রয়েছে। আমরা অবশ্য কাউকে দেখতে পাইনি।’’

Crime Murder Berhampore TMC leader
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy