Advertisement
E-Paper

TMC: স্কুলপড়ুয়াদের জন্য জব-কার্ড!

কাজ না করেও মাস্টাররোলে তাদের নাম ঢুকিয়ে মজুরির টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে বলে সম্প্রতি ১১০ জন বাসিন্দার গণস্বাক্ষর করা অভিযোগপত্র জমা পড়েছে ব্লক ও মহকুমা প্রশাসনের কাছে।

অভিজিৎ অধিকারী

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৪৬
ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

একশো দিনের প্রকল্পের জব-কার্ড শুধু প্রাপ্ত বয়স্কদেরই পাওয়ার কথা। অথচ, তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি ও পঞ্চায়েত সদস্যের ১৮ বছরের কম বয়সের ছেলেমেয়েদের নামে জব-কার্ড তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বেলশুলিয়া পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। কাজ না করেও মাস্টাররোলে তাদের নাম ঢুকিয়ে মজুরির টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে বলে সম্প্রতি ১১০ জন বাসিন্দার গণস্বাক্ষর করা অভিযোগপত্র জমা পড়েছে ব্লক ও মহকুমা প্রশাসনের কাছে।
বিডিও (বিষ্ণুপুর) শতদল দত্ত বলেন, ‘‘আঠারো বছরের কম বয়সীদের একশো দিনের প্রকল্পে জব-কার্ড পাওয়ার কথা নয়। আবেদনের সময়ে ভোটার কার্ড না থাকলে, অবশ্যই বয়সের প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখছি। পঞ্চায়েতের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। বেনিয়ম হয়ে থাকলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বেলশুলিয়া পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান কৃষ্ণা সর্দার বলেন, “জব-কার্ড নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বয়সের ভুল প্রমাণিত হলে ওই সব কার্ড বাদ দেওয়া হবে।”

অভিযোগকারীদের দাবি, বেলশুলিয়া পঞ্চায়েতের সদস্য তথা তৃণমূল নেতা আবু তাহের মণ্ডলের ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে জব-কার্ড পেয়েছে। তৃণমূলের বেলশুলিয়া অঞ্চল সভাপতি কাশেম শেখের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ছেলের নামেও জব-কার্ড তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া, তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ বার্ধক্যভাতার উপভোক্তা থেকে সিভিক ভলান্টিয়ার পর্যন্ত জব-কার্ড পেয়েছেন বলে তাঁদের অভিযোগ।

তবে পঞ্চায়েতের সদস্য আবু তাহেরের দাবি, ‘‘মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক। সরকারি নিয়ম মেনেই আমার মেয়ের নাম জব-কার্ডের জন্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। কার্ড এখনও পাইনি। ভোটার কার্ড তৈরি হয়নি বলে আধার কার্ড দিয়েই জব-কার্ড করিয়েছি।’’ তৃণমূলের বেলশুলিয়া অঞ্চল সভাপতি কাশেমের দাবি, ‘‘ছেলের ভোটার কার্ড নেই। বয়সের প্রমাণপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আধার কার্ড দেখিয়েই ছেলের জব-কার্ড হয়েছে। সে প্রাপ্তবয়স্ক।’’ দু’জনেরই দাবি, ‘‘সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা। প্রকল্পের কাজ ওরা পায়নি।’’

তবে প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কয়েক মাস আগে বিষ্ণুপুর ব্লকের মড়ার গ্রামে বেআইনি ভাবে আধার কার্ড তৈরির যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। গ্রেফতার করা হয় এক জনকে। গ্রামে-গঞ্জে এ রকম ভাবে প্রামাণ্য নথি ছাড়াই অনেকে আধার কার্ড করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তবে বেলশুলিয়ায় কী হয়েছে, তা খতিয়ে না দেখে, মন্তব্য করতে রাজি নন আধিকারিকেরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিরোধী-শূন্য বেলশুলিয়া পঞ্চায়েতে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর বিবাদ দীর্ঘ দিনের। একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনা, সুপারভাইজ়ার নিয়োগ থেকে ত্রাণের ত্রিপল বিলি নিয়েও বার বার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তৃণমূলের এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। এ বারেও তৃণমূলের গোষ্ঠিদ্বন্দ্ব রয়েছে বলে অনুমান। তৃণমূল অবশ্য ‘দ্বন্দ্বের’ কথা মানতে চাননি।

জব-কার্ড তৈরির বিষয়টি পঞ্চায়েতের কর্মীরা দেখেন। তাঁদের কেউ জড়িত কি না, তা-ও দেখার দাবি উঠেছে। বেলশুলিয়া পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক দুর্গাপদ দাসের দাবি, ‘‘বার্ধক্যভাতার উপভোক্তা বা সিভিক ভলান্টিয়ার জবকার্ডের জন্য আবেদন করতেই পারেন। কিন্তু তাঁরা যেহেতু সরকারের সুবিধা পাচ্ছেন, তাই এ ক্ষেত্রে তাঁদের কাজ দেওয়া হয় না।’’

এই অভিযোগ ঘিরে রাজনৈতিক জলঘোলা শুরু হয়েছে। বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজিত অগস্তির দাবি, ‘‘তৃণমূলের আমলে বেনিয়মই নিয়ম হয়ে উঠেছে। সরকারি কর্মীরা যুক্ত হলে, তাঁদের বিরুদ্ধেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নেওয়া প্রয়োজন।” অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অলোক মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বেলশুলিয়া পঞ্চায়েতে কী ঘটেছে, জানা নেই। তবে বেনিয়ম হয়ে থাকলে, প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’’

TMC Job Card
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy