Advertisement
E-Paper

পুরুলিয়ার বিজেপি কর্মী ত্রিলোচন মাহাতো খুনে গ্রেফতার তৃণমূল নেতার ছেলে

এই মামলায় এখনও পর্যন্ত সিআইডি এখনও পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করলেও ত্রিলোচন খুনের মোটিভ কী সেটা কিন্তু তদন্তকারীরা স্পষ্ট ভাবে জানাতে পারেননি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৬:৫৬
বলরামপুরের খুঁদিগোড়ায় নিহত বিজেপি কর্মী ত্রিলোচন মাহাতোর (ইনসেটে) ঝুলন্ত দেহ। ফাইল চিত্র।

বলরামপুরের খুঁদিগোড়ায় নিহত বিজেপি কর্মী ত্রিলোচন মাহাতোর (ইনসেটে) ঝুলন্ত দেহ। ফাইল চিত্র।

পুরুলিয়ার বিজেপি যুব মোর্চার কর্মী ত্রিলোচন মাহাতো খুনের ঘটনায় জেলার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা সৃষ্টিধর মাহাতোর ছেলেকে গ্রেফতার করল সিআইডি। ধৃতের নাম সন্দীপ মাহাতো।

সৃষ্টিধরের বড় ছেলে সন্দীপ মূলত ঠিকাদারি এবং বালির ব্যবসা করেন। শুক্রবার রাতে সিআইডি-র একটি দল সন্দীপকে তাঁর বলরামপুরের বাড়ি থেকে ডেকে পাঠায় জি়জ্ঞাসাবাদের জন্য। টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর শনিবার দুপুরে তাঁকে গ্রেফতার করেন সিআইডি-র গোয়েন্দারা।

গত ৩১ মে পুরুলিয়ার বলরামপুর ব্লকের সুপুরডি গ্রামের কাছে খুঁদিগোড়ায় রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে একটি গাছ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় ১৮ বছরের ত্রিলোচনের দেহ। তাঁর পরনের টি-শার্টের পিছনে লেখা ছিল— ‘এ বার বোঝ ১৮ বছর বয়সে বিজেপি করা’! তাঁর পায়ের নীচে একটি কাগজ উদ্ধার হয়, সেখানে লেখা ছিল, ‘১৮ বছর বয়সেই বিজেপির রাজনীতি এ বার তোর প্রাণনীতি হল। তোকে ভোট থেকেই এই কাজটা করার চেষ্টা করি। পারিনি। আজকে তোর প্রাণ শেষ।’

খুনের পর হুমকির চিরকুট। ফাইল চিত্র।

ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যে তদন্তের ভার দেওয়া হয় সিআইডিকে। প্রথম থেকেই রাজ্য বিজেপি-র অভিযোগ ছিল, তৃণমূলআশ্রিত দুষ্কৃতীরাই তাদের এই কর্মীকে খুন করেছে। ঘটনার প্রায় ২৪ দিন পর বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের পুরুলিয়া সফরের ঠিক আগে, এই মামলায় গ্রেফতার করা হয় পাঞ্জাবি মাহাতো বলে সুপুরডিহির এক বাসিন্দাকে। সিআইডি দাবি করেছিল, খুনের ঘটনায় সরাসরি যোগ ছিল পাঞ্জাবির।

আরও পড়ুন: রাজ্যে ভোটের রাশ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় বিজেপি

তাঁর কাছ থেকে ত্রিলোচনের মোবাইলের ভাঙা অংশগুলো উদ্ধার করা হয়। সিআইডি সূত্রে খবর, মোবাইলের কল রেকর্ড খতিয়ে দেখে উঠে আসে সুপুরডির আর এক বাসিন্দা উত্তম পালের নাম। সুপুরডির বাসিন্দারা দাবি করেন, উত্তম তৃণমূল কর্মী। বৃহস্পতিবার উত্তম পালকেও গ্রেফতার করে সিআইডি। তদন্তকারীদের দাবি, উত্তমকে জেরা করেই উঠে আসে সন্দীপের নাম। তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে জেরা করার সময় তাঁর বক্তব্যে কিছু অসঙ্গতি পাওয়া যায় বলে গোয়েন্দাদের দাবি। এর পরেই সন্দীপকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেন গোয়েন্দারা।

সিআইডি আধিকারিকদের দাবি, এই ঘটনায় যুক্ত আছেন আরও অনেকে। সন্দীপই এই খুনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। সেই কারণেই সন্দীপকে জেরা করা প্রয়োজন। এ দিন সন্দীপকে পুরুলিয়া আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাঁকে ৯ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: পুজোয় সরকারি টাকা কেন, আবেদন প্রধান বিচারপতিকে

এই মামলায় এখনও পর্যন্ত সিআইডি তিন জনকে গ্রেফতার করলেও ত্রিলোচন খুনের ‘মোটিভ’ কী, সেটা কিন্তু তদন্তকারীরা স্পষ্ট ভাবে জানাতে পারেননি। রাজনৈতিক কারণেই এই খুন, নাকি ব্যক্তিগত কোনও আক্রোশেই খুন করা হয় ত্রিলোচনকে, তা এখনও স্পষ্ট নয় তাঁদের কাছে।

সন্দীপকে গ্রেফতারের পর পুরুলিয়া জেলাপরিষদের প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি তৃণমূলের সৃষ্টিধর মাহাতো কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে সৃষ্টিধর ঘনিষ্ঠদের দাবি, ফাঁসানো হচ্ছে সৃষ্টিধর এবং তাঁর পরিবারকে। তাঁদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুরুলিয়ায় ভরাডুবির পর দল এবং দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছিলেন সৃষ্টিধর। সেই কারণেই দলের বিরাগভাজন হয়েছেন তিনি। সৃষ্টিধরের ছোট ছেলে সুদীপ মাহাতোকে বলরামপুর ব্লকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে আনা হয় অঘোর হেমব্রমকে। যিনি এক সময় সক্রিয় মাওবাদী হিসাবে পরিচিত ছিলেন।

অন্য দিকে, জেলা তৃণমূলের সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘গ্রেফতারের খবর আমি শুনেছি। কিন্তু, তাঁর কী ভূমিকা ছিল, কেনই বা গ্রেফতার করা হল, তা আমি জানি না। খবর নিয়ে বলব।’’

(পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলায় খবর জানতে পড়ুন আমাদের রাজ্য বিভাগ।)

BJP Murder TMC Arrest Purulia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy