শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কোনও মিথ্যাচার বা কারচুপি করেননি। সোমবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই দাবি করলেন সোনারপুর দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক তথা অভিনেত্রী লাভলী মৈত্র (অরুন্ধতী মৈত্র)। সম্প্রতি তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তথা বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সমাজমাধ্যমে এই নিয়ে পোস্টও করেছিলেন সুকান্ত। ওই ঘটনার জন্য সুকান্তের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন লাভলী।
বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামোল্লেখ করে লাভলীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সুকান্ত। তাঁর দাবি, লাভলী কোথা থেকে পড়াশোনা করেছেন, তা নিয়ে বিভিন্ন নথিতে ‘অসঙ্গতি’ রয়েছে। এ বার তার জবাব দিলেন সোনারপুর দক্ষিণের বিধায়ক। লাভলীর বক্তব্য, সুকান্ত যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির কথা বলছেন, সেগুলি সবই সত্য। তবে সুকান্তকে খোঁচা দিয়ে তিনি জানান, কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শিক্ষা দফতরের বিষয়ে অনেক কিছুই জানেন না।
তৃণমূল বিধায়কের প্রসঙ্গে রবিবার সুকান্ত সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, “সরকারি নথি অনুযায়ী, তিনি (লাভলী) ২০২০ সালে নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করেছেন। অথচ তাঁর সচিত্র নির্বাচনী প্রচারপুস্তিকায় লেখা, তিনি নাকি সেন্ট পলস কলেজ থেকে ইতিহাসে বিএ। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য পরিচিতি পুস্তকে কলেজের নাম বদলে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ‘গোয়েঙ্কা কলেজ’— যেখানে ইতিহাস পড়ানোই হয় না। আবার বিধানসভার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পূর্ণরূপে ফাঁকা।”
এ বার তার ব্যাখ্যা দিলেন লাভলী। সোনারপুর দক্ষিণের বিধায়ক জানান, তিনি নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই স্নাতক হয়েছেন। তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্য যে তাঁর (সুকান্তের) এটি জানা নেই যে প্রতিটি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্টাডি সেন্টার থাকে। আমার ক্ষেত্রে সেই স্টাডি সেন্টার ছিল গোয়েঙ্কা কলেজ।” এর পরে একটি নথি দেখিয়েও লাভলী স্পষ্ট করেন বিষয়টি। ওই নথি অনুসারে, তিনি নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই স্নাতক হয়েছেন, যেটির ‘স্টাডি সেন্টার’ ছিল ওই কলেজে।
সুকান্ত যে সেন্ট পল্স কলেজের কথা উল্লেখ করেছেন, সেটিরও ব্যাখ্যা দেন লাভলী। বিধায়ক জানান, সুকান্ত ঠিকই বলছেন। তিনি সেন্ট পল্স কলেজে পড়তেন। লাভলী বলেন, “আমি সেখানের প্রাক্তন ছাত্রী। কিন্তু কোনও কারণে সেন্ট পল্স কলেজ থেকে আমি গ্র্যাজুয়েশন (স্নাতক) শেষ করতে পারিনি। আমার পেশাগত কারণে ওই কলেজটি আমাকে ছাড়তে হয়। পরবর্তী কালে নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করি। যেখানে আমার স্টাডি সেন্টার ছিল গোয়েঙ্কা কলেজ।”
লাভলীর শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্যে নিয়ে ‘অসঙ্গতি’র কথা উল্লেখ করে সুকান্ত অভিযোগ করেছিলেন, তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে ‘মিথ্যাচার’ করেন এবং জনগণকে ‘বিভ্রান্ত’ করেন। সমাজমাধ্যমে সুকান্ত এ-ও লিখেছিলেন, “খুব সহজেই অনুমেয়, যে রাজ্যে একজন তৃণমূল বিধায়কের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও কারচুপি করা হয়, সেই রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকলে শিক্ষার মানের অবক্ষয় কোন পর্যায়ে পৌঁছোতে পারে!” সুকান্তের ওই মন্তব্যকে নারীবিদ্বেষী বলেই মনে করছেন তৃণমূল বিধায়ক। এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করারও হঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
সুকান্তের ওই মন্তব্যের বিরোধিতা করে লাভলী বলেন, “আমি নাকি মিথ্যাচার করেছি, কারচুপি করেছি। বিজেপির মহিলাদের প্রতি ঘৃণা এবং বাঙালির প্রতি বিদ্বেষের আবার প্রতিফলন দেখলাম আমরা।” তাঁর অভিযোগ, ওই মন্তব্যের ফলে রাজ্যের একজন বাঙালি বিধায়কের সম্পর্কে সর্বসমক্ষে সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা হয়েছে। কিছু না জেনেই অপপ্রচারের চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ লাভলীর। তিনি বলেন, “গোটা রাজ্যে বিজেপি রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তা-ও হাফ প্যান্ট। ফুল প্যান্ট ওনার কপালে জোটেনি। এই রাজনৈতিক হতাশার জায়গা থেকেই মিথ্যাচার করছেন। কারচুপি করা ওঁর স্বভাব। ওঁরা ইভিএমেও কারচুপি করেন। আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কোনও কারচুপি বা মিথ্যাচার নেই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে একজন মহিলা বিধায়ককে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন এবং পাবলিক ফোরামে তাঁর সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন।”