Advertisement
E-Paper

‘পারফরম্যান্স’-ই শেষ কথা! ফের বার্তা দিলেন অভিষেক, কল্যাণ-আবহে তৃণমূল সেনাপতি জানিয়ে দিলেন, ‘দলের ঊর্ধ্বে কেউ নয়’

সূত্রের খবর, প্রায় চার হাজার নেতার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে অভিষেক জানিয়েছেন, যে বুথে ১০০-র বেশি ভোটে হার হবে, সেই বুথের সভাপতি বদল হবে। দায়িত্ব নিয়ে যদি কেউ কাজ না করতে পারেন, তা হলে তাঁকে পদ ছেড়ে দিতে হবে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২৫ ২০:৪৪
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূলে ফিরে এল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসংস্কৃতি! ফেরালেন অভিষেকই। কাজ না করলে দলে জায়গা নেই— মঙ্গলবার দলীয় নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আবার সেই বার্তা দিলেন। সেই সূচকে এ বার যে তৃণমূল বুথস্তরের সাংগঠনিক রদবদলের পথেও হাঁটবে, সেই ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন শাসকদলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তৃণমূল সূত্রে খবর, অভিষেক আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, দলের ঊর্ধ্বে কেউ নেই। যেমন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়-পর্বেও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। সেই নিয়েও দলীয় নেতাদের অভিষেক বার্তা দিয়েছেন বলে খবর।

বৈঠকে অভিষেক বার বার দলীয় বৈঠকে জানিয়েছেন, তিনি কাজ (পারফরম্যান্স)-এ বিশ্বাসী। ২০২৪ সালের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেও তিনি বলেছিলেন, যেখানে যেখানে তৃণমূল লোকসভা ভোটে খারাপ ফল করেছে, সেখানে সেখানে সাংগঠনিক বদল হবে। মাস দুয়েক আগে জেলাস্তরের সংগঠনে সেই রদবদল করেছে তৃণমূল। বেশ কয়েকটি জেলায় সভাপতি বদল হয়েছে। কাউকে ব্লক স্তর থেকে নিয়ে আসা হয়েছে জেলা স্তরে। আবার কারও পদ তুলে দেওয়া হয়েছে। অভিষেক সেই রদবদলের পরেও স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘পারফরম্যান্স’-ই হল সেই বদলের সূচক। আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তৃণমূল সূত্রে খবর, অভিষেক মঙ্গলবার বার্তা দেন, ‘পারফরম্যান্স’-এর ভিত্তিতে বুথস্তরেও এ বার সাংগঠনিক রদবদল হবে।

মঙ্গলবার দলের সর্বস্তরের নেতা, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করেন অভিষেক। দলের সমস্ত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি, সাংসদ, বিধায়ক, পুরনিগমের মেয়র, ডেপুটি মেয়র, চেয়ারম্যান, পুরসভাগুলির চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের সমস্ত সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে খবর। পাশাপাশি, দলের শাখা সংগঠনগুলির সভাপতি, মূল দলের রাজ্য কমিটির সকল সদস্য এবং কলকাতা কর্পোরেশনের কাউন্সিলরেরাও বৈঠকে ছিলেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। বীরভূম এবং উত্তর কলকাতার ক্ষেত্রে কোর কমিটির সমস্ত সদস্যকেও ডাকা হয় বৈঠকে। বৈঠকের শুরুতে প্রারম্ভিক বক্তব্য পেশ করেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। তার পর বলেন অভিষেক। সূত্রের খবর, প্রায় চার হাজার নেতার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে অভিষেক জানিয়েছেন, যে বুথে ১০০-র বেশি ভোটে হার হবে, সেই বুথের সভাপতি বদল হবে। দায়িত্ব নিয়ে যদি কেউ কাজ না করতে পারেন, তা হলে তাঁকে পদ ছেড়ে দিতে হবে। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, যে বুথে বার বার দল হারছে, সেখানে যাঁরা দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের কড়া বার্তা দিয়েছেন অভিষেক। তিনি জানিয়েছেন, ওই নেতাদের আর দায়িত্বে থাকার অধিকার নেই। সকলের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য বলে জানিয়েছেন তিনি। অভিষেকের স্পষ্ট বার্তা, কারও পায়ে ধরে দলে থাকা যাবে না। দল থাকলে, তবেই নেতারা থাকবেন, মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, এটা তুই বড় না, মুই বড় করার সময় নয়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই যে দলের সর্বময় নেত্রী, তা স্পষ্ট করে দিয়ে অভিষেক বলেছেন, সকলকে নেত্রীর নেতৃত্বেই কাজ করতে হবে। বুথে বুথে লড়াই করে জয় ছিনিয়ে আনতে হবে। সোমবার মমতা ভার্চুয়াল বৈঠক করেছিলেন দলের সাংসদদের সঙ্গে। তার পর লোকসভার মুখ্য সচেতক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন কল্যাণ। তার পর অভিষেককে কল্যাণকে ফোন করেছিলেন। বলেছিলেন, বৃহস্পতিবার দিল্লি গিয়ে তিনি শ্রীরামপুরের সাংসদের সঙ্গে কথা বলবেন। কিন্তু তার আগে মঙ্গলবারই কল্যাণের ইস্তফা গ্রহণ করা হয় দলের তরফে। অনেকের মতে, ইস্তফা গ্রহণ করে কল্যাণকে এই বার্তাই দেওয়া হয়েছে যে, দলের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার দলীয় নেতাদের আরও এক বার তা মনে করিয়ে দেন অভিষেক। তা ছাড়াও দলীয় নেতাদের কিছু বার্তা দিয়েছেন অভিষেক।

চারটি বিষয়

তৃণমূল সূত্রে খবর, নেতাদের চারটি বিষয়ে প্রচার জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। এক, ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’। দুই, কেন্দ্রের বঞ্চনা। তিন, বাংলার সম্মানের উপরে আঘাত। চার, ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)। বিধানসভা ভোটের আগে এই চারটি বিষয়ে নেতাদের প্রচার করতে বলেছেন তিনি। এর মধ্যেই আরও এক দফা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকার ‘স্ক্রুটিনি’ করার কথাও অভিষেক বলেছেন বলে খবর। দলীয় সূত্রে খবর, অভিষেক জানিয়েছেন, প্রচারের আখ্যান হবে— বিজেপি মুখে বলছে আত্মনির্ভর ভারত। মমতা করে দেখাচ্ছেন স্বনির্ভর বাংলা। মূলত, কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনা এবং বাংলার প্রতি বিজেপির ‘ঘৃণা’-কে প্রচারে তুলে ধরার কথা অভিষেক জানিয়েছেন বলে খবর।

ছোট বৈঠক

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিষেক দলের নেতাদের বলেছেন, বড় বৈঠক করতে হবে না। পরিবর্তে ছোট বৈঠকে গুরুত্ব দিতে হবে। বুথস্তরে গিয়ে ২০-২৫ জনকে নিয়ে সভা করতে হবে। দরকারে চৌকি পেতে বসে বৈঠক করতে হবে। মাইক না পেলে খালি গলায় জনবহুল এলাকায় বক্তৃতা করতে হবে নেতাদের। তৃণমূল সূত্রে খবর, সাংসদ, বিধায়কদের ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’-এ নিয়মিত যেতে বলেছেন অভিষেক।

‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’

সরকারের ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ যাতে বেশি করে অংশগ্রহণ করেন, সেই বিষয়টি দলের নেতা-কর্মীদের নিশ্চিত করতে বলেছেন অভিষেক। এই কর্মসূচির সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে তৃণমূল যে সংগঠনকে নামাবে, তা আগেই স্পষ্ট হয়েছিল। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক ভাবে তা বলেছেন অভিষেক। এই কর্মসূচিতে এলাকার সাধারণ মানুষ যে সব দাবি করছেন, সেই দাবিগুলি পর্যালোচনা করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করাতে হবে বলেও জানিয়েছেন অভিষেক। সূত্রের খবর, অভিষেক আরও জানিয়েছেন, মানুষের দাবির ভিত্তিতে যাতে বরাদ্দ ১০ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। সেই টাকা খরচ করার ক্ষেত্রে যেন কোনও নেতা, পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কিংবা কাউন্সিলর বা পুরসভার প্রধানদের হস্তক্ষেপ না থাকে, সে দিকেও অভিষেক নজর দিতে বলেছেন বলে খবর।

এসআইআরে নজর

নির্বাচন কমিশন যে এসআইআরের কাজ শুরু করেছে, সেই কাজ করতে বাড়ি বাড়ি আসবেন বিএলও (বুথ লেভেল অফিসার)-রা। তৃণমূল সূত্রে খবর, ওই প্রক্রিয়ার উপর বুথের দায়িত্বে থাকা নেতাদের সজাগ দৃষ্টি রেখে চলতে বলেছেন অভিষেক। কোনও বিষয়ে প্রয়োজন হলে শীর্ষ নেতৃত্বকে জানাতে হবে। এই কাজে খামতি হলে তা বরদাস্ত করা হবে না বলে তিনি বার্তা দিয়েছেন বলে খবর। সূত্রের খবর, তিনি আরও জানিয়েছেন, বিজেপি রাজ্যের বাসিন্দাদের ভোটদানে বাধা দিতে চাইছে। রাজ্যে লড়তে হবে, কোর্টে লড়তে হবে, নির্বাচন কমিশনেও লড়তে হবে বলে বার্তা দিয়েছেন তিনি।

মানুষের কাছে

তৃণমূল সূত্রে খবর, অভিষেক ভার্চুয়াল বৈঠকে বিধায়কদের আরও বেশি করে মানুষের কাছে যেতে বলেছেন। বছর ঘুরলে বিধানসভা নির্বাচন। তা মাথায় রেখেই অভিষেক বলেছেন, কতটা কাজ করতে পারবেন বিধায়কেরা, তা পরের বিষয়। আগে মানুষের কথা শুনতে হবে। পাশাপাশি, তিনি ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার পরামর্শও দিয়েছেন বলে খবর। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিষেক হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘আমি-তুমি’-র রাজনীতি করলে পরিণাম খারাপ হবে।

‘জয় বাংলা’

আসন্ন নির্বাচন নিয়েও অভিষেক বিশেষ ‘বার্তা’ দিয়েছেন বলে খবর। তিনি জানিয়েছেন, এই নির্বাচন শুধু নির্বাচন নয়। বিজেপি জিতলে সকলকে ‘বাংলাদেশি’ বলা হবে। এই রাজ্যে তৃণমূল কোনও ভাষার মানুষকে অপমান করেনি বলেও জানিয়েছেন অভিষেক। তৃণমূল সূত্রে খবর, কোনও বিজেপি নেতাকে দেখলেই তৃণমূল নেতাদের জয় বাংলা বলে অভিবাদন করার কথা জানিয়েছেন তিনি। বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের সূত্রে খবর, অভিষেক এই প্রশ্নও তুলেছেন যে, দেশের রাষ্ট্রপতি এসে বলেছেন জয় বাংলা। তবে কি তিনি বাংলাদেশি? বিজেপি নেতারা কি তাঁকেও তাড়া করবেন? অভিষেক বৈঠকে সেই প্রশ্ন তুলেছেন বলে খবর।

Abhishek Banerjee TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy