Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Abhishek Banerjee's Sister in Law

অভিষেকের শ্যালিকার রক্ষাকবচ নিয়ে মামলায় রায়দান স্থগিত রাখল কলকাতা হাই কোর্ট

ইডির অভিযোগ ছিল, মেনকা নিজের নাগরিকত্ব গোপন করে গিয়েছেন আদালতে। তাইল্যান্ডের নাগরিক হয়েও নিজেকে এক বার ভারতের নাগরিক, এক বার ভারতের বাসিন্দা বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

মেনকা গম্ভীরের রক্ষাকবচের  বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরেই আবেদন করে আসছে ইডি।

মেনকা গম্ভীরের রক্ষাকবচের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরেই আবেদন করে আসছে ইডি। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:৫৯
Share: Save:

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্যালিকা মেনকা গম্ভীরের রক্ষাকবচ বজায় থাকবে কি না, তা বৃহস্পতিবারও জানা গেল না। কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিল, আপাতত তারা এই মামলায় রায়দান স্থগিত রাখছে। এ ব্যাপারে হাই কোর্ট কী রায় দেয়, তার জন্য আপাতত অপেক্ষা করতে হবে। তবে বৃহস্পতিবার মামলাটির দুই পক্ষ— ইডি এবং মেনকার আইনজীবীদের সমস্ত বক্তব্য, যুক্তি এবং পাল্টা যুক্তি শুনেছে আদালত।

মেনকার বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আবেদন করেছিল ইডি। কয়লা পাচার মামলায় অভিষেকের শ্যালিকাকে জেরা করার ব্যাপারে যে রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছিল, তার বিরোধিতা করেই আদালতে গিয়েছিল ইডি। তাদের বক্তব্য ছিল, আদালতে নিজের ব্যাপারে তথ্য গোপন করেছেন মেনকা। তাই তাঁর রক্ষাকবচ পাওয়ার অধিকার নেই।

অভিষেক শ্যালিকার এই মামলাটি বুধবারই উঠেছিল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। তার আগে বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্যের একক বেঞ্চেও মেনকার বিরুদ্ধে আবেদন করেছিল ইডি। তারা বলেছিল, মেনকা নিজের নাগরিকত্ব গোপন করে গিয়েছেন আদালতে। তাইল্যান্ডের নাগরিক হয়েও নিজেকে এক বার ভারতের নাগরিক, এক বার ভারতের বাসিন্দা বলে উল্লেখ করেছেন। এই যুক্তি দিয়েই ইডি বলে, আদালতে নিজের ব্যাপারে অসত্য বলে রক্ষাকবচ নিয়েছিলেন মেনকা। তাই সেই রক্ষাকবচ খারিজ হওয়া উচিত।

উল্লেখ্য, এর আগে ইডি যখন হাই কোর্টের মেনকার রক্ষাকবচ খারিজ করার আবেদন করেছিল, তখন আদালতের একক বেঞ্চ অন্তর্বর্তী কালীন নির্দেশ দিয়ে বলেছিল, মেনকাকে গ্রেফতার করা বা তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না। একই সঙ্গে আদালত জানিয়েছিল, অভিষেক-শ্যালিকাকে কলকাতার আঞ্চলিক দফতরে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিল্লিতে তলব করতে পারবে না। একক বেঞ্চের এই নির্দেশকেই চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে গিয়েছিল ইডি। কিন্তু বুধবার হাই কোর্টের বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি উঠলেও তার শুনানি সময়ের অভাবে শেষ করতে পারেনি হাই কোর্টের বেঞ্চ।

বুধবার মেনকা মামলায় একের পর এক যুক্তি সাজিয়ে আদালতে পেশ করে ইডি। প্রথমে ইডির তরফে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল (এএসজি) অশোককুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মেনকা যে ভারতীয় নাগরিক নন, সেই তথ্য তিনি একক বেঞ্চে লুকিয়ে গিয়েছেন। মেনকা আসলে তাইল্যান্ডের নাগরিক। অথচ তাঁকে ভারতীয় নাগরিক ভেবেই তাঁর মামলা গ্রহণ করা হয়। এটি এক ধরনের প্রতারণা।’’ তাই কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল বলেন যে, মেনকার এই অসত্যবচনের জন্যই তাঁর রক্ষাকবচের আবেদনটি বাতিল হওয়া উচিত।

কেন্দ্রের তরফে আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্যও আদালতকে বলেছিলেন, ‘‘মেনকার মামলাগুলি একটু খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে নাগরিকত্ব নিয়ে তাঁর দু’টি অবস্থান রয়েছে। তিনি কখনও বলেছেন তিনি ভারতের নাগরিক। আবার কখনও বলেছেন তিনি ভারতের বাসিন্দা। এ দিকে, মেনকার পাসপোর্ট বলছে, তিনি তাইল্যান্ডের নাগরিক।’’

যদিও মেনকার বিরুদ্ধে ইডির এই সমস্ত যুক্তি খারিজ করে পাল্টা যুক্তি সাজিয়েছিলেন তাঁর আইনজীবী জিষ্ণু সাহা। তিনি বলেছিলেন, ‘‘নাগরিক না হলেও এ দেশে মেনকা দীর্ঘ দিন রয়েছেন। নিজেকে ভারতের বাসিন্দা হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন। ফলে আদালতের দরবারে আর্জি জানানোর অধিকার তাঁর রয়েছে।’’ তা ছাড়া অভিযুক্ত না হয়েও মেনকা তদন্তে বার বার সহযোগিতা করেছেন বলে জানান তাঁর আইনজীবী। এমনকি মেনকা যে রাত ১২টায় তদন্তকারী সংস্থার অফিসে হাজিরা দিয়েছেন, সে কথাও তুলে ধরা হয়েছিল শুনানিতে। বুধবার এই যুক্তি এবং পাল্টা যুক্তির পর্বের পর সময় না থাকায় শুনানি শেষ করতে পারা যায়নি। বুধবার শেষ না হওয়া শুনানি তাই বৃহস্পতিবারও শোনা হবে বলে জানিয়ে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।

সেই মতো বৃহস্পতিবার শুনানি হয় হাই কোর্টের বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে। তাঁরাই এই মামলায় রায়দান আপাতত স্থগিত রেখেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE