Advertisement
E-Paper

জলমগ্ন ঘাটালে ‘কথা না-রাখা’ ডিভিসিকে আক্রমণ মানসের! দেব তুললেন মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে কেন্দ্রের ‘অবজ্ঞার ইতিহাস’

রাজ্য ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের কাজ শুরু করার পরেও চলতি বছরেও জল-যন্ত্রণার কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ তুলছিলেন বিরোধীরা। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুললেন ঘাটালের সাংসদ দেব।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৫ ২০:২৫
(বাঁ দিকে) মানস ভুঁইয়া এবং দেব (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) মানস ভুঁইয়া এবং দেব (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

প্রায় প্রতি বছরই বর্ষায় জলমগ্ন হয়ে পড়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমার বিস্তীর্ণ অংশ। আর সেই সূত্রেই আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান প্রসঙ্গ। চলতি বছরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রাজ্য ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের কাজ শুরু করার পরেও চলতি বছরেও জল-যন্ত্রণার কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ তুলছিলেন বিরোধীরা। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুললেন ঘাটালের সাংসদ দেব। অভিযোগ করলেন যে, ১০ বছর ধরে লোকসভার সব অধিবেশনে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের হয়ে সওয়াল করলেও কেন্দ্র তাতে সাড়া দেয়নি।

রবিবার ঘাটালে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যান রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। রাজ্যকে না জানিয়ে অতিরিক্ত জল ছা়ড়ার জন্য তিনি ডিভিসিকে তোপ দাগেন। কেন্দ্রীয় সংস্থাটির বিরুদ্ধে কথা না-রাখারও অভিযোগ তোলেন। মানস বলেন, “ডিভিসি আমাদের সঙ্গে চুক্তি করল এক, আর কাজ করল আর এক। জল ছাড়ার কথা ৬০ হাজার কিউসেক, কিন্তু ছেড়ে দিল ৭১ হাজার কিউসেক জল। হঠাৎ করে শুক্রবার আর শনিবার রাতে জল ছেড়েছে।” ইতিমধ্যেই এই ‘অসহযোগিতার’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ডিভিসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেচমন্ত্রী।

২০১৪, ২০১৯ এবং ২০২৪— গত তিনটি লোকসভা ভোটেই ঘাটালে রাজ্যের শাসকদলের তুরুপের তাস ছিল ‘মাস্টার প্ল্যান।’ ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের মুখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ঘোষণা করেছিলেন, ওই প্রকল্প রাজ্য সরকার একাই কার্যকর করবে। সেই মতো চলতি বছরের রাজ্য বাজেটে মাস্টার প্ল্যানের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির জন্য আপাতত থমকে রয়েছে মাস্টারপ্ল্যানের কাজ। এই পরিস্থিতিতে রবিবার সাংসদ দেব সমাজমাধ্যমে লেখেন, “বিগত ১০ বছর ধরে লোকসভার সব অধিবেশনে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের সপক্ষে সওয়াল করে এসেছি। অনেক চেষ্টার পরও কেন্দ্রীয় সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। ২০২৪ সালে রাজ্য সরকারই সিদ্ধান্ত নেয় এবং এক তৃতীয়াংশ বাজেট (৫০০ কোটি) বরাদ্দ করে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কাজ শুরু হয়।” পুরো কাজ শেষ করতে কমপক্ষে চার-পাঁচ বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ।

বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ-অভিমান রয়েছে, সে কথাও মেনে নিয়েছেন দেব। তিনি লেখেন, “ঘাটাল এ বন্যা হওয়ার পর মানুষের অভিমান যথারীতি জনপ্রতিনিধিদের উপরেই হবে।” একই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করে সাংসদ লেখেন, “এই দুর্যোগের সময় সরকার এবং প্রশাসন আপনাদের পাশে সব সময় আছে।

পশ্চিম মেদিনীপুর

শুক্রবারের পর নতুন করে জেলার কোথাও ভারী বৃষ্টি না-হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির খানিক উন্নতি হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। সেচমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঘাটালে ১০টি, চন্দ্রকোনা-১ ব্লকে ৫টি, চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত বন্যা কবলিত হয়েছে। জেলার ২ লক্ষ মানুষ বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি আরও জানান, দু’হাজারের বেশি মানুষকে আশ্রয় শিবিরে নিয়ে আসা হয়েছে। কমিউনিটি কিচেনের মাধ্যমে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলায় এখনও বেশ কয়েকটি ত্রাণশিবির চলছে। দেবের সুরেই মানস সকলকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, “বানভাসি মানুষদের কাছে আমাদের আবেদন দুঃখ করবেন না, সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে।”

হাওড়া

ডিভিসি নতুন করে জল ছাড়ায় ফের বিপদের সম্ভাবনা হাওড়া জেলার আমতা-২ ব্লকের ফুলিয়া ভাটোরা দ্বীপ এলাকায়। সেখানে কয়েকটি অস্থায়ী বাঁশের সেতু ভেঙে গিয়েছে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে প্রশাসন। গত কয়েক দিনে ডিভিসি থেকে দফায় দফায় জল ছাড়ার ফলে মুণ্ডেশ্বরী নদীর জলস্তর বেড়েছে। তার পর দফায় দফায় বৃষ্টিতে ফুলে ফেঁপে ওঠে নদী।

বাঁকুড়া

বাঁকুড়ার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গন্ধেশ্বরী, শিলাবতী, কংসাবতী, দামোদর এবং জয়পন্ডা নদীতে জলস্তর বিপদসীমার নীচ দিয়ে বইছে। তবে রবিবার ভোরে নদীগুলির উচ্চ অববাহিকায় ভারী বৃষ্টি হওয়ায় রবিবার দুপুর থেকে ফের জলস্তর বৃদ্ধি পেতে শুরু করে দ্বারকেশ্বর নদে। সিমলাপালের কাছে শিলাবতী সেতু, গন্ধেশ্বরী নদীর উপর থাকা মানকানালি সেতু-সহ জেলার বেশ কিছু সেতু ইতিমধ্যেই জল নেমে যাওয়ায় সেগুলি দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়েছে। জয়পন্ডা নদীর জল ঢুকে তালড্যাংরা ব্লকের যে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল, সেই এলাকা থেকেও জল নেমে গিয়েছে। তালড্যাংরা ব্লকের পাঁচমুড়া-সহ একাধিক ত্রাণশিবির থেকে বন্যাদুর্গতেরা বাড়িত ফিরে গিয়েছেন। বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, লাগাতার বৃষ্টিতে জেলা জুড়ে এক হাজারেরও বেশি কাঁচা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সংখ্যা আগামী দু’-এক দিনে আরও বেশ কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে মনে করছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন।

হুগলি

হুগলিতেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও খানাকুলের বালিপুর এলাকার বিস্তীর্ণ অংশ জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। রবিবার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সেখানে যান রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, “ডিভিসির বাঁধ সংস্কারের জন্য কেন্দ্র কোনও টাকা দিচ্ছে না। বর্ষার সময় জল ছাড়া হচ্ছে। খরা মরসুমে জল ছাড়া হচ্ছে না। তবে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি বিষয়টি দেখছেন। ডিভিসি আজ থেকে জল ছাড়া কমাচ্ছে।”

Dev Manas Bhunia Flood Situation ghatal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy