Advertisement
E-Paper

উত্তর কলকাতা তৃণমূলে ব্যাপক রদবদল, সভাপতি পদে আর নেই সাংসদ সুদীপ, সংগঠন চালাবে ৯ জনের কোর কমিটি

সুদীপের বিরুদ্ধে দলের মধ্যে তাঁর বিরোধীদের মূল অভিযোগ ছিল, তিনি সারা বছর সাংগঠনিক কাজে থাকেন না। দলের ‘কঠিন’ সময়ে ঘরে বসে থাকেন। সভাপতি পদ থেকে অপসারণের পরে ঘনিষ্ঠদের অবশ্য যুক্তি, সাংসদ হিসাবে দিল্লিতে তাঁকে বেশি সময় দিতে হচ্ছে বলেই এই সিদ্ধান্ত।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২৫ ১৯:৪৭
TMC removes Sudeep Banerjee from North Kolkata organizational district president post, appoints 9-member core committee

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃণমূলের উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দিলেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

গুঞ্জন ছিল। কিন্তু তা তেমন জোরালো হয়নি নামের ওজনে। কিন্তু সেই ওজন শেষমেশ ছাপ ফেলতে পারল না। তৃণমূলের উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদ থেকে প্রবীণ সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়েই দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শাসকদলের তরফে সাংগঠনিক রদবদলের যে তালিকা শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে উত্তর কলকাতার সংগঠন থেকে সভাপতি পদটাই তুলে দেওয়া হল। যেমন করা হয়েছে বীরভূম জেলার ক্ষেত্রেও। সেখানেও ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ নেতা অনুব্রত মণ্ডল আর জেলা সভাপতি পদে নেই। বস্তুত, কেউই নেই। উত্তর কলকাতার মতোই সেখানেও জেলা সভাপতি পদ তুলে দেওয়া হয়েছে।

তালিকা অনুযায়ী সুদীপকে উত্তর কলকাতা জেলা সংগঠনের চেয়ারম্যান করা হয়েছে। যা কার্যত ‘ঔপচারিক’ বলেই মনে করছেন অনেকে। সংগঠন পরিচালনা করবে ৯ জনের কোর কমিটি। তাতে রয়েছেন বেলেঘাটার বিধায়ক পরেশ পাল, মানিকতলার বিধায়ক সুপ্তি পাণ্ডে, কাশীপুর-বেলগাছিয়ার বিধায়ক তথা কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ, চৌরঙ্গির বিধায়ক তথা সুদীপের স্ত্রী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামপুকুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা, জোড়াসাঁকোর বিধায়ক বিবেক গুপ্ত। রয়েছেন স্বর্ণকমল সাহা, জীবন সাহা এবং স্বপন সমাদ্দার।

কোর কমিটি দেখে অনেকেরই কৌতূহল যে, ‘সুদীপ-বিরোধী’ হিসাবে পরিচিত কুণাল ঘোষের নাম কেন নেই? তা হলে কি তাঁকেও ‘বার্তা’ দিল দল? এ ব্যাপারে কুণাল কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, কুণাল রাজ্য সংগঠনের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক। তাঁকে জেলার কোর কমিটিতে রাখা হলে পদের অবনমন হত। যদিও সুদীপকে সভাপতি পদ থেকে সরানোয় কুণাল-শিবিরের উচ্ছ্বাস গোপন থাকেনি।

সুদীপের বিরুদ্ধে দলের অন্দরে তাঁর বিরোধীদের মূল অভিযোগ ছিল, তিনি সারা বছর সাংগঠনিক কাজে থাকেন না। দলের ‘কঠিন’ সময়ে ঘরে বসে থাকেন। সভাপতি পদ থেকে অপসারণের পরে সুদীপের ঘনিষ্ঠদের অবশ্য যুক্তি, সাংসদ হিসাবে দিল্লিতে তাঁকে বেশি সময় দিতে হচ্ছে বলেই এই সিদ্ধান্ত। অনেকে আবার তাঁর অসুস্থতাকেও কারণ বলে উল্লেখ করছেন। যদিও এই যুক্তি অনেকেরই গ্রহণযোগ্য ঠেকছে না। বরং তাঁরা বলছেন, কৃষ্ণনগরে সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে জেলা সভাপতি পদে রেখে দেওয়া হয়েছে। তিনি দিল্লি, কলকাতা, জেলা সবই নিয়মিত করেন। আবার অনেকের বক্তব্য, আরজি কর পর্বে সুদীপ সরে থাকার কারণে তাঁকে আর জেলা সভাপতি পদে রাখা হল না।

গত রবিবার মধ্য কলকাতার একটি রক্তদান শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন সুদীপ। সেখানে নানাবিধ বিষয়ে তাঁর বক্তৃতার ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছিল। তাতে যেমন ভারত-পাক সংঘাত নিয়ে সর্বদল বৈঠকে তিনি অমিত শাহকে কী বলেছিলেন তা শোনা গিয়েছিল, তেমনই নিজের সাংগঠনিক শক্তির কথাও জানান দিতে চেয়েছিলেন লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা। সুদীপকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘অনেকে আমায় জিজ্ঞাসা করছেন, দাদা রদবদলে কী হবে? ছাত্র-যুব সংগঠনে কী হবে? আমি তাঁদের বলছি, কোথায় কী হবে জানি না, তবে উত্তর কলকাতায় আমি যা বলব তা-ই হবে।’’ সেই বক্তৃতা ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করেছিলেন সুদীপের অনুগামীরা। কোনও এক অজ্ঞাত কারণে আবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা মুছেও দেওয়া হয়েছিল। দেখা গেল, আরও একটি রবিবার আসার আগেই সুদীপকে জেলা সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। তবে এ-ও ঠিক যে, তাঁকে জেলা সংগঠনের চেয়ারম্যান পদে রাখা হয়েছে।

কয়েক বছর আগে সুদীপকে উত্তর কলকাতার সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে বিধায়ক তাপস রায়কে সেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু সুদীপই মমতার কাছে দরবার করেন তাঁকে ওই পদ ফিরিয়ে দিতে। যে বিষয়টি প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন মমতাই। শেষপর্যন্ত সুদীপের সঙ্গে নিত্য মনোমালিন্যের কারণে তাপস তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেন।

TMC Sudip Banerjee Mamata Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy