খুনের পরে শোকার্ত পরিজনেরা। ছবি: সুপ্রকাশ চৌধুরী
পরিবারের দাবি, বাড়ি থেকে বেরনোর আগে বলে গিয়েছিলেন, ‘এই আসছি, এসে চা খাব।’ যখন বাড়িতে রমজান মোল্লার (৫৮) খুনের খবর এল, সেই সময়ে সবে উনুনে চায়ের জল ফুটতে শুরু করেছে। আর তার পরেই রোল উঠল কান্নার। গ্রামে অশান্তির আশঙ্কায় শুরু হল পুলিশি টহল।— শনিবার ভাতারের ভূমশোড় গ্রামের তৃণমূল সমর্থক রমজানের খুনের ঘটনার পরে এমনই পরিবেশ ছিল নিহতের পরিবার ও গ্রামে।
পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, এলাকায় গোষ্ঠী-কোন্দলের জন্যই এই ঘটনা ঘটল। জানা গিয়েছে, ভাতার ব্লকে মোট ২০১টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে তৃণমূলের হয়ে মনোনয়ন দিয়েছেন ৩১৯ জন। সম্প্রতি তৃণমূলের জেলা সভাপতি এই ঘটনার হাল বার করার নির্দেশ দেন বলে জানা গিয়েছে। ভাতারের ভূমশোড় গ্রামের বাসিন্দা রমজানের ছেলে খাইরুল জানান, গ্রামে দু’টি সংসদ রয়েছে। তার দু’টিতেই তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর লোকজন প্রার্থী দিয়েছে। অন্য সংসদে তাঁদের হয়ে প্রার্থী দিয়েছেন অবিদা সুলতানা নামে এক জন। আবিদার পরিবারের অভিযোগ, প্রার্থিপদ তুলতে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। এ সব গোলমালেরই প্রতিবাদ করেছিলেন রমজান। প্রার্থী নিয়ে এমন গোলমাল মেটাতে শুক্রবার রাত পর্যন্ত তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে বৈঠকও হয় বলে জানান নিহতের বৌদি সেলিমা বিবি। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘প্রার্থী নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক হয়। আর সকালে দেওরকে হারালাম।’’ যদিও এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এটা গ্রামের বিবাদ। রাজনৈতিক কোনও ঘটনাই নয়। পুলিশ তদন্ত করছে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পেশায় গরু ব্যবসায়ী রমজান এক সময় গ্রামে সিপিএম করতেন। সেই সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগও ওঠে বলে গ্রামবাসী জানান। সেই সময় থেকেই দেড় কাঠা খাস জমিতে দু’কামরার ঘরে স্ত্রী-ছেলেদের নিয়ে থাকতেন রমজান। রাজ্যে পালাবদলের পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। যদিও মৃতের স্ত্রী নাজিফা বিবির দাবি, “ও তো এখন রাজনীতির সঙ্গে সে ভাবে জড়িয়ে ছিল না। তার পরেও কেন এই খুন?’’
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, সম্প্রতি গ্রাম যে পুকুরের অস্তিত্ব নেই, এমন একটি পুকুর সংস্কার দেখিয়ে ৮৬ লক্ষ টাকা তোলা হয়েছে! তা নিয়ে পুলিশ, প্রশাসন-সহ নানা জায়গায় অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ, ওই ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মীরাই ফের প্রার্থী হয়েছেন দেখে বার বার নানা ভাবে ‘সরব’ হয়েছিলেন রমজান। সেই রোষেই এই খুন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানায়।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গিয়েছে, চাল-গম রাস্তায় পড়ে। রাস্তায় পড়ে বোমার সুতলি। রাস্তা ও নর্দমায় জমে রয়েছে চাপ চাপ রক্ত। ঘটনাস্থলের কাছেই অভিযুক্তদের বাড়ি। সব বাড়িই এ দিন ফাঁকা ছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। তবে রমজানের সঙ্গে কারও ‘বিবাদ’-এর কথা মানতে চাননি মৃতের দিদি মনোয়ারা বিবি। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কোনও অশান্তি থাকলে একা একা সাইকেলে চড়ে রেশন আনতে যেত? আমিই চায়ের জল চাপিয়েছিলাম। তার মধ্যেই খুনের খবরটা এল।” এ দিনের ঘটনার পরে প্রকাশ্যে কোনও গ্রামবাসীই মুখ খুলতে চাননি। সুনসান ছিল পাড়ার মোড়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy