Advertisement
E-Paper

বেসরকারি যে কোনও সংস্থায় নিয়োগে ‘রাজনৈতিক সুপারিশ’ নিষিদ্ধ! সর্ব স্তরের নেতাদের নির্দেশ তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের

প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখনও কারাবাসে। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়েই তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য এবং জীবনকৃষ্ণ সাহা একটা বড় সময় জেলে কাটিয়ে এসেছেন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২৫ ১০:৫৭
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

গত ১৪ বছরের শাসনকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে সবচেয়ে বেশি দীর্ঘকালীন অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির ঘটনায়। যে ঘটনায় তৃণমূলের প্রাক্তন মহাসচিব তথা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখনও কারাবাসে। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়েই পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য এবং বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাকে একটা বড় সময় জেলে থাকতে হয়েছে। এমন ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি যে কলুষিত হয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আগামী বছর ভোটের আগে সেই ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে কোমর বেঁধে ময়দানে নামছেন শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের মূল সংগঠন তো বটেই, শাখা সংগঠনের প্রধানদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বেসরকারি কোনও সংস্থায় নিয়োগের ক্ষেত্রে দলের নাম ভাঙিয়ে কোনও সুপারিশ করা যাবে না।

বেসরকারি সংস্থাগুলির পাশাপাশি পুরসভাগুলিকেও ওই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হচ্ছে। কোন পুরসভা কোন ঠিকাদারি সংস্থাকে কাজে নিয়োগ করবে, তা-ও দলের নেতা, মেয়র, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর বা পঞ্চায়েত প্রশাসনের নির্বাচিত কোনও জনপ্রতিনিধি সুপারিশ করতে পারবেন না। তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘গত কয়েক বছরে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এমন কিছু অভিযোগ পেয়েছেন, যেগুলি যথেষ্ট গুরুতর। যেমন কোনও ঠিকাদারি সংস্থা রাস্তা সারাই বা কোনও বিভাগে কাজের দায়িত্ব পেয়েছে। অথচ দলের নেতারা সেখানে মাতব্বরি করে নিজেদের লোক ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এমনও অভিযোগের প্রমাণ মিলেছিল, যেখানে নিয়োগকারী নেতা একাধিক কর্মীকে কাজে ঢুকিয়ে তাদের থেকে কাটমানিও নিয়ে নিয়েছেন। এমন অভিজ্ঞতা থেকে কড়া নির্দেশ দিয়ে সব ধরনের নিয়োগ থেকে দলীয় নেতাদের দূরে থাকতে বলা হয়েছে।’’

তবে শাসক শিবিরের এই বোধোদয়কে ‘বিলম্বিত’ বলে মনে করছে দলেরই একাংশ। তাদের বক্তব্য, ২০২১ সালে বিজেপি-কে হারিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছিল। পার্থ-মানিক-জীবনকৃষ্ণ তো বটেই, সদ্যপ্রয়াত তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহার নামও শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িয়েছিল। কিন্তু তখন এই ধরনের কোনও নির্দেশ তখন আনুষ্ঠানিক ভাবে দেওয়া হয়নি। মাঝেমধ্যে এমন আলোচনা চললেও বিষয়টি সেই স্তরেই থেকে গিয়েছিল। কিন্তু শাসক শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে নিয়োগ দুর্নীতিকে বিরোধীরা ‘হাতিয়ার’ করবে। তাই এখন থেকেই দলীয় নেতাদের যাবতীয় নিয়োগ থেকে দুরে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তৃণমূলের একটি সূত্রের বক্তব্য, বৃহত্তর কলকাতার কয়েকটি শিল্পাঞ্চল থেকে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছেই ওই মর্মে অভিযোগ জমা পড়েছিল। যাতে বলা হয়েছিল, শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের একাংশ তাঁদের মর্জিমাফিক লোক নিয়োগের জন্য বিভিন্ন কলকারখানায় জোরাজুরি করছেন। অনেক ক্ষেত্রে টাকা নিয়ে নিয়োগ করা হয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগের বিনিময়ে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনাবলির কথা জানার পরেই তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী মারফত শ্রমিক সংগঠনের সংশ্লিষ্ট নেতাদের সর্তক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভা ভোটের আগে সেই সতর্কতা আরও কঠোর ভাবে প্রয়োগ করতে চাইছে তৃণমূল। পুরসভায় ‘অযোগ্য’ লোক ঢুকিয়ে নেতাদের প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টাও রুখতে চান তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তৃণমূলের এক শাখা সংগঠনের প্রধানের কথায়, ‘‘দলের কোনও স্তরের নেতাই এ বার কোনও ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে দাদাগিরি ফলাতে পারবেন না। কোনও নেতার বিরুদ্ধে যদি ওই বিষয়ে কোনও অভিযোগ ওঠে এবং তা প্রমাণিত হয়, তা হলে তাঁকে শাস্তি পেতে হবে। কোনও ব্যক্তিবিশেষের দুর্নীতির দায় আর রাজ্য সরকার বা দল নেবে না।’’

TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy