নির্ধারিত সময়ে ভোট হলে আগামী বছর এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। তার এখনও বাকি এক বছরের বেশি। কিন্তু তৃণমূল বিধায়কদের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা নিয়ে ফের তাঁরাই বাংলার ক্ষমতায় ফিরবেন। সেই সঙ্গে তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী তথা রাজ্যের তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন যে, বাংলায় তৃণমূল একাই লড়বে। কারও সাহায্য তাদের প্রয়োজন নেই।
বিধানসভায় তৃণমূল পরিষদীয় দলের সঙ্গে সোমবার বৈঠক করেন মমতা। সূত্রের খবর, সেখানেই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, ২০২৬ সালের ভোটে তৃণমূলই দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরবে। তৃণমূল সূত্রে এ-ও খবর যে, প্রত্যয়ের সঙ্গেই মমতা বিধায়কদের চতুর্থ বার সরকার গঠনের কথা বলেছেন। লোকসভা ভোটের পর থেকেই তৃণমূলের একাধিক নেতা বলতে শুরু করেছিলেন, ২০২৬ সালে বাংলায় ২৫০-র বেশি আসন নিয়ে চতুর্থ বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হবেন মমতা। কিন্তু সেই কথা ছিল মুখপাত্রদের স্তরেই। সোমবার মমতা নিজেই সেই কথা বললেন পরিষদীয় দলের বৈঠকে।
গত কয়েক মাসে প্রশাসন ও সংগঠনে মমতার ভূমিকায় স্পষ্ট যে, তিনি বিধানসভা ভোটের লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। সোমবারের বৈঠকে বিধায়কদের সে দিকে লক্ষ্য রেখেই করণীয় বিষয়ে আলোকপাত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী।
আরও পড়ুন:
সরকারের পরিষেবামূলক প্রকল্প যে মমতার জনসমর্থন ধরে রাখার অন্যতম ‘চাবিকাঠি’, তা গত কতগুলি ভোটের ফলাফলেই স্পষ্ট। কিন্তু দিল্লি বিধানসভা উপনির্বাচনে আম আদমি পার্টির (আপ) হারকে বিরোধী শিবিরের অনেকেই তৃণমূলের জন্য ‘অশনিসঙ্কেত’ বলে দাবি করতে শুরু করেছিলেন। তাঁদের ব্যাখ্যা ছিল, দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল ‘খয়রাতি’ (ফ্রি) দিয়ে ভোট পেতেন। কিন্তু ২০২৫ সালের ভোটে তাঁর সেই রাজনীতি কাজ করেনি। সেই সূত্রেই বিজেপির অনেকে বলতে শুরু করেছিলেন, ‘‘দিল্লিতে ফ্রি হেরেছে। বাংলাতেও শ্রী হারবে।’’ ওই ‘শ্রী’ বলে সামগ্রিক ভাবে ‘কন্যাশ্রী’, ‘ঐক্যশ্রী’, ‘রূপশ্রী’র মতো মমতার সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পকে কটাক্ষ করা হয়েছিল। দিল্লির বাঙালি মহল্লা-সহ বিভিন্ন এলাকায় জয়কে সামনে রেখে শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদারেরা বাংলার ভোটের জন্য তাল ঠুকতে শুরু করেছেন। তাঁদের দাবি, দিল্লির বাঙালিদের মতো আগামী বছর বাংলার বাঙালিরাও তৃণমূলকে প্রত্যাখ্যান করবেন। শাসক শিবিরের অনেকের মতে, সেই প্রেক্ষিতে মমতা দ্রুত দলের বিধায়কদের জানিয়ে দিলেন যে, দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা নিয়ে আবার তৃণমূলই ক্ষমতায় ফিরবে। অনেকের ব্যাখ্যা, মমতা চেয়েছেন দিল্লির ফলাফল এবং তার পরবর্তী সময়ে রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল বিজেপির নেতাদের আস্ফালন যাতে তৃণমূলের বিধায়কদের উপর কোনও ‘নেতিবাচক’ না ফেলতে পারে। দলের মধ্যে যাতে আত্মবিশ্বাসের অভাব না তৈরি হয়। পরিষদীয় দলের বৈঠকে সেই বার্তাই দিতে চেয়েছেন মমতা।
বস্তুত, মমতা যে ভাবে একা লড়ার কথা বলেছেন, তার মধ্যেও ‘বার্তা’ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত লোকসভা ভোটের পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে ‘তৃণমূল-বিরোধী’ বলে পরিচিত অধীর চৌধুরীকে সরিয়ে দিয়েছিল কংগ্রেস হাইকমান্ড। অধীরের স্থলাভিষিক্ত করা হয় তুলনায় তৃণমূলের প্রতি ‘নরম’ বলে পরিচিত শুভঙ্কর সরকারকে। তার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল, এ বার কি বামেদের সঙ্গ ছেড়ে কংগ্রেস তৃণমূলের সঙ্গে যাবে? গত কয়েক মাসে এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন শুভঙ্কর-সহ প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। সাম্প্রতিক উপনির্বাচনগুলিতেও একা লড়েছে কংগ্রেস। তবে সোমবার তৃণমূল পরিষদীয় দলের বৈঠকে পরিস্থিতি স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা— তৃণমূল একাই দুই-তৃতীয়াংশ। তাদের অন্য কারও সাহায্য প্রয়োজন নেই।