প্রতীকী ছবি।
সাধের গোল্ডেন রিট্রিভারটি ছিল অকৃতদার মানুষটির প্রাণাধিক প্রিয়। মনিবের গায়ে কেউ সামান্য ধাক্কাটুকু দিলে তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ত সে। সঙ্গে ছিল আরও দু’টি কুকুর। তাদের নিয়েই সংসার। সকাল থেকে তিনটি কুকুর বাড়ি মাথায় করে রাখত।
মঙ্গলবার বেলা পর্যন্ত না মনিব, না তাঁর পোষ্যেরা— সাড়া মেলেনি কারওরই। বেলা বাড়তে দেখা গেল, বিছানায় পড়ে মনিব রাসমোহন ঘোষ ওরফে বাবুয়া (৫৩)। মুখে রক্তের দাগ। ঘরের মেঝেয় তখনও বেঘোরে ঘুমোচ্ছে তাঁর পোষ্যেরা। মঙ্গলবার নৈহাটির রাজেন্দ্রনগরের ঘটনা। বাবুয়া মাছের ব্যবসা করতেন। পুলিশ জানায়, ক্লোরোফর্ম জাতীয় কিছু স্প্রে করে কুকুরদের ঘুম পাড়িয়ে বাবুয়াকে খুন করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, বুকে মাথায় ভারী কিছুর আঘাতেই তাঁর মৃত্যু।
খুনের কারণ নিয়ে ধন্দে পুলিশ। বাবুয়ার প্রচুর সোনার গয়না ছিল। খোয়া গিয়েছে সেগুলি। আলমারিতে রাখা ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য লগ্নি-নথিরও হদিস মেলেনি। তবে চুরিই কারণ কিনা, তা নিয়ে পুলিশ নিশ্চিত নয়।
কারণ, বাবুয়াদের ৫ ভাইয়ের মধ্যে মারা গিয়েছেন এক জন। বাকিরা কমবেশি পারিবারিক মাছের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ভিনরাজ্যেও ব্যবসা রয়েছে তাঁদের। বাবা নীলু ঘোষ মাছ চাষের কৃতিত্বের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার পান।
বাবুয়া বিয়ে করেনননি। দোতলা বাড়ির একতলার একটি বিশাল ঘরে থাকতেন। এক তলায় আরও চারটি ঘরে পরিবারের অনেকে থাকেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়মিত মদ্যপান করতেন বাবুয়া। তাঁর বৌদি তনুজা ঘোষ জানান, সোমবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন দেওর। খাওয়া সেরে রাতে ফের বাড়ি থেকে বেরোতে যান। ভাইপো বারণ করায় আর বেরোননি। ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়েন। কুকুর তিনটিও ঘরে ঢুকে পড়ে। সকাল সাড়ে ৯টার পরে ঘটনা জানাজানি হয়।
এলাকায় জনপ্রিয় মুখ বাবুয়া ছিলেন তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। মঙ্গলবার নৈহাটির পুরপ্রধান-সহ বহু তৃণমূল-নেতা তাঁর বাড়িতে আসেন। দুপুরে পুলিশ কুকুর বাড়িতেই ঘুরেছে। বাইরে যায়নি। যা পুলিশকে ভাবাচ্ছে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জোন ১) কে কান্নন বলেন, ‘মনে হচ্ছে, পরিচিত কেউ খুন করেছে। দরজার হুড়কো বা ওই ধরনের ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়।’’ বাড়ির বাইরের কোলাপসিবল গেটটি ভাঙা ছিল। বাড়ির কেউ শব্দ পেলেন না কেন, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy