Advertisement
E-Paper

ছয়ে ছক্কা হাঁকানো চ্যালেঞ্জ শাসক তৃণমূলের, ‘অধরা’ মাদারিহাটের মাটিতে জোড়া ফুল ফোটানোই মূল লক্ষ্য

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে মাদারিহাটে ২৯ হাজার ভোটে হেরেছিল তৃণমূল। তবে তিন বছরের মধ্যে গত লোকসভায় ব্যবধান কমে গিয়েছিল প্রায় ১৮ হাজার ভোটের। যা ‘ইতিবাচক’ বলে মনে করছে তৃণমূল।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫০
Mamata Banerjee

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —গ্রাফিক আনন্দবাজার অনলাইন।

সাড়ে ১৩ বছর পার হয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল শাসনের। একটার পর একটা ভোট গিয়েছে আর বিধানসভা আসনের নিরিখে ‘প্রতাপ’ বেড়েছে তাদের। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ‘অধরা’ থেকে গিয়েছে আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট বিধানসভা। উপনির্বাচনে ছয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে সেই মাদারিহাটেই জোড়াফুল ফোটাতে চায় শাসকদল।

বুধবার রাজ্যের যে ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হতে চলেছে, তার মধ্যে শুধু মাদারিহাটই তৃণমূলের জেতা ছিল না ২০২১ সালের ভোটে। তবে ২০২১ কেন? এ যাবৎ কোনও ভোটেই মাদারিহাটে জিততে পারেনি জোড়াফুল শিবির। চা-বাগান ঘেঁষা এই আসনটি ১৯৭৭ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ছিল বাম শরিক আরএসপি-র দখলে। ২০১৬ এবং ২০২১ সালের ভোটে মাদারিহাটে বামপন্থীরা হেরেছিলেন। জিতেছিলেন বিজেপির মনোজ টিগ্গা। সেই মনোজকে এ বার লোকসভায় দাঁড় করিয়েছিল বিজেপি। আলিপুরদুয়ার আসন থেকে তিনি জিতে সাংসদ হয়েছেন। সে কারণেই মাদারিহাটে উপনির্বাচন হচ্ছে।

মাদারিহাট জেতাতে সেখানে কার্যত মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইক। প্রকাশের দাবি, ‘‘মাদারিহাট জিতবই। ২৩ তারিখ মিলিয়ে নেবেন। প্রথম বার মাদারিহাট জিতবে তৃণমূল।’’ বিজেপি অবশ্য দাবি করেছে, ‘সঠিক’ ভাবে ভোট হলে তারাই মাদারিহাট জিতবে। যদিও রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, বিজেপির প্রচার বা নেতাদের শরীরী ভাষা দেখে মনে হচ্ছে না মাদারিহাট ধরে রাখার জন্য লড়ছে তারা।

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে মাদারিহাটে ২৯ হাজার ভোটে হেরেছিল তৃণমূল। তবে গত লোকসভায় সেই ব্যবধান অনেকটা কমে যায়। বিজেপি মাদারিহাট থেকে ১১ হাজার ভোটে ‘লিড’ পায়। অর্থাৎ, তিন বছরের মধ্যে ব্যবধান কমে গিয়েছিল প্রায় ১৮ হাজার ভোটের। যাকে ‘ইতিবাচক’ বলেই মনে করছে তৃণমূল। মাদারিহাটের আদিবাসী মহল্লায় খ্রিস্টান ভোটে বিজেপির যে ‘আধিপত্য’ তৈরি হয়েছিল, তা-ও এ বার ভাঙা যাবে বলে মনে করছে তৃণমূল। উপনির্বাচনে খ্রিস্টান ভোটের ক্ষেত্রে প্রাক্তন সাংসদ জন বার্লা কী ভূমিকা নিচ্ছেন, বিজেপির প্রথম সারির নেতারা একান্ত আলোচনায় সে বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন। ২০১৯ সালের লোকসভায় বার্লাকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। ওই ভোটে তৃণমূলের থেকে আসনটি ছিনিয়ে নিয়েছিল পদ্মশিবির। বার্লাকে কেন্দ্রে মন্ত্রীও করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তাঁকে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে আর টিকিট দেয়নি বিজেপি। তার পর থেকেই বার্লার ভূমিকা নিয়ে নানাবিধ জল্পনা রয়েছে। উপনির্বাচন পর্বেই তৃণমূল নেতাদের নিজের বাড়িতে ডেকে বৈঠক করেছিলেন বার্লা। যে ঘটনা বিজেপির ‘সন্দেহ’ কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছে।

উপনির্বাচনের বাকি পাঁচটি আসন ২০২১ সালে তৃণমূলেরই জেতা ছিল। তার মধ্যে দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের তুলনায় ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে ব্যবধান বাড়িয়েছিল তৃণমূল। সেগুলি হল কোচবিহারের সিতাই এবং উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়া। কিন্তু মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার তালড্যাংরা এবং উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্রে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে ব্যবধান কমেছে তৃণমূলের।

এমনিতে সাধারণত উপনির্বাচনে জেতে শাসকদল। কারণ, এই নির্বাচনে সরকার বদলের কোনও সুযোগ থাকে না। বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সাধারণ নির্বাচনের উত্তেজনাও থাকে না। ফলে বিরোধী শিবিরের ভোটারেরা তুলনায় কম বুথমুখী হন। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। বাম জমানার শেষ দিকে তিনটি বিধানসভার উপনির্বাচনে সিপিএমকে হারিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল। আবার তৃণমূল জমানায় সাগরদিঘি উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোটপ্রার্থীর কাছে তৃণমূলের হার রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল।

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য ছ’টি আসনেই জয় নিয়ে আশাবাদী। সম্প্রতি একান্ত আলোচনায় অভিষেক বলেছেন, ‘‘ছয়ে ছয় হওয়া উচিত। তবে আমি কোনও কেন্দ্রেই প্রচারে যাইনি। তাই ওই ভাবে বলা মুশকিল!’’ পাশাপাশিই অভিষেক বলেন, ‘‘তবে যা ছবি দেখছি, খবর পাচ্ছি, তাতে আশা করি মাদারিহাটও জিতবে তৃণমূল।’’

আরজি কর-কাণ্ডে নাগরিক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল জেলায় জেলায়। যদিও তা মূলত ছিল ছোট শহর এবং মফস্সলে কেন্দ্রীভূত। যে নাগরিক আন্দোলনকে অনেকেই ব্যাখ্যা করেছিলেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে গত ১৩ বছরে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। যে ছ’টি কেন্দ্রে উপনির্বাচন হচ্ছে, তার মধ্যে ‘শহরের আসন’ বলতে নৈহাটি এবং মেদিনীপুর। তৃণমূলও সেখানকার ভোটের ফলাফলে দেখে নিতে চাইছে, নাগরিক আন্দোলনের কোনও প্রভাব ইভিএমে পড়ছে কি না।

Mamata Banerjee Abhishek Banerjee TMC By Election 2024
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy