ভোল বদলাতে চলেছে গড়চুমুক।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে হাওড়ার শ্যামপুরের এই পর্যটনকেন্দ্রের আমূল সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পর্যটন দফতর। কী ভাবে নতুন করে এটি গড়ে তোলা হবে তার রূপরেখা ঠিক করতে আজ, সোমবার পর্যটন দফতরের ইঞ্জিনিয়ার এবং আধিকারিকেরা সরেজমিন পরিদর্শনে আসছেন।
হাওড়া জেলার একদম দক্ষিণ প্রান্তে, গঙ্গা এবং দামোদরের সংযোগস্থলে গড়চুমুকের অবস্থান। গঙ্গা থেকে দামোদরে জোয়ারের জল ঢোকানোর জন্য গড়চুমুকে আছে ৫৮টি গেট সম্বলিত স্লুইস গেট। এটি দেখতে বহু মানুষ আসেন। এখানেই দামোদরের পাড়ে গড়ে উঠেছে গড়চুমুক পর্যটনকেন্দ্রটি। এখানে আছে একটি হরিণ প্রকল্প। যা ইতিমধ্যে কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকে ‘মিনি চিড়িয়াখানা’-র তকমা পেয়েছে।
হরিণ ছাড়া আছে একটি কুমির, একাধিক শজারু, কচ্ছপ, ময়ূর এবং দেশি-বিদেশি পাখি। ‘মিনি চিড়িয়াখানা’র অন্য দিকে রয়েছে গাছগাছালিতে ভরা খোলা মাঠ। শীতের মরসুমে গড়চুমুকে বহু পর্যটক আসেন। মাঠে যেমন চড়ুইভাতিও হয়।
এখানে জেলা পরিষদের বাংলোতে অনেকে রাত্রিবাস করেন। পর্যটনকেন্দ্রটির তত্ত্বাবধান করে জেলা পরিষদ। এর আকর্ষণ দিন দিন বাড়তে থাকায় এই পর্যটনকন্দ্রের সম্ভাবনার কথা সম্প্রতি বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক পুলক রায়।
পুলকবাবুর দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভা থেকেই পর্যটন দফতরকে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দেন। সে জন্যই পর্যটন দফতরের কর্তারা গড়চুমুকে আসছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই প্রকল্পে টাকার অভাব হবে না।’’
তবে, গড়চুমুকে এখনও পরিকাঠামোগত দিক দিয়ে বেশ কিছু খামতি রয়েছে। বাংলো থাকলেও কাছাকাছি খাবারের দোকান নেই। ফলে, এখানে যাঁরা রাতে থাকেন, খাবারের জন্য তাঁরা সমস্যায় পড়েন। রাস্তার সব আলো জ্বলে না। সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা হয়েছিল।
কিন্তু এখন সব বিকল। যেহেতু শীতকালেই বেশি পর্যটক আসেন, তাই নভেম্বরের গোড়ায় এই পর্যটনকেন্দ্রের আগাছা ও জঙ্গল কেটে সাফসুতরো করা হয়। কিন্তু বছরের বাকি সময়ে অযত্নেই পড়ে থাকে পর্যটনকেন্দ্রটি।
পর্যটন দফতর সূত্রের খবর, আমূল সংস্কার করে পর্যটনকেন্দ্রটিকে এমন ভাবে গড়ে তোলা হবে, যাতে বর্তমানে যে সব অসুবিধা রয়েছে, সেগুলি দূর হয় এবং পর্যটকদের সারা বছর আকর্ষণ করতে আরও নতুন কিছু যোগ হয়। পার্ক, নৌকাবিহার, খাবারের স্টল, দোলনা — এ সবও গড়ার পরিকল্পনা করা হবে।
এই পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার সহজ রাস্তা উলুবেড়িয়া হয়ে। উলুবেড়িয়া লেভেল ক্রসিংয়ের উপরে তৈরি হচ্ছে উড়ালপুল। কাজ শেষ পর্যায়ে। কয়েক মাসের মধ্যে সেতুটি চালু হয়ে যাবে। ফলে, লেভেল ক্রসিংয়ের যানজট থাকবে না। একই সঙ্গে উলুবড়িয়া শহরে ওটি রোডের যানজট কমাতে তৈরি হচ্ছে বাইপাস।
এইসব কাজ শেষ হয়ে গেলে কলকাতা থেকে খুব অল্প সময়ে গড়চুমুকে চলে আসা যাবে। তার উপরে পর্যটনকেন্দ্রের যদি সংস্কার হয়, তা হলে, সাপ্তাহান্তিক ছুটি কাটানোর জন্য গড়চুমুক যে আদর্শ পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত হবে, তা স্বীকার করেছেন পর্যটন দফতরের আধিকারিকদের একটা বড় অংশ।