স্কুলে এখন গরমের ছুটি। পর্যটনের ভরা মরসুম। সেই সময়ে সাময়িক ভাবে বন্ধ হল ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। বর্ষার আগে মেরামতির কারণেই বন্ধ রাখা হয়েছে শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটকে পৌঁছোনোর ‘লাইফলাইন’ ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। ফলে যাতায়াতে ভোগান্তির মুখে পড়ছেন পর্যটক থেকে সাধারণ যাত্রীরা। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটকের যে গাড়িভাড়া সাড়ে চার হাজার টাকা ছিল, তা এখন নয় থেকে দশ হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।
ইতিমধ্যেই কালিম্পং জেলা প্রশাসন এই বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করেছে। ন্যাশনাল হাইওয়েজ় অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের (এনএইচআইডিসিএল) তরফেও এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এনএইচআইডিসিএল গত ১০ মে বিজ্ঞপ্তি জারি করে শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক সড়ক যোগাযোগের ‘লাইফলাইন’ ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধের কথা জানিয়েছিল। ১২ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত যান চলাচল কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে তার একটি তালিকাও দিয়েছে তারা। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ১৬ এবং ১৮ মে, এই দু’দিন যান চলাচল করবে জাতীয় সড়কে। এই সময়ে পণ্যবাহী গাড়িও যাবে। তবে ১০ মেট্রিক টনের বেশি পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করার অনুমতি দেওয়া হবে না। ১৫, ১৭ এবং ১৯ মে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জাতীয় সড়কে গাড়ি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
বাণিজ্যিক দিক থেকে হোক বা পর্যটন, ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তা। তা ছাড়া সামরিক দিক থেকেও এই রাস্তার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। পর্যটকদের এই রাস্তা ধরে বছরভর যাতায়াত লেগেই থাকে। তাই সব দিক বিবেচনা করেই মেরামতির জন্য এই জাতীয় সড়ক পুরোপুরি বন্ধ করা হচ্ছে না বলেও জানানো হয়েছে। গরম শেষ হলেই বর্ষা আসবে। উত্তরবঙ্গের বৃষ্টিতে জাতীয় সড়কের উপর মাঝেমধ্যেই ধস নামে। অতীতে ধসের কারণে টানা বেশ কয়েক মাস বন্ধও রাখতে হয়েছিল ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। ধসের কথা মাথায় রেখে এ বার আগেভাগেই জাতীয় সড়ক মেরামতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জাতীয় সড়ক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
এই মেরামতি কাজের জন্য শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক যেতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় মানুষ এবং পর্যটকেরা। দীর্ঘ পথ ঘুরে তাঁদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। শিলিগুড়ি থেকে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে গ্যাংটক পৌঁছোতে ঘণ্টা তিনেক লাগে। কিন্তু জাতীয় সড়ক মেরামতির জেরে ঘুরপথে সেবক করোনেশন সেতু, ওদলাবাড়ি, মালবাজার, গরুবাথান এবং লাভা পৌঁছোতে হচ্ছে। তার পর সেখান থেকে গ্যাংটক। সব মিলিয়ে প্রায় আট থেকে ন’ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে গাড়িভাড়াও অনেকটা বেড়ে যাচ্ছে।
হিমালয়ান হসপিট্যালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজ়ম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক-এর (এইচএইচটিডিএন) সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘ ২০২৪ সালের অক্টোবরে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের দায়িত্ব পায় এনএইচআইডিসিএল। প্রায় সাত-আট মাস ধরে এনএইচআইডিসিএল কাজ করছে। তারা জানিয়েছিল, দ্রুত মেরামতির কাজ শুরু করবে। কিন্তু দেখা গেল, শীতের সময় কাজ শুরু না করে বর্ষার মুখে কাজ শুরু করল। সবচেয়ে বড় বিষয় যেটি, পর্যটন মরসুমের সময়েই এই কাজ শুরু হল।’’