Advertisement
E-Paper

এক দশক ধরে সুন্দরবনে বিগ বস-ই দেখা দেন! আবারও দিলেন

আদতে গল্পটা কুমিরছানার। সেই গল্প এ বার দানা বেঁধেছে বাঘকে ঘিরে।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:০৬
ন’বছরের তফাতে একই বাঘ দেখা গেল সুন্দরবনে। নিজস্ব চিত্র

ন’বছরের তফাতে একই বাঘ দেখা গেল সুন্দরবনে। নিজস্ব চিত্র

আদতে গল্পটা কুমিরছানার। সেই গল্প এ বার দানা বেঁধেছে বাঘকে ঘিরে।

লোকগল্পের ধূর্ত শেয়াল পণ্ডিত গর্ত থেকে বেরিয়ে একটি কুমিরছানাকেই বার বার দেখাত আর আশ্বস্ত হয়ে ফিরে যেত কুমির-মা। সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে অন্য কেউ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখাচ্ছে, এতটা কল্পনা করা বেশ কষ্টকর। তবে ঘুরেফিরে বার বার তিনি নিজেই নাকি উঁকিঝুঁকি মারছেন! আর তাঁকে দেখেই শিউরে শিউরে উঠছেন পর্যটককুল। ১৩-১৪ বছর বয়সের এই দক্ষিণরায়কে সুন্দরবনের স্থানীয় বাসিন্দারা ডাকেন ‘বিগ বস’ নামে!

পাঁচ-ছ’বছর ধরে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের এলাকায় পর্যটকের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এই ‘বাঘ’ দেখতে পাওয়াটা তার একটা বড় কারণ বলে মনে করছেন বনকর্তারা। সজনেখালি এলাকায় পর্যটকেরা যেখানে থাকেন বা ঘোরাফেরা করেন, পাঁচ-ছ’বছর ধরে মাঝেমধ্যেই সেখানে দেখা দিচ্ছেন দক্ষিণরায়। দাবি, প্রায় এক দশক ধরে প্রধানত দেখা দিচ্ছেন নাকি ওই বিগ বস-ই!

সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণে নিরন্তর কাজ করে চলা স্বামী-স্ত্রী জয়দীপ ও সুছন্দা কুণ্ডুর দাবি, ২০১০ সালে তাঁরা সুন্দরবনে কাজ করতে গিয়ে এই বাঘটিকে প্রথম দেখেন। নদীর পাড়ে আয়েশ করে দীর্ঘ ক্ষণ বসে ছিল সে। জয়দীপবাবুরা মনের সুখে ছবি তুলেছিলেন। চলতি ফেব্রুয়ারিতে সুন্দরবনে পুরনো সেই ছবি দেখে বনকর্মী নিত্যানন্দ চৌকিদার নাকি চমকে ওঠেন। বলেন, ‘‘আরে এখনও তো সেই বাঘটাকেই দেখা যাচ্ছে!’’

রাজ্য সরকারের বন্যপ্রাণী পরামর্শদাতা পর্ষদের সদস্য জয়দীপবাবু এবং সাম্মানিক ওয়ার্ডেন সুছন্দাদেবীর কথায়, ‘‘এটা শোনার পরে নিত্যানন্দবাবুর সঙ্গে আমরা ১২ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি এ-মাথা থেকে সে-মাথা ঘুরতে থাকি। বাঘের পায়ের ছাপ দেখে দেখে নিত্যানন্দবাবু আন্দাজ করতে থাকেন, কোথায় থাকতে পারে সেই বাঘ। শেষে ১৬ ফেব্রুয়ারি সূর্যাস্তের মুখে তাকে দেখতে পাই। আবার ছবি তুলি।’’

কী করে বুঝলেন, এই বাঘটিকেই ২০১০ সালে দেখা গিয়েছিল?

কুণ্ডু দম্পতির দাবি, প্রত্যেক মানুষের বুড়ো আঙুলের ছাপ যেমন আলাদা হয়, তেমনই প্রতিটি বাঘের দেহের ডোরা হয় ভিন্ন ভিন্ন। দাবি, ২০১০ এবং ২০১৯ সালে তোলা দু’টি ছবি পাশাপাশি রাখলে এই বাঘের সেই ডোরা মিলে যাচ্ছে।

একই দাবি করে সুন্দরবনের ব্যাঘ্র প্রকল্পের বন অধিকর্তা নীলাঞ্জন মল্লিক রবিবার বললেন, ‘‘হতেই পারে, ওই একই বাঘ বারবার করে পর্যটকদের দেখা দিচ্ছে। বাঘ তো ১৪-১৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।’’ রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্য বনপাল, ব্যাঘ্র বিশারদ প্রদীপ ব্যাস বলেন, ‘‘জয়দীপেরা বাঘের এক দিকের ছবি তুলেছে। সেই এক দিকের ছবি মিলিয়ে এটা বলা সম্ভব, সেটা একই বাঘ কি না। বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে যখন আমরা বাঘকে চিহ্নিত করি, তখন এই ছবির উপরে নির্ভর করেই করি।’’

ব্যাঘ্র বিশারদদের দাবি, সুন্দরবনের বাঘ সাধারণত লাজুক হয়। তারা সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে আত্মগোপন করে থাকতেই বেশি পছন্দ করে। তাই বহু পর্যটক বারবার সুন্দরবন চষে ফেলেও বাঘের দেখা পাননি। কিন্তু শতাধিক বাঘের মধ্যে এই ‘বিগ বস’-এর ধরনধারণ নাকি কিঞ্চিৎ আলাদা। সে নাকি মানুষ পছন্দ করে! তাই মাঝেমধ্যে গভীর জঙ্গল ছেড়ে সে চলে আসে নদী বা খাঁড়ির ধারে। বেশ কিছু ক্ষণ সেখানে গা এলিয়ে পড়ে থাকে। পর্যটকেরাও তো আশ মিটিয়ে তাকে দেখেনই। সে-ও নাকি পিটপিটিয়ে মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকে। যেমন বান্ধবগড়ের বাঘ ‘চার্জার’।

জয়দীপবাবু-সুছন্দাদেবীর দাবি, এ ভাবে ১০ বছর ধরে সুন্দরবনে একটি বাঘকে দেখতে পাওয়ার আরও একটি অর্থ আছে। তাঁদের কথায়, ‘‘সুন্দরবনে বন দফতর, রাজ্য সরকার এবং বিশেষ করে স্থানীয় বনকর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে সফল হচ্ছেন, এটাও তার প্রমাণ।’’

Royal Bengal Tiger Sundarbans Tiger Reserve Tourists
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy