Advertisement
E-Paper

পা রাখাই মুশকিল ভিড়ে ঠাসা লোকালে

ভিড় এড়াতে ব্যারাকপুর থেকে ট্রেন ধরার চেষ্টা করলেন অনেকে। শেষ পর্যন্ত ব্যারাকপুরেও ট্রেনে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৫৫
ভোগান্তি: (বাঁ দিকে) শ্যামনগর স্টেশনে ট্রেন থামতেই মহিলা কামরায় উঠতে হুড়োহুড়ি। (ডান দিকে) শিয়ালদহে উপচে পড়ছে যাত্রীদের ভিড়। (ডান দিকে নীচে) কোনও রকমে ট্রেনে ওঠার মরিয়া চেষ্টা শ্যামনগরে। সোমবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়, দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

ভোগান্তি: (বাঁ দিকে) শ্যামনগর স্টেশনে ট্রেন থামতেই মহিলা কামরায় উঠতে হুড়োহুড়ি। (ডান দিকে) শিয়ালদহে উপচে পড়ছে যাত্রীদের ভিড়। (ডান দিকে নীচে) কোনও রকমে ট্রেনে ওঠার মরিয়া চেষ্টা শ্যামনগরে। সোমবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়, দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

চাকরির ইন্টারভিউ বেলা সাড়ে ১১টায়। পার্ক স্ট্রিটে। অসুবিধা হতে পারে বুঝে সকাল সাড়ে ৭টায় কাঁকিনাড়া স্টেশনে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন বিমান সরকার। পরপর চারটে ট্রেন এল, তাঁর চোখের সামনে দিয়ে চলেও গেল। কিন্তু তিনি উঠতে পারলেন না।

কোনও ক্রমে একটি ট্রেনের হাতল ধরেছিলেন তিনি। কিন্তু প্ল্যাটফর্মের হকারেরা তাঁকে টেনে নামিয়ে নেন। শেষ পর্যন্ত সওয়া ৯টা নাগাদ একটি লোকালের দরজায় কোনও রকমে দাঁড়াতে পারেন তিনি।

বিমানের ঘটনা একটি উদাহরণ মাত্র। রবিবার থেকে জোড়ায় জোড়ায় লোকাল ট্রেন বাতিলের যে পর্ব শুরু হয়েছে, তার জেরে সোমবার নাজেহাল হতে হল যাত্রীদের। ট্রেনে উঠতে গিয়ে সব চেয়ে বেশি নাকাল হতে হল মহিলা এবং বৃদ্ধদের। ভিড়ের চাপে অনেকেই হোঁচট খেয়ে পড়লেন প্ল্যাটফর্মে।

ভিড় এড়াতে ব্যারাকপুর থেকে ট্রেন ধরার চেষ্টা করলেন অনেকে। শেষ পর্যন্ত ব্যারাকপুরেও ট্রেনে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ল। বিকল্প পথেও বিপত্তি পিছু ছাড়ল না। মওকা বুঝে দ্বিগুণ দর হাঁকল অটো-টোটো। বি টি রোডেও যানবাহনে জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে উঠল।

আরও পড়ুন: নিখোঁজ বাংলাদেশের শিক্ষক, নবান্নে আত্মীয়েরা

কাজ চলছে ইছাপুর থেকে নৈহাটি পর্যন্ত। সব মিলিয়ে পাঁচটি স্টেশন। কিন্তু তাতেই তাল কাটল শহরতলির ‘প্রাণভোমরা’ শিয়ালদহ মেন লাইনের। যার জেরে চরম দুর্ভোগে পড়লেন কল্যাণী সীমান্ত, রানাঘাট, কৃষ্ণনগর, লালগোলা, গেদে এবং শান্তিপুর লোকালের হাজার হাজার যাত্রী। ভোগান্তি পিছু ছাড়ল না ওই লাইন দিয়ে যাতায়াত করা দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রীদেরও।

লোকাল ট্রেন চলাচল যে নিয়ন্ত্রিত হবে, তা আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু তার জেরে অবস্থা কতটা বেগতিক হতে পারে, সেই ধারণা ছিল না কারও। রেল কর্তৃপক্ষ জানান, আতঙ্ক এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের জেরে বহু যাত্রী নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিলেন। যার জেরে সকাল সাতটা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত স্টেশনগুলিতে অত্যধিক ভিড় থাকে। তাতেই অবস্থা বেগতিক হয়ে দাঁড়ায়।

আরও পড়ুন: রাজ্যপালের জন্য বন্ধ ক্যামেরা চালু বাজেটে

শ্যামনগরের বাসিন্দা শর্মিলা নাগ গড়িয়ার একটি স্কুলের শিক্ষিকা। সাধারণত, এমনি দিনে সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরোন তিনি। এ দিন সাড়ে ৭টা নাগাদ স্টেশনে চলে এসেছিলেন। শর্মিলা বললেন, ‘‘ট্রেনে যে উঠব, কামরার দরজা পর্যন্তই তো পৌঁছতে পারছি না। এত ভিড়, প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানোর জায়গাও মিলছে না।’’ ইছাপুরের সমীর সরকার বৃদ্ধ বাবাকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাবেন বলে তাঁকে নিয়ে স্টেশনে এসেছিলেন। কিন্তু অবস্থা দেখে বাড়ি ফিরে যান।

পলতার বিকাশ দাশগুপ্ত টোটো চড়ে ব্যারাকপুরে পৌঁছে গিয়েছিলেন সকাল সওয়া ৮টার ব্যারাকপুর-শিয়ালদহ লোকাল ধরবেন বলে। কিন্তু স্টেশনে পৌঁছে দেখলেন, কামরায় দাঁড়ানোরই কোনও জায়গা নেই। ট্রেন ছাড়তে তখনও দশ মিনিট বাকি। বিকাশের কথায়, ‘‘অন্যান্য ট্রেন আগে থেকেই এত ভর্তি হয়ে আসছে যে, ব্যারাকপুর থেকে ওঠাই দায়। ও দিকে, টালা সেতু বন্ধ বলে অনেক ঘুরে যেতে হচ্ছে। কিন্তু বি টি রোড ছাড়া উপায়ও তো নেই।’’

এমন ভিড়ে কপাল পুড়েছে ট্রেনের হকারদের। অতিরিক্ত ভিড় ট্রেন এমনিতেই পছন্দ নয় তাঁদের। কিন্তু এমন অবস্থায় তাঁরা ট্রেনে উঠতেই পারছেন না। শ্যামল হালদার নামে এক বাদাম বিক্রেতা বললেন, ‘‘স‌ংসারের অনেকের পেট চলে এই বাদাম বিক্রি থেকে। কিন্তু ট্রেনে উঠতে না পারলে বেচব কী করে?’’

Train Sealdah Eastern Railway
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy