সারা দেশে এমন নিয়ম নেই। নেই রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও। শুধু কলকাতা এবং হাওড়া জেলায় কমিশনের ভিত্তিতে বাসচালক এবং কন্ডাক্টরদের বেতন হয়ে থাকে।
অথচ বার বারই অভিযোগ ওঠে, বেসরকারি বাসে রেষারেষির অন্যতম কারণ এই কমিশন প্রথা। যত যাত্রী বাসে উঠবেন, কমিশনের ভিত্তিতে বাড়বে তাঁদের আয়ও। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাসচালক এবং কন্ডাক্টররা চেষ্টা করেন ঠাসাঠাসি করে যাত্রী তুলতে।
একই রুটের বা একই গন্তব্যের বাস হলে তো কথাই নেই! রেষারেষি করতে গিয়েই বারংবার ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রাণ খোয়াতে হচ্ছে যাত্রীদের। অনেক সময় পথচলতি মানুষরাও ঘাতক বাসের শিকার হচ্ছেন। ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর মতো সচেতনতা প্রচারেও ফল মিলছে না।
আরও পড়ুন
দিঘার পথে গাড়ি দুর্ঘটনায় পাঁচ তৃণমূল নেতা-সহ মৃত ৬
বৃহস্পতিবার পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বাস সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে জানিয়ে দিলেন, আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে কমিশন প্রথা তুলে মাসিক বেতন চালু করতে হবে।
বৈঠকে ছিল বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট, জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেট, মিনিবাস অপারেটার্স ইউনিয়ন-সহ অন্য সংগঠনগুলি। এ বিষয়ে জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের তরফে তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পরিবহণ দফতর তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা এই প্রথা কি মেনে নেবেন পরিবহণ শ্রমিকেরা? পরিবহণ দফতর কি কথা দিতে পারবে, আর দুর্ঘটনা ঘটবে না?”
তাঁর আরও দাবি, “পুলিশি জুলুমও বন্ধ করতে হবে। অ্যাপ ক্যাবের মতো আমাদের ভাড়া ওঠানামা করে না। বাস, মিনিবাসের ক্ষেত্রে ভাড়া ঠিক করে দেয় রাজ্য সরকার। বেতন কাঠামোও ঠিক করে দিক রাজ্য।”
আরও পড়ুন
বেলাগাম স্কুটি, প্রশ্নে পুলিশি নজর
বেসরকারি বাসের ক্ষেত্রে চালকেরা ১৪ এবং কন্ডাক্টররা ১২ শতাংশ করে কমিশন পেয়ে থাকেন। দু’জন কন্ডাক্টর থাকলে, সে ক্ষেত্রে চালক ১২ শতাংশ এবং ওই দু’জন কনডাক্টর পাবেন ৬ শতাংশ করে। ফলে হিসেব দাঁড়াচ্ছে, যত বেশি যাত্রী, তত বেশি দৈনিক আয়। এই কমিশনের চক্করেই রেষারেষি করতে দেখা যায় বাসচালকদের।
সম্প্রতি বাস, মিনিবাসের ভাড়া বেড়েছে। এখন বাসে উঠলেই সাত টাকা। মিনিবাসে আট। তার পরেও রেষারেষি চলছে। উল্টোডাঙায় রেষারেষির জেরে উল্টে যায় একটি বাস। যাত্রী ছিলেন ২৫ জনের মতো। চার-পাঁচজন গুরুতর আহত হন। বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটেই যেতে পারত। এর আগে বহু ঘটনা রয়েছে, যেখানে রেষারেষির জেরে প্রাণ হারিয়েছেন যাত্রীরা। এ বার রীতিমতো কঠোর অবস্থান নিয়েছে পরিবহণ দফতর।