Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সঙ্কট নিয়েই চালু হচ্ছে ট্রমা ইউনিট

চিকিৎসক সঙ্কটের দরুন খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের একাধিক ওয়ার্ডে নিয়মিত বহির্বিভাগ খোলে না বলে অভিযোগ। জটিল পরিস্থিতিতে রোগীকে সাহায্যের জন্য রাতবিরেতে চিকিৎসকের দেখা মেলে না, এমন অভিযোগও রয়েছে।

—নিজস্ব চিত্র।

—নিজস্ব চিত্র।

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৩৮
Share: Save:

চিকিৎসক সঙ্কটের দরুন খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের একাধিক ওয়ার্ডে নিয়মিত বহির্বিভাগ খোলে না বলে অভিযোগ। জটিল পরিস্থিতিতে রোগীকে সাহায্যের জন্য রাতবিরেতে চিকিৎসকের দেখা মেলে না, এমন অভিযোগও রয়েছে। সমস্যা সমাধানে নতুন চিকিৎসক নিয়োগ দূর অস্ত। ফের হাসপাতালের বর্তমান চিকিৎসকদেরই অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে ‘ট্রমা কেয়ার ইউনিট’ খুলতে চলেছে বলে খবর।

চিকিৎসা পরিষেবার উন্নয়নে ব্লকে ব্লকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও এখনও পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় একমাত্র নয়াগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালেরই উদ্বোধন হয়েছে। তাও নামেই হয়েছে উদ্বোধন। হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ চালু হয়নি এখনও। অভিযোগ, ধুঁকছে হাসপাতালের বহির্বিভাগও। অভিযোগ, নয়াগ্রামের নতুন হাসপাতালেও মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন ব্লক ও মহকুমা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক এনে কাজ চালাতে হচ্ছে।

বাম আমলে ২০০৬ সালে রাজ্যের ৬টি হাসপাতালের সঙ্গে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালেও ‘ট্রমা কেয়ার ইউনিট’ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ উদ্যোগে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় কাজ। ২০০৯ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেলেও আজও চালু করা যায়নি ইউনিট। ইউনিট চালু না করার কারণ কী? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, চিকিৎসক ও কর্মী সঙ্কটের দরুণ ওই ইউনিট চালু করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া জেনারেটরের সমস্যাও রয়েছে। দীর্ঘ সাত বছরেও ‘ট্রমা ইউনিট’ চালু না হওয়ায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে লক্ষাধিক টাকার যন্ত্রপাতি। ওই ইউনিটের জন্য কেনা হয় ৬০-৭০ হাজার টাকার দামের প্রায় পাঁচটি মনিটর, দু’টি অস্ত্রোপচারের টেবিল। রয়েছে ২৬টি শয্যাও। সবই পুরু ধুলোর আস্তরণের তলায়।

বিরোধীদের দাবি, নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ না করেই বিধানসভা ভোটের আগে মুখ রক্ষায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি ‘ট্রমা ইউনিট’ চালু করতে চাইছেন। ফলে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়বে বলে আশঙ্কা স্থানীয় বাসিন্দাদের। হঠাৎ কেন তড়িঘড়ি ‘ট্রমা কেয়ার ইউনিট’ চালুর কথা বলা হচ্ছে? জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, কার্যত চাপের মুখে পড়েই ‘ট্রমা কেয়ার ইউনিট’ খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব ওঙ্কার সিংহ মিনা ফোনে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার সঙ্গে কথা বলেন। সেই সময়ই স্বাস্থ্যসচিব খড়্গপুর হাসপাতালের ‘ট্রমা কেয়ার ইউনিট’ দ্রুত চালুর নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্রবাবু বলেন, “আমার সঙ্গে স্বাস্থ্য সচিবের ‘ট্রমা কেয়ার ইউনিট’ নিয়ে কথা হয়েছে। খড়্গপুরে ওই ইউনিট চালু করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। তবে কোনও নির্দিষ্ট দিন এখনও ঠিক হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব ওই ইউনিট খোলার চেষ্টা হচ্ছে।”

শহরের বুলবুলচটির বাসিন্দা বীরেন মাইতি, মালঞ্চর বাসিন্দা বি লক্ষ্মীদের প্রশ্ন, “হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকের অভাবে মানুষ পরিষেবা পাচ্ছে না। ট্রমা ইউনিট চালু অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু এ ভাবে চিকিৎসকের সংখ্যা না বাড়িয়ে ওই ইউনিট চালু করে লাভ কী?” ইউনিট চালুর সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের হাসপাতাল ইউনিটের উপদেষ্টা দিলীপ সরখেল বলেন, “যন্ত্রপাতিতে মরচে ধরার চেয়ে ট্রমা ইউনিট চালুর সিদ্ধান্ত ভাল। তবে হাসপাতালের বর্তমান চিকিৎসক ও কর্মীদেরই ওই ইউনিটে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ায় সমস্যা আরও বাড়বে।’’

হাসপাতাল সূত্রে খবর, নতুন ইউনিটের জন্য আপাতত কোনও চিকিৎসক নিয়োগ করা হচ্ছে না। শুধুমাত্র জেনারেটরের ব্যবস্থা করেই চালু করা হবে ওই ইউনিট। গিরীশচন্দ্রবাবুর কথায়, “অন্য খাতের টাকা থেকে জেনারেটর কিনে এই ইউনিট চালু করা হবে। পরে টাকার সংস্থান করা হবে। আর আপাতত হাসপাতালের বর্তমান চিকিৎসকদের দিয়েই ওই ইউনিট চালানো হবে।”

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন ওই ইউনিটের জন্য ৩ জন শল্য চিকিৎসক, ৩ জন অস্থি বিশেষজ্ঞ, ৩ জন ‘অ্যানাস্থেটিস্ট’, ৪ জন ‘জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার’ (জিডিএমও) ও ২৫ জন নার্সের প্রয়োজন রয়েছে। একইসঙ্গে দরকার একজন ‘এক্স-রে ও ল্যাব টেকনিশিয়ান’ও। বর্তমানে হাসপাতালে দু’জন শল্য চিকিৎসক, দু’জন অস্থি বিশেষজ্ঞ ও ৩ জন ‘অ্যানাস্থেটিস্ট’ রয়েছেন। হাসপাতালে ১৩ জন জিডিএমও-র পদ থাকলেও রয়েছেন মাত্র ৬ জন। নতুন ইউনিটের জন্য কয়েক মাস আগে একজন শল্য চিকিৎসককে পাঠানো হলেও তিনি বদলি হয়ে গিয়েছেন। একইভাবে, ৬ জন নার্সকে এই ইউনিটের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও তাঁদের বদলি করে দেওয়া হয়। এই পরিকাঠামো দিয়ে কী ভাবে ‘ট্রমা কেয়ার ইউনিট’ চালু করা হচ্ছে?

হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ের দায়সারা উত্তর, “চিকিৎসক ও কর্মীর সঙ্কট রয়েছে এটা ঠিক। তবে আমাদের কাছে যে নির্দেশ এসেছে তা কার্যকর করতে ট্রমা ইউনিট চালু করতে হবে। পরে কী হবে সে বিষয়ে পরে চিন্তা করা হবে। এখন ইউনিট চালু করাই আমাদের লক্ষ্য।” জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্রবাবুর কথায়, ‘‘ওই ইউনিটের জন্য চিকিৎসক ও কর্মী নিয়োগের বিষয়ে স্বাস্থ্যভবনে জানিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

trauma launched
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE