Advertisement
E-Paper

সাসপেন্ড হচ্ছেন খবর পেয়েই তৃণমূল ছাড়লেন মুকুল রায়

দলত্যাগের ঘোষণার সময় মুকুল অবশ্য বলেন, ‘‘দলের কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে ইস্তফা দিচ্ছি। অত্যন্ত দুঃখ ও ভগ্ন হৃদয়ে এ কথা আমাকে জানাতে হচ্ছে। আমার সাংসদ পদের মেয়াদ শেষ হতে এখনও আট মাস বাকি। পুজো মিটলেই রাজ্যসভার সাংসদ পদেও ইস্তফা দেব। আর দলের সাধারণ সদস্যপদও ছেড়ে দেব।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:১৫
মুকুল রায়।

মুকুল রায়।

ঠিক ছিল লক্ষ্মী পুজোর পর দিন দিল্লি গিয়ে রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করার। সে দিন রাজধানীতেই ঘটা করে দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করবেন বলে স্থির করেছিলেন মুকুল রায়। কিন্তু চতুর্থীর সন্ধ্যায় সারদা মামলায় জামিনে থাকা কুণাল ঘোষের পুজো উদ্বোধনে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে বাংলায় সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি এবং সম্প্রীতি নিয়ে তির্যক মন্তব্য করেছিলেন তিনি। এ কথা জেনে রবিবার গভীর রাতেই দলনেত্রী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে মুকুল রায়কে আর দলে রাখা হবে না। সে খবর পেয়ে তড়িঘড়ি সোমবারই দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন তৃণমূলের সাবেক ‘সর্বভারতীয়’ সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়।

তার দু’ঘন্টার মধ্যে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় পাল্টা ঘোষণায় মুকুলবাবুকে ছ’বছরের জন্য সাসপেন্ড করার কথা জানান। তিনি এও বলেন, ‘‘চাইলে পুজোর আগেই মুকুল রায় এমপি-পদ ছেড়ে দিতে পারেন। অপেক্ষা করার কি দরকার?’’ তবে ২০ বছর আগে প্রতিষ্ঠার দিন থেকে দলে তাঁর সহযোগী মুকুল রায় প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন সন্ধ্যায় নবান্ন ছাড়ার সময় তিনি শুধু বলেন,‘‘ আমি কিছু বলব না। যা বলার পার্থ দা বলেছেন।’’

দলত্যাগের ঘোষণার সময় মুকুল অবশ্য বলেন, ‘‘দলের কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে ইস্তফা দিচ্ছি। অত্যন্ত দুঃখ ও ভগ্ন হৃদয়ে এ কথা আমাকে জানাতে হচ্ছে। আমার সাংসদ পদের মেয়াদ শেষ হতে এখনও আট মাস বাকি। পুজো মিটলেই রাজ্যসভার সাংসদ পদেও ইস্তফা দেব। আর দলের সাধারণ সদস্যপদও ছেড়ে দেব।’’ দল শুরুর সময় থেকেই দলের সঙ্গে থাকা মুকুলের আক্ষেপ, ‘‘১৯৯৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর তৃণমূলের জন্মলগ্নের সময়ে আমি ছিলাম প্রথম স্বাক্ষরকারী।’’

তবে মুকুলের চলে যাওয়া নিয়ে বিন্দুমাত্র আপেক্ষ বা সৌজন্য ছিল না দলীয় ঘোষণায়। সুব্রত বক্সী ও শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে দু’পাশে নিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেন, ‘‘বিজেপির হাতে তামাক খেয়ে তৃণমূলের ক্ষতি করবে, দলকে দুর্বল করবে এই ধরনের নেতার সঙ্গে দল সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে চায়। মুকুলকে দল ছ’বছরের জন্য দল সাসপেন্ড করল।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘পুজোর বাহানা কেন দিচ্ছেন? উনি দল ছেড়ে দিলে কি পুজো বন্ধ হয়ে যাবে?’’

আরও পড়ুন:মুখে গুরুত্বহীন,ক্ষত তবু বিঁধছে দলের ভিতরে

মুকুলের পুজো পরবর্তী পরিকল্পনায় জল ঢালতে বোধনের আগেই তাঁর বিদায়ের ব্যবস্থা করেছিল দল। কিন্তু সে খবর আগাম পেয়ে শাস্তি ঘোষণার আগেই দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করে দেন মুকুল। কিন্তু দল যে তারও আগে মুকুল-সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা এ দিন জানান তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, তৃণমূলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি দিন কয়েক আগেই মুকুলের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করেছিল। সে কথার সূত্রেই পার্থবাবু বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সংস্থার চাপে নতিস্বীকার করে নিজের স্বার্থে দলের ক্ষতি করছিলেন মুকুল। যাঁকে পাড়ার লোকেও চিনত না, তাঁকে সাংসদ এমনকী রেলমন্ত্রীও করেছিলেন দলনেত্রী। এর থেকে বেশি কী প্রাপ্তির থাকে এক জনের?’’

আসলে দল থেকে ‘সাসপেন্ড’ হয়ে থাকা কুণালের পুজোয় গিয়ে মুকুল তৃণমূলের মহাসচিবকে ‘বাচ্চা ছেলে’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। এ দিন তার পাল্টা পার্থবাবু বলেন, ‘‘এত কিছু পাওয়ার পরে বাচ্চা ছেলেরা সন্তুষ্ট হয়। আর বুড়ো ভামরা কেন সন্তুষ্ট হয় না, বুঝি না!’’

মুকুলকে না বোঝাটাই আপাতত ভাবাচ্ছে তৃণমূলকে। এর পর ঠিক কী করবেন এবং কতটা করতে পারবেন তিনি, সেই সংশয় রেখেই মুকুল বিদায়ের ঘন্টা বাজানো হল দলে। মুকুলের কি সত্যিই রাজনীতি থেকে বিদায় হল, তা আপাতত সময়ের হাতে।

Mukul Roy TMC Suspension BJP Mamata Banerjee মুকুল রায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy