ভোটার তালিকায় ‘অনলাইন’ মাধ্যমে তোলা নতুন নামে কড়া নজরদারির নির্দেশ দিল তৃণমূল। দলের জেলা নেতৃত্বের কাছে পাঠানো নির্দেশিকায় এই কাজে সাংগঠনিক কাঠামোও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হল।
বিধানসভা ভোটের এক বছরেরও বেশি সময় আগে ভোটার তালিকা নিয়ে কার্যত যুদ্ধকালীন তৎপরতা চাইছে তৃণমূল। গত সপ্তাহে দলীয় সভায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া নির্দেশের ভিত্তিতে একেবারে সংগঠিত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তার পরে জেলায় জেলায় দলীয় সভাপতি ও চেয়ারম্যানদের কাছে চার দফার নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। তার মধ্যে ‘অনলাইন’ ব্যবস্থায় তালিকায় তোলা নতুন নামের ব্যাপারে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সভাপতির তরফে পাঠানো ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘ভূতুড়ে এবং বহিরাগত ভোটার সংক্রান্ত এই কাজ দ্রুততার সঙ্গে রূপায়ণ করতে হবে’।
দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা, ভোটার তালিকা সংক্রান্ত এই কাজের আড়ালে সাংগঠনিক ফাঁক বোজাতে চায় তৃণমূল। বুথ স্তরে দলের স্থানীয় নেতাদের মূল্যায়নও করা হবে। সে ক্ষেত্রে কোথাও দায়িত্ব বদলের প্রয়োজন থাকলে, তা-ও করে নেওয়া হবে এই পর্বেই। মমতার নির্দেশের পরে কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় দলীয় নেতারা ভোটার তালিকা যাচাই করতে নেমে পড়েছেন। তবে ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, জনপ্রতিনিধি ও শাখা সংগঠনের প্রতিনিধিদের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়ে তালিকার প্রত্যেকটি ‘পার্ট’ যাচাই করতে হবে। সেখানেই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ‘অনলাইন’ আবেদনের মাধ্যমে নাম তোলা ভোটারদের বিষয়টি। এই নতুন ভোটারেরা যে নথি জমা দিয়েছেন, তা যাচাই করা এবং প্রয়োজনে তাঁদের স্থানীয় ঠিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বলা হয়েছে দলীয় নেতৃত্বকে। কোথাও তা নিয়ে সংশয় থাকলে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে জেলার নির্বাচনী প্রধান অর্থাৎ ‘রিটানিং অফিসারে’র দফতরের সঙ্গে। সেই সঙ্গেই বিধানসভা ভিত্তিক এই এই রকম ‘গরমিলের’ তথ্য একেবারে রিপোর্ট আকারে জমা দিতে বলা হয়েছে রাজ্য দফতরে।
দলের জেলা নেতৃত্বের যে বৈঠক কাল, বৃহস্পতিবার ডাকা হয়েছে, সেখানেই প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা জেলাগুলির। তার ভিত্তিতেই পরবর্তী কাজ বুঝিয়ে দেবেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রে খবর, তৃণমূল ভবনে ডাকা ওই বৈঠকে ভোটার তালিকা সম্পর্কিত দায়িত্বপ্রাপ্ত দলীয় কমিটির সদস্যেরা ছাড়াও পরামর্শদাতা সংস্থার একটি দল উপস্থিত থাকবে। তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘নেতাজি ইনডোরের সভায় মমতাদি’র দেওয়া নির্দেশের পরে কয়েক দিন এ কাজ চলেছে। তবে এই গরমিল নিয়ে আমাদের যে আশঙ্কা ছিল, এখন দেখা যাচ্ছে, তা অনেকটাই বেশি। তাই বিষয়টি নিয়ে আগামী এক বছর দল নজরদারি চালাবে।’’
ভোটার তালিকা যাচাইয়ের এই প্রক্রিয়াকে সামনে রেখে একই সঙ্গে আরও দু’টি কাজ সেরে রাখতে চাইছে তৃণমূল। বুথ স্তরের সংগঠনকে এখন থেকেই মাঠে নামানোর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকেও চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে রাজ্যের শাসক দল।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)