Advertisement
E-Paper

স্মার্টফোনেই ছবি, রুজিতে টান দিঘার পেশাদার ফোটোগ্রাফারদের

পর্যটকদের সকলের হাতে হাতেই এখন ক্যামেরার সুবিধা-সহ স্মার্ট ফোন। ‘সেলফি’ থেকে বন্ধু-বান্ধবীর ছবি—সবই পর্যটকেরা নিজেরাই তুলছেন। তা ছাড়া ক্যামেরাও এখন আগের মতো আর মহার্ঘ নয়। ফলে দু’দিকের সাঁড়াশি চাপে কাজ হারাতে বসেছেন এক সময় দিঘার সৈকতে দাপিয়ে বেড়ানো চিত্রগ্রাহকেরা।

শান্তনু বেরা

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৮ ০১:১৪
সমস্যায় দিঘার সৈকতে কমছে চিত্রগ্রাহকদের সংখ্যা। নিজস্ব চিত্র

সমস্যায় দিঘার সৈকতে কমছে চিত্রগ্রাহকদের সংখ্যা। নিজস্ব চিত্র

“দাদা ফোটো তুলবেন নাকি? বিকেলেই ফটো পেয়ে যাবেন।’’

দিঘার সৈকতে এই কথা শোনেননি এমন পর্যটক খুঁজে পাওয়া ভার। কাঁধে ক্যামেরা ঝুলিয়ে সকাল-বিকেল সৈকতে ঘুরে বেড়ানো এই সব চিত্রগ্রাহকের ক্যামেরায় বন্দি হয়েছেন নব দম্পতি থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়াতে পর্যটকেরা। বাড়ি ফিরে অবসরে সেই সব ছবি তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছেন তাঁরা। এমন পর্যটকও দেখা গিয়েছে, বার বার দিঘায় বেড়াতে এসে ছবি তুলতে গিয়ে কোনও চিত্রগ্রাহকের সঙ্গে আলাপ এতটাই গাঢ় হয়েছে, যে দিঘায় এলে তাঁর কাছেই ছবি তোলেন। ছবি তোলার পর তা হাতে পাওয়া নিয়ে কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করলে, চিত্রগ্রাহকের গলায় শোনা যেত অভয়বাণী, ‘হোটেলের নাম বলে দিন দাদা। ঠিক পৌঁছে দেব।’’ কলেজ জীবন থেকে দিঘায় বেড়াতে আসা উত্তর কলকাতার শোভাবাজার এলাকার বাসিন্দা রজত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘প্রতিবার এসে কখনও নিজের তাগিদে, কখনও ওদের আবদারে ছবি তুলতে হয়েছে। কিন্তু ছবি পেতে কোনও অসুবিধা হয়নি। এতটাই নির্ভরযোগ্য ওরা।’’

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দিঘার সেই চিত্রগ্রাহকেরাই এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছেন। কারণ, পর্যটকদের সকলের হাতে হাতেই এখন ক্যামেরার সুবিধা-সহ স্মার্ট ফোন। ‘সেলফি’ থেকে বন্ধু-বান্ধবীর ছবি—সবই পর্যটকেরা নিজেরাই তুলছেন। তা ছাড়া ক্যামেরাও এখন আগের মতো আর মহার্ঘ নয়। ফলে দু’দিকের সাঁড়াশি চাপে কাজ হারাতে বসেছেন এক সময় দিঘার সৈকতে দাপিয়ে বেড়ানো চিত্রগ্রাহকেরা।

রামনগর-১ ব্লকের পদিমা গ্রামের অনন্ত জানা। বয়স ষাট ছুঁইছুঁই। জানালেন, ‘‘এক সময় ভাল রোজগার হত ছবি তুলে। সকাল থেকে বিকেল সৈকতেই থাকতাম। এখন আর সে দিন নেই। বেশ কয়েক বছর ধরেই এই পেশায় ভাটা এসেছে। ’’

শুধু পদিমা গ্রামের অনন্তবাবু নন, দিঘায় এখন কদাচিৎ দেখা মেলে স্টুডিও ফোটোগ্রাফারদের। স্মার্ট ফোনের দাপটে সৈকতে প্রায় উধাও পেশাদার ফোটোগ্রাফাররা। ফলে মাথায় হাত স্টুডিও মালিকদেরও। গত দু’বছরে দিঘায় প্রায় এক হাজার ফটোগ্রাফার কর্মহীন হয়ে পড়েছে বলে জানালেন স্থানীয় এক ফোটোগ্রাফার। যার আঁচ পড়েছে স্টুডিওগুলিতেও। দিঘার এক স্টিডও মালিক বলেন, ‘‘আগে দম ফেলার ফুরসত ছিল না। এখন দিনে ২০০ টাকাও আয় হয় না।’’

নিউ দিঘার ফোটোগ্রাফার্স ইউনিয়নের তথ্য বলছে, দু’বছর আগেও দিঘায় কাজ করতেন প্রায় বারশো ফটোগ্রাফার। সংখ্যাটা কমতে কমতে দাঁড়িয়েছে দুশোয়। নিউ দিঘা ফোটোগ্রাফার্স ইউনিয়নের সম্পাদক জগদীশ পড়্যা বলেন, “স্মার্ট ফোনে সহজেই ছবি তুলে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়জনকে ছবি পাঠিয়ে দিচ্ছেন পর্যটকরা। আমাদের ক্যামেরায় ছবি তুললে বিকেলে বা সন্ধ্যায় স্টুডিও থেকে ছবি প্রিন্ট করে এনে দিই। তাই এখন পর্যটকরা আর আমাদের ডেকে ছবি তোলেন না। আয় না হওয়ায় বহু ফটোগ্রাফারই কাজ ছেড়ে দিয়েছেন।’’ নিউ দিঘা ফোটোগ্রাফার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেবব্রত দাস বলেন, “ফোটোগ্রাফাররা স্টুডিওগুলোর প্রাণভোমরা ছিল। তারাই কাজ নিয়ে আসত। এখন তাঁদেরই অস্তিত্ব বিপন্ন।’’

দিঘায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের দাবি, আগে মোবাইলে এত উন্নত মানের ক্যামেরা ও আধুনিক কারিগরি ছিল না। তাই ফোটোগ্রাফারদের পোয়াবারো ছিল। এখন দিনকাল পাল্টেছে। বর্ধমানের তরুণ হালদার প্রযুক্তির উন্নতিকে স্বীকার করেও বলেন, ‘‘সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। তবে কোনওকিছুই একে অন্যের পরিপূরক নয়। তবে এমন পর্যটকও দেখেছি, যাঁরা এখনও এঁদের কাছে ছবি তোলেন।’’

Photographers Profession Smartphone Selfie Digha দিঘা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy