ডেঙ্গি দমনের কাজের নিরিখে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের
তরফে গত বছর ‘মডেল’ পুরসভা অ্যাখ্যা পেয়েছিল দক্ষিণ দমদম। বর্ষা শুরুর আগে সেই পুর এলাকাতেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল! অথচ সে খবর জানতে পুর কর্তৃপক্ষের লাগল সাত দিন! ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে পুরসভার ভূমিকা নিয়েই।
দক্ষিণ দমদম পুরসভার গোরক্ষবাসী রোডের বাসিন্দা শুক্লা বন্দ্যোপাধ্যায় (৫৬) বমি, পেটব্যথা, জ্বর নিয়ে ২৯ মে নাগেরবাজারের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। গত ১ জুন বছর ছাপান্নের প্রৌঢ়াকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। শনিবার বেসরকারি হাসপাতালের চিফ অপারেটিং অফিসার নিবেদিতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রোগীর এনএস-১ এবং ডেঙ্গি অ্যান্টিজেন, দু’টিই পজিটিভ ছিল। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিন দিন পরে শক-সিনড্রোম হয়ে রোগী মারা যান। ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গি শক-সিনড্রোমের উল্লেখ রয়েছে।’’
সাত দিন আগে শুক্লাদেবী মারা গেলেও এ দিনই ডেঙ্গিতে মৃত্যুর কথা চাউর হয়। এর পরেই দুপুরে অজিতেশ মঞ্চের কাছে গোরক্ষবাসী
রোডে মৃতার ফ্ল্যাটে যান পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধিরা। এলাকায় কারও জ্বর হয়েছে কি না, তা জানতে প্রতি মাসে ওয়ার্ডের প্রতিটি বাড়িতে সমীক্ষা হওয়ার কথা। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, জুনের ৩-৮ তারিখ পর্যন্ত পুর এলাকাগুলিতে এই সমীক্ষা করার দিন ছিল। পরবর্তী সমীক্ষা ১৬ জুন শুরু হওয়ার কথা। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওই প্রৌঢ়ার শারীরিক পরিস্থিতি এবং মৃত্যু নিয়ে কি তথ্য পুরসভার কাছে ছিল না? নইলে এত দেরিতে কেন মৃতার
বাড়িতে গেলেন স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধিরা? স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর কমল মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার জানা নেই। চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) বলতে পারবেন।’’
গত বছর ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির নিরিখে দক্ষিণ দমদমকে ‘মডেল’ করে অন্য পুরসভাগুলিকে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিল উত্তর ২৪
পরগনা জেলা প্রশাসন। ডেঙ্গি-মৃত্যুতে বিগত বছরের তুলনায় রাশ টানার
জন্য দক্ষিণ দমদমের পথেই পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে অন্য পুরসভাগুলিকে বলা হয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবে, মৃত্যুর
খবর এত দেরিতে কেন পুর কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ডেঙ্গি তথ্য নিয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) গোপা পাণ্ডে জানান, অসুস্থতার কারণে তিনি বাড়িতে রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘৮ তারিখ পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি পরিদর্শনের শেষ দিন ছিল। ওই ওয়ার্ডে সমীক্ষক দলের মহিলারা
কবে গিয়েছিলেন, তা খোঁজ নিয়ে জানতে হবে।’’
এ দিকে, শুধুমাত্র ডেঙ্গি সংক্রমণের কারণেই মহিলার মৃত্যু হয়েছে এমন মানতে নারাজ পুর কর্তৃপক্ষ। গোপার দাবি, রোগীর জ্বর ছিল এমন কথা পরিবারের লোক পুর প্রতিনিধিদের বলেননি। চেয়ারম্যান পারিষদ (জনস্বাস্থ্য) দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই মহিলার কেস হিস্ট্রি বেসরকারি হাসপাতালের কাছে চেয়ে পাঠানো হয়েছে।’’ এ দিন গোরক্ষবাসী রোডের বাড়িতে গেলে মৃতার এক পরিজন জ্বরের কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, ‘‘বাড়িতে ১৪ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। আমরা সকলে সাবধানতা অবলম্বনের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলছি।’’
পুর প্রধানের বক্তব্য, ‘‘ডেঙ্গি সংক্রমণ হয়তো ছিল। কিন্তু ওই মহিলা আর্থ্রাইটিসের জন্য দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড নিতেন। কিডনিতেও সমস্যা ছিল। ওঁর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই ছিল না। বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এই তথ্য পেয়েছি।’’ পুরসভার তথ্য পেতে দেরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে সব কর্মসূচিই জোরকদমে শুরু করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy