শারদোৎসবের মঞ্চ প্রস্তুত। এর মধ্যেই সোমবার থেকে নতুন প্রজন্মের পণ্য পরিষেবা কর (জিএসটি ২.০) কার্যকর হওয়ার কৃতিত্ব কার, তা নিয়ে বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির দড়ি টানাটানি চরমে উঠল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন জিএসটি-কে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই ‘সাশ্রয় উৎসবে’র কথা বলেছেন। সেই প্রেক্ষিতেই এ দিন জিএসটি-কৃতিত্ব কেন্দ্রের নয়, বরং তাঁদের বলে দাবি করে ফের সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যাচারে’র অভিযোগ তুলে পাল্টা মোদীর কৃতিত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি নেতৃত্ব। বিধানসভা ভোটের আগে সমাজমাধ্যমে ও রাস্তায় নেমে নতুন জিএসটি নিয়ে প্রচারও শুরু করেছে রাজ্য বিজেপি। রাজ্যও পাল্টা প্রচারে নামবে বলে জানিয়েছেন মমতা।
শহরের বিভিন্ন পুজো-মণ্ডপ উদ্বোধনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা দাবি করেছেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও কৃতিত্বই নেই। বিমার ক্ষেত্রে জিএসটি প্রত্যাহার চেয়ে আমি প্রথম চিঠি দিয়েছিলাম। কৃতিত্ব এক জন নিচ্ছেন। করেছি কিন্তু আমরা!” জিএসটি বাবদ রাজ্যের যে ক্ষতি, তা পূরণে এবং বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না বলেও ফের অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, নতুন হারে জিএসটি নিয়ে কেন্দ্রের পাল্টা বিজ্ঞাপন দিয়ে রাজ্য সরকারও প্রচার চালাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। মমতার আরও বক্তব্য, “আমাদের প্রাপ্য এক লক্ষ ৯২ হাজার কোটি টাকা তো আছেই। সেই সঙ্গে জিএসটি বাবদ রাজ্যের রাজস্ব ক্ষতি ২০ হাজার কোটি টাকা।’’ উৎসব-মরসুমে ডায়মন্ড হারবারে পুলিশের ‘গাইড ম্যাপে’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়ে বিজেপিকে বিঁধেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বিজেপির ‘দায়বদ্ধতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভিষেকের তোপ, “বিজেপি হারলে কর কমবে, জিতলে কর বাড়বে। লোকসভায় ২৪০ আসনে নেমেছে, তাই জিএসটি কমেছে! এখন ‘জিএসটি বাঁচাও উৎসবে’র কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী। এত দিন কি ‘জিএসটি লুট উৎসব’ চলছিল?”
পাল্টা সরব হয়েছে বিজেপিও। মুখ্যমন্ত্রীকে ‘হরিদাস পাল’ বলে কটাক্ষ করে নদিয়ার নবদ্বীপে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু দাবি করেছেন, “বাঙালির সব চেয়ে বড় উৎসবের মুখে জিএসটি অনেকটা কমে যাওয়ায় রাজ্যবাসী ভীষণ উপকৃত হবেন। বিধানসভা ভোটে প্রভাবও পড়বে।” আর মমতার দাবি প্রসঙ্গে শুভেন্দুর তোপ, “অন্য যে কোনও রাজ্যে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম ৮-১০ টাকা কম। তৃণমূল জমানায় বিদ্যুৎ বিল, যাবতীয় কর, জমির খাজনা, ট্রেড লাইসেন্স লাগামহীন ভাবে বেড়েছে। সেখানে কেন্দ্র জিএসটি কমাচ্ছে। এতে প্রবল ভয় পেয়েছে তৃণমূল। তাই মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যা বলে কৃতিত্ব দাবি করছেন।”
সূত্রের খবর, জিএসটি নিয়ে দেশ জুড়ে দলের সাংসদ ও বিধায়কদের তাঁদের নির্বাচনী ক্ষেত্রের বিভিন্ন বাজারে এ দিন থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রচার চালানোর নির্দেশ দিয়েছে বিজেপি। দলের সব স্তরের নেতা-কর্মীদের সমাজমাধ্যমের প্রোফাইল ছবিতে মোদীর মুখ দেওয়া একটি নির্দিষ্ট ছবি রাখতে বলা হয়েছে, যেখানে লেখা হয়েছে, ‘কমল জিএসটি, হল সাশ্রয়/ ধন্যবাদ মোদী সরকার।’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য এ দিন বাগুইআটিতে নতুন হারের জিএসটি নিয়ে প্রচারে নেমেছিলেন। তিনিও মমতাকে কটাক্ষ করে বলেছেন, “ভোটের জন্য যে যা খুশি দাবি করতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতিত্ব নিতে হলে উৎসবের মরসুমে পেট্রো-পণ্যের উপরে রাজ্যের করটা ছাড়ুন!”
তবে নতুন হারে জিএসটি-র প্রভাব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “আরবিআই-এর বুলেটিন বলছে, মানুষের সংসার চালাতে ধারের পরিমাণ দেড় গুণ বেড়েছে। এটাও আরও ঘোষণাগুলির মতো নয় তো যে, বিরাট দেখনদারি হল, কিন্তু কাজে কিছু হল না? প্রধানমন্ত্রীর ‘দীপাবলির উপহার’ আসলে জিনিসপত্রের দাম অনেকটা বাড়িয়ে দিয়ে তার পরে কিছুটা কমিয়ে দেওয়া।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)