চাঁপাডাঙায় বিক্ষোভকারী ছাত্রকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: দীপঙ্কর দে।
বদল হল না সেই ‘ট্র্যাডিশন’-এর।
কলেজের ছাত্রভোট ঘিরে অশান্তি রুখতে গত ক’বছরে কম চেষ্টা করেনি রাজ্য সরকার। কখনও ভোটে স্থগিতাদেশ জারি হয়েছে, কখনও ভো়ট অনলাইন করার দাবি উঠেছে, কখনও বা পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হতে বলা হয়েছে। তবু এ রাজ্যে ছাত্র-ভোটে হিংসার ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ল না এ বারেও।
ভোটের মনোনয়নপত্র তোলাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার উত্তাল হল রাজ্যের ছ’টি কলেজ। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর চাঁইপাট কলেজ, পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট কলেজ ও কাঁথি প্রভাতকুমার কলেজে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে টক্কর হল বিরোধী সংগঠনের। তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙা রবীন্দ্র মহাবিদ্যালয়, পাঁশকুড়া বনমালী কলেজ ও কেশপুর কলেজে আবার ‘লড়াই’ টিএমসিপি-র অন্দরেই! বোমাবাজি, বাঁশ-লাঠি নিয়ে মারামারি— বাদ গেল না কিছুই। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশকে লাঠি চালাতে হল, কোথাও ছুড়তে হল কাঁদানে গ্যাসের শেল। তারকেশ্বরে গোলমাল থামাতে গিয়ে জখম হন তিন সিভিক ভলান্টিয়ার।
এই আবহে ব্যতিক্রম বর্ধমান গ্রামীণ এবং বীরভূম। দু’টি এলাকাতেই ১৬টি করে কলেজে ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে টিএমসিপি! এসএফআইয়ের দাবি, রামপুরহাট ও সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজে মনোনয়ন তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু টিএমসিপি-র নেতৃত্বে বহিরাগতেরা জমায়েত করে সেটাও তুলতে দেয়নি। ফল জেনে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের আগাম হুঁশিয়ারি, ‘‘এটা পঞ্চায়েত ভোটের ট্রেলার। কোনও সন্ত্রাস হবে না। কেননা, সবাই এখন আমাদের লোক!’’ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও অনেকটা একই সুরে বলেন, ‘‘কলেজ ভোট নিয়ে মন্তব্য করব না। বিরোধীরা কোথায়?’’ শুনে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম বলেন, ‘‘বিরোধী-শূন্য করাটাই ওদের কাছে গণতন্ত্রের নতুন মডেল।’’
তৃণমূলেরই দুই গোষ্ঠীর গোলমালে তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙা কলেজ চত্বর এ দিন রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়তে থাকে। বাঁশ-লাঠি নিয়ে রাস্তায় আস্ফালন করতে দেখা যায় একদল ছাত্র এবং বহিরাগতদের। লাঠি চালিয়ে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে, বন্দুক উঁচিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি হাত-কামান এবং কিছু না-ফাটা বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। রাতে গ্রেফতার হয় চার জন।
তারকেশ্বরের বিধায়ক তথা পরিচালন সমিতির সভাপতি রচপাল সিংহের দাবি, গোলমাল হয়নি। তবে টিচার-ইনচার্জ সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, মনোনয়ন তুলতে আসা কিছু ছাত্র কলেজে অস্ত্রভাণ্ডার বানিয়েছিল। সূত্রের দাবি, গোলমাল পুরপ্রধান স্বপন সামন্ত গোষ্ঠীর সঙ্গে উপ-পুরপ্রধান উত্তম কুণ্ডুর গোষ্ঠীর। স্বপনবাবু মন্তব্য করতে চাননি। উত্তমবাবুর দাবি, ‘‘অকারণে আমার নাম জড়ানো হচ্ছে।’’ টিএমসিপি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে কেশপুরের কলেজ তেতে ওঠে। এক নেতা জখম হন। একই ছবি পাঁশকুড়া বনমালী কলেজে। তবে সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্তর দাবি, ‘‘সব ক্ষেত্রেই বহিরাগতরা কলেজে নকল পরিচয়পত্র নিয়ে ঢুকে পড়ায় টিএমসিপি-র কর্মীরা আটকান।’’
দাসপুরের চাঁইপাট কলেজে ক্ষমতায় ছিল এসএফআই। সেখানে ়নির্দিষ্ট সময়ের পরে এসএফআইকে কেন মনোনয়ন তুলতে দেওয়া হয়েছে, এই প্রশ্নে বিক্ষোভ দেখায় টিএমসিপি। রাস্তাও অবরোধ করে তারা। মনোনয়নপত্র তুলেও জমা দিতে পারেনি এসএফআই। টিচার-ইনচার্জ দেবাশিস সর্দার এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। কাঁথি প্রভাতকুমার কলেজে টিএমসিপি-র হামলায় তাদের ১৪ জন জখম বলে দাবি ডিএসও-র। কোলাঘাট কলেজে এসএফআই প্রার্থী ও সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ ওঠে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। সিপিএম বিধায়ক ইব্রাহিম আলিও আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। তৃণমূলের দাবি, ইব্রাহিম বহিরাগতদের নিয়ে ঢুকতে গিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy